Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Cancer Treatment

ক্যানসারের চিকিৎসা জেলায় জেলায়, তবু মরফিন নিতে ভরসা কলকাতা, নেপথ্যে কোন কারণ?

নেশার কাজে মরফিনের ব্যবহার রয়েছে বলে এতে সরকারি নিয়ন্ত্রণও রয়েছে। প্রশ্ন এখানেই, মরফিনের মতো জরুরি জিনিস রোগীদের থেকে দূরে রাখা কি যুক্তিসঙ্গত?

An image of Doctor

—প্রতীকী চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:২৯
Share: Save:

ক্যানসারের ক্রমবর্ধমান গবেষণার ফলে বহু ক্ষেত্রে রোগীদের আয়ু দীর্ঘ হচ্ছে। তবে এখনও তাঁদের একটি বড় অংশকে ক্যানসারের অন্তিম পর্যায়ে যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয়। তখন রোগ নিরাময়ের সুযোগ থাকে না, রোগীকে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই পর্বে যন্ত্রণা কমাতে মরফিনের ব্যবহার জরুরি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এর পাশাপাশি যন্ত্রণা বুঝে ক্যানসারের দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ের রোগীকেও মরফিন দেওয়া হয়। অথচ, বছরের পর বছর বাজারে অমিল জরুরি এই ওষুধটি। বর্তমানে সেই সমস্যা বাড়ায় রোগী-ভোগান্তিও বাড়ছে বলে পর্যবেক্ষণ চিকিৎসকদের। মরফিন অপ্রতুলতার একটি কারণ আইনি জটিলতা। অন্যটি, মুনাফা কম বলে এই ওষুধ তৈরি ও সরবরাহে অনীহা।

সরকারি পরিষেবা বিস্তৃত হয়ে এখন জেলার হাসপাতালেও চালু হয়েছে ক্যানসারের চিকিৎসা। অথচ, সেখানে চিকিৎসাধীন রোগীকে মরফিন জোগাড় করতে আসতে হচ্ছে কলকাতার কোনও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কারণ, জেলার ভাঁড়ার মরফিন-শূন্য! এ দিকে, শহরেও অপর্যাপ্ত এই ওষুধ।

মাদক প্রভাব এবং কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকলেও ক্যানসারের যন্ত্রণা নিরাময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মরফিনেই জোর দিয়েছে। তার পরেও কেন রাজ্য এই ওষুধ মজুতের নিয়ম শিথিল করছে না, প্রশ্ন চিকিৎসকদের। তাঁদের কথায়, ‘‘জেলার হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিৎসা হচ্ছে। টিউমার বোর্ড বসছে। অথচ মরফিন নেই!’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর বক্তব্য, ‘‘মাদক আইনে বিষয়টি আটকাচ্ছে। কী ভাবে জেলার হাসপাতালে মরফিন সরবরাহ করা যায়, সেই চিন্তাভাবনা চলছে।’’

নেশার কাজে মরফিনের ব্যবহার রয়েছে বলে এতে সরকারি নিয়ন্ত্রণও রয়েছে। প্রশ্ন এখানেই, মরফিনের মতো জরুরি জিনিস রোগীদের থেকে দূরে রাখা কি যুক্তিসঙ্গত? যদিও চিকিৎসকদের মতে, ‘‘মরফিনকে মাদক হিসেবে ব্যবহারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকলেও রোগীর জন্য এর জোগানে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ক্যানসারের অন্তিম পর্যায়ের রোগীর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি ও সম্মানের জীবন কাটানোর অধিকার রয়েছে। ফলে মরফিনের ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে।’’

কোথায় মেলে এই মরফিন? রাজ্যের কয়েকটি মাত্র মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালকে ‘রেজিস্টার্ড মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশন’-এর তকমা দেওয়ায় সেখানে মরফিন রাখতে পৃথক লাইসেন্স লাগে না। এসএসকেএমের রেডিয়োথেরাপির বিভাগীয় প্রধান, চিকিৎসক অলোক ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘জেলার রোগীদের প্রথম বার ওষুধ নিতে আসতে হয়। পিজির প্রেসক্রিপশনে মরফিন লিখে দিলে ১৫ দিনের ওষুধ দেওয়া হয়। তার পর থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে পরিজনেরা এলেই চলবে।’’ প্রেসক্রিপশনের ফোটোকপি ওই সব রোগীর কাছেও রাখতে হয় বলে জানাচ্ছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিয়োথেরাপির বিভাগীয় প্রধান, চিকিৎসক অসিতরঞ্জন দেব।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর মরফিন সরবরাহে কয়েক বার দরপত্র ডাকলেও কোনও প্রস্তুতকারী সংস্থা অংশ নেয়নি। ফলে বোঝা যাচ্ছে যে, রাজ্যে মরফিন প্রস্তুতকারী সংস্থা নেই। বরং পরে উত্তর ভারতের দু’টি সংস্থা দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে বরাত পায়। পাশাপাশি, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ডে ওই ওষুধ তৈরি হয়। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘এই ওষুধ পাঠানোর খরচের তুলনায় দাম অতি নগণ্য। ফলে বরাত পাওয়া সংস্থাগুলিরও ওষুধ সরবরাহে অনীহা রয়েছে।’’

অন্য দিকে, গুটিকতক ওষুধের দোকানের মরফিন বিক্রির লাইসেন্স থাকলেও তারা ‘ঝক্কি’ সামলে ওই ওষুধ রাখতে চাইছে না। ক্যানসারের ওষুধ সরবরাহকারী একটি সংস্থার তরফে কাজল গোমস বলেন, ‘‘প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ না দেওয়া, নির্দিষ্ট রেজিস্টারে সব তথ্য নথিভুক্ত করা, নির্দিষ্ট সময় অন্তর আবগারি দফতরকে হিসাব দিতে হয়। অথচ ওই ওষুধ বিক্রিতে লাভ সামান্য। তাই ঝামেলা নিতে অনীহা।’’

ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তারা জানাচ্ছেন, ‘ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স অ্যাক্ট ১৯৪০ এবং রুল ১৯৪৫’ অনুযায়ী, মরফিন রাখতে বেসরকারি হাসপাতাল বা দোকানের শিডিউল-এক্স লাইসেন্স প্রয়োজন। ওই লাইসেন্স পেতে পাইকারি বা খুচরো ড্রাগ লাইসেন্সের যে কোনও একটি থাকতেই হবে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মরফিনের মতোই বাজারে অমিল স্তন ক্যানসারের ট্যামক্সিফেন, ফুসফুসের ক্যানসারের ইটোপোসাইড, ব্রেন টিউমারের টেমোজ়োলামাইড ও অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত এন্ডোক্সান।

ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘খুব জরুরি অথচ সস্তার এই ওষুধগুলির দাম আরও কমেছে। ফলে প্রস্তুতকারী সংস্থারা সেগুলি বানাতে চাইছে না। মুনাফা দেখতে গিয়ে চরম ক্ষতি হচ্ছে রোগীদের।’’ স্তন ক্যানসারের শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানাচ্ছেন, ঋতুস্রাবের আগে যাঁদের স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে, তাদের কাছে ট্যামক্সিফেন জীবনদায়ী। তাঁর কথায়, ‘‘৫-৭ বছর এই ওষুধ খেতে হয়। মাঝপথে যদি সেটি থমকে যায়, তা হলে রোগটি ফেরার ঝুঁকি থেকেই যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer Drugs Cancer Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy