বিপজ্জনক: বেহাল অবস্থা পূর্ত ভবনের সামনে। সল্টলেকে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
রোগের খবর নতুন নয়। বরং অসুখ সারবে কত দিনে, প্রশ্ন সেটাই। কবে ঠিক হবে রাস্তা?
সল্টলেক তথা বিধাননগরে ভাঙা রাস্তার যন্ত্রণা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, বাসিন্দাদের কেউ কেউ সল্টলেকের মধ্যেই স্বল্প দূরত্বের পথ যেতে গাড়ি বা বাইকের বদলে রিকশা বেছে নিচ্ছেন। অভিযোগ, ভেঙেচুরে পড়ে থাকা সল্টলেকের বিভিন্ন রাস্তার গর্তে পড়ে খারাপ হয়ে যাচ্ছে গাড়ির শকার। দুর্ঘটনায় পড়ছেন বাইকচালকেরা। রাস্তার বেহাল অবস্থা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়মিত প্রশ্নের মুখে পড়ছেন পুরপ্রতিনিধিরাও। এমনকি, বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও প্রতিদিন বিভিন্ন ভাঙা রাস্তার ছবি পাঠাচ্ছেন অনেকে। কবে সে সব রাস্তা ঠিক হবে, সেই প্রশ্নও সেখানে করা হচ্ছে পুরপ্রতিনিধিদের। সল্টলেক ও রাজারহাট— সর্বত্রই রাস্তার ছবিটা প্রায় এক।
সল্টলেকের এক পুরপ্রতিনিধির ক্ষোভ, ‘‘এ ভাবে কাজ হয় নাকি? সল্টলেকে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বসবাস করেন। রাস্তা নিয়ে নিয়মিত তাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। কত আর জবাব দেব?’’ যদিও পুজোর আগে রাস্তার হাল ফেরানোর দাবি করেছে বিধাননগর পুরসভা।
সল্টলেকের কত রাস্তা ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে? তার ঠিকঠাক হিসাব জানা না গেলেও পুরসভা সূত্রে দাবি, পুজোর আগে ২২ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতি করার কথা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পুজোর পরে বৃষ্টি থেমে গেলেই সমস্ত খারাপ হওয়া রাস্তা নতুন করে সারানো হবে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ব্রডওয়ে, ফার্স্ট অ্যাভিনিউ, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের দু’নম্বর গেটের সমান্তরাল ভাবে যাওয়া রাস্তাটি, লাবণি আইল্যান্ড থেকে বেঙ্গল কেমিক্যাল সংযোগকারী রাস্তার মতো একাধিক পথ দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। ব্লকের ভিতরে এবং পাড়ার অলিগলি-সহ সব ধরনের রাস্তা সারাইয়ের জন্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর টাকা বরাদ্দও করে দিয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বিধাননগরের ৪১টি ওয়ার্ডের রাস্তা সারাইয়ের জন্য।
অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘ দিন রাস্তার কাজ ঠিকমতো না হওয়ায় সল্টলেক এবং বিধাননগরের রাস্তার এমন বেহাল দশা। তাঁদের মতে, গত দু’-তিন বছর ধরেই রাস্তা ক্রমাগত খারাপ হয়েছে। অথচ সংস্কার হয়নি। তার মধ্যে বৃষ্টির জল জমে, পিচের আস্তরণ ভেঙে গিয়ে রাস্তার অবস্থা আরও বেহাল হয়েছে। ফলে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী রাস্তা সারাইয়ের খরচও বেড়ে গিয়েছে।
সল্টলেকের সংযুক্ত এলাকার এক পুরপ্রতিনিধির আক্ষেপ, ‘‘প্রত্যেক পুরপ্রতিনিধি রাস্তার কাজের জন্য ১৬ লক্ষ টাকা করে পেয়েছেন। কিন্তু যত রাস্তা এক-এক জনের এলাকায় ভেঙেছে, তা ১৬ লক্ষ টাকায় পুরোটা সারাই করা সম্ভব নয়। তাই এই টাকা দিয়ে যতটা কাজ হয়, করব।’’
সল্টলেকের এমনই কয়েকটি ভাঙা রাস্তার হাল দেখতে যাওয়া হয়েছিল এক দুপুরে। সেখানে বেহালা থেকে সল্টলেকের একটি সরকারি দফতরে চাকরি করতে আসা সুমিত কর্মকারের কথায়, ‘‘বাইক নিয়ে যাতায়াত করি। সব চেয়ে ভয় লাগে সন্ধ্যার পরে বৃষ্টি হলে। রাস্তার গর্তে জল জমে থাকে। খেয়াল না করলে বাইক নিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ার আশঙ্কা থাকে। যে কারণে খুব আস্তে আস্তে চালাতে হয়।’’
যদিও পুরসভার মেয়র পারিষদ (পূর্ত) তথা ডেপুটি মেয়র অনিতা মণ্ডলের দাবি, দুর্যোগ না কমলে রাস্তার কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তা সারাইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে এখন রাস্তার কাজ করতে গেলে টাকাটা পুরোই জলে দেওয়া হবে। আর পুরপ্রতিনিধিদের কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে। সকলের উপরেই চাপ রয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে কাজ করা হচ্ছে না, বিষয়টা কিন্তু আদৌ এমন নয়।’’ (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy