বিপর্যয়: বৃহস্পতিবার রাতে এই বাড়ি ভেঙে পড়েই মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের। বাগুইআটি নজরুল পার্ক এলাকায়। ছবি: সুমন বল্লভ।
বাদলায় ভেজা, ঝুলে পড়া বাড়ির ছাদে কাঠি গুঁজে ঠেকনা দিত বুড়ি। সুকুমার রায়ের ‘বুড়ীর বাড়ী’ ছড়ার এই বর্ণনাই কার্যত নির্মম ভাবে মিলে গিয়েছে বাগুইআটির জগৎপুরের নজরুল পার্কে বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নজরুল পার্কে প্রৌঢ়া আশাকর্মীর তেতলা বাড়ির কাঠামোয় লোহার রডের বদলে ব্যবহার করা হয়েছিল বাঁশ, কাঠ, সুপুরি গাছের বাকল। তার উপরেই সিমেন্ট আর সুরকি দিয়ে দেওয়া ছিল গাঁথনি। দুর্বল কাঠামোর সেই বাড়ি বৃহস্পতিবার রাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ায় মৃত্যু হয়েছে প্রৌঢ়ার ছোট ছেলের। ধ্রুবজ্যোতি মণ্ডল (১৭) নামে ওই কিশোর একতলার ঘরে খাটে শুয়ে ছিল। ধ্বংসস্তূপে সে চাপা পড়ে যায়। শুক্রবার ভোরে তাকে উদ্ধার করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ জানায়, খাটের শুয়ে থাকা অবস্থায় চাপা পড়ে গিয়েছিল ওই কিশোর। তেতলা ও দোতলার ছাদ তার উপরে ভেঙে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের ঘেরাটোপে এমন ভাবে সে চাপা পড়ে ছিল যে, ভিতরে অক্সিজেন পাঠানোর ব্যবস্থাও করা যায়নি। পরে খাট কেটে ধ্রুবজ্যোতির দেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতের দাদা কিশোর মণ্ডল বলেন, ‘‘বাড়ির নীচে চাপা পড়ার পরে ভাই ফোন করে বলেছিল, ‘দাদা আমাকে বাঁচাও। আমাকে বার করো।’ কিন্তু কিছুই করা গেল না। ভাই অকালে চলে গেল।’’ দুর্ঘটনার পরেই ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ চালু করতে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি ইন্দ্রনাথ বাগুই কয়েক জন মিস্ত্রিকে পাঠিয়েছিলেন। ওই মিস্ত্রিরা জানান, ভিতর থেকে তাঁরা ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুনতে পান। কিন্তু বাড়িটি এমন ভাবে ধসে পড়েছিল যে ভিতরে কেউ ঢুকতে পারেননি। পরে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। পরিবারটিকে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতে পারে বলে বিধাননগরের মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রে শুক্রবার জানা গিয়েছে।
বাগজোলা খালের ধার ঘেঁষে যে রাস্তাটি কেষ্টপুর থেকে নিউ টাউনের দিকে যাচ্ছে, সেই রাস্তার গায়েই ছিল তেতলা বাড়িটি। তৈরি করেছিলেন প্রতিমা মণ্ডল নামে ওই আশাকর্মীর স্বামী নির্মল। তিনি এক সময়ে স্থানীয় কৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। বর্তমানে জায়গাটি বিধাননগর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। বাঁশ, কাঠের উপরে নির্ভরশীল বাড়িটি বিপজ্জনক বলে জানতেন স্থানীয়দের অনেকেই। ইটের দেওয়ালের বাড়ির গা থেকে গাছও গজিয়ে গিয়েছিল।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই উৎকণ্ঠিত আত্মীয়েরা ওই এলাকায় চলে এসেছিলেন। তাঁরা জানান, বাড়িটির বয়স ১০ থেকে ১২ বছর। শুধুমাত্র নির্মাণ সামগ্রীতে গলদ থাকায় এক দশকের মধ্যে বাড়িটি ভেঙে পড়েছে বলে মানছেন ওই পরিবারের আত্মীয়েরা। তাঁরা জানান, টাকার অভাবে বাড়ি সারাই করতে পারছিলেন না প্রতিমা ও তাঁর মেজো ছেলে তথা ধ্রুবজ্যোতির দাদা কিশোর। তা সত্ত্বেও তাঁরা চেষ্টা করছিলেন বাড়িটি সারাতে। বৃহস্পতিবার রাতে কিশোর ও প্রতিমা একটি ভাড়া বাড়ি দেখতেও গিয়েছিলেন। তারই মধ্যে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার স্থানীয়দের অনেকেই ওই বাড়ির নির্মাণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা আরও প্রশ্ন তুলেছেন, কী ভাবে গার্ডেনরিচে বাড়ি ধসে মৃত্যুর ঘটনার পরেও বিধাননগর পুরসভার চোখ এড়িয়ে গেল এই বাড়িটি? কেন সেটিতে ‘বিপজ্জনক বাড়ি’র নোটিস ঝোলানো হয়নি?
স্থানীয় পুর প্রতিনিধি ইন্দ্রনাথ বাগুইয়ের দাবি, ‘‘বাড়িতে লোকজন বসবাস করছিলেন। সেখানে বিপজ্জনক নোটিস কী ভাবে ঝোলানো যাবে? দেওয়াল কী দিয়ে তৈরি, বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। বাড়ির হাল খতিয়ে দেখার কথা তো পুরসভার। আমি পুরপ্রতিনিধি— জল, আলো, রাস্তা দেখি।’’ কিন্তু তিনি কি বিষয়টি পুর কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছিলেন? ইন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘এ বার তো আনা হয়েছে। বাড়িটি ভেঙে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy