—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বাড়িটা তিন সপ্তাহের ১৪৪ ধারা কাটিয়ে উঠেছে গত সোমবারই। কখনও সেটিকে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, কখনও বোমার নিশানায় পড়তে হয়েছে। দিনের পর দিন বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন সে বাড়ির বাসিন্দারাও। কোনও কোনও দিন ঘেরাও হয়ে থাকতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা! এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই নতুন করে শিরোনামে উঠে আসা, ভাঙড়ের কাশীপুর থানার এই ভবনই এখন অন্যতম আলোচ্য বিষয় পুলিশের অন্দরে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় ভাঙড় কলকাতা পুলিশের মধ্যে এলেও ভাড়ায় নেওয়া এই থানা-ভবনের কী হবে, সেই জটিলতা কাটছে না। সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের কর্তারা ভাড়া বাড়িতে থানা চালানোর ঝক্কি নেওয়ার পক্ষপাতী নন। যদিও প্রকাশ্যে তাঁরা জানাচ্ছেন, আগে কাগজপত্রে সবটা হোক। তার পরে ওই বাড়ি নিয়ে ভাবা যাবে।
বারুইপুর পুলিশ জেলার অধীনস্থ ভাঙড়ে এখন দু’টি থানা— ভাঙড় এবং কাশীপুর। কলকাতা পুলিশে অন্তর্ভুক্তির জন্য ইতিমধ্যেই এই থানা দু’টি ভেঙে অন্তত ১০টি থানা তৈরির বিষয়ে আলোচনা চলছে। ভাঙড় থানার নিজস্ব ভবন থাকলেও কাশীপুর থানা চলছে ভাড়া নেওয়া একটি দোতলা বাড়ির একতলায়। সূত্রের খবর, ২০০৩ সালের ২৮ অগস্ট ভাঙড়ের উত্তর কাশীপুর এলাকার জন্য কাশীপুর থানার উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা পুলিশের কর্তারা। শম্ভুনাথ ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তির দোতলা বাড়ির একতলায় ১২৭৮.১৩ বর্গফুট জায়গা ভাড়ায় নেওয়া হয়। পরে উপরের তলায় ৩১০.৫৭ বর্গফুটের দু’কামরার খানিকটা জায়গাও ভাড়া নেয় জেলা পুলিশ। তার মধ্যেই রান্নার জায়গা এবং শৌচাগার আছে। আপাতত সেখানে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার থাকেন। দোতলার বাকি অংশে সপরিবার থাকেন শম্ভুনাথের মেয়ে মুনমুন। তাঁর স্বামী অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ই থানা-ভবনের জটিলতা সামনে আনেন।
অরূপের দাবি, বিল করে দেওয়ার পরে বারুইপুরের পুলিশ সুপারের অফিস থেকে টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। প্রথম ভাড়া পেতে দু’বছর সময় লেগেছিল। এখনও বেশ কয়েক মাসের টাকা বকেয়া। তাঁর আরও দাবি, গত কুড়ি বছরে একাধিক বার তাঁদের বাড়ি থেকে থানা সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গ্রামের এক জায়গায় আলাদা করে জমিও নিয়েছে পুলিশ। কিন্তু সেখানে থানা ভবন তৈরির কাজ হয়নি। এরই মধ্যে মাস চারেক আগে ভাড়ার চুক্তি নবীকরণের কথা হয় পুলিশের সঙ্গে। গত ১৬ মে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ১১,৫২০ টাকা ভাড়ায় চুক্তি নবীকরণ হয়। কিন্তু অরূপের অভিযোগ, কলকাতা পুলিশের অধীনে থানা চলে গেলে কী হবে, তা নিয়ে তাঁদের কিছু জানানোই হয়নি।
অরূপ বলেন, ‘‘শর্ত অনুযায়ী, কোনও পক্ষই পাঁচ বছরের মধ্যে চুক্তির খেলাপ করতে পারবে না। যে চুক্তি ভাঙবে, সে-ই ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। এখন কাশীপুর থানা কলকাতা পুলিশের অধীনে যাচ্ছে, এই কারণে চুক্তি ভাঙলে ক্ষতিপূরণ দেবে কে? কলকাতা পুলিশ না রাজ্য পুলিশ?’’ বারুইপুর পুলিশ জেলার এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, ‘‘যত দিন না কলকাতা পুলিশ নেয়, ভাড়া আমরাই মেটাব। তার পরে আর ওই বাড়িতে থানা থাকবে কি না, বলা কঠিন।’’ কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল পদমর্যাদার এক অফিসার বলছেন, ‘‘মৌজা এবং দাগ নম্বর ধরে থানা ভাগের কথা হচ্ছে। বিকল্প পাওয়া না গেলে ওই বাড়ির কথা ভাবা হবে।’’
এ দিকে, তাঁর বাড়ি থেকে থানা উঠে যাওয়ার প্রসঙ্গ এলেই মেজাজ হারাচ্ছেন বৃদ্ধ শম্ভুনাথ। তিনি বলেন, ‘‘এক কালে আমাদের এলাকায় ব্যাপক ডাকাতি হত। থানা হবে শুনে নিজেই ঘর দিতে এগিয়ে গিয়েছিলাম। বাড়ি তো নিরাপদ হয়েছেই, গ্রামেও নিরাপত্তা এসেছিল। তবে, ঝক্কিও কম পোহাতে হয়নি। পাওয়ার গ্রিড গন্ডগোলের সময়ে থানা আক্রান্ত হতে পারে ভেবে ভয়ে রাত কাটত। যদি ওরা বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, এই ভেবে ঘুম হত না। কিন্তু এই পঞ্চায়েত ভোটের এত মৃত্যু, সেই ভয়কেও ছাপিয়ে গিয়েছে। তাই তো গ্রাম শাসনে শহরের পুলিশ আসছে। আমাদের বাড়িটা ওদের পছন্দ হবে বলে মনে হয় না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy