শীর্ষে: পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির মাথায় উঠেই বিশ্রাম। হেদুয়ার কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
মহানগরে পথকুকুরের প্রতিষেধক ও নির্বীজকরণের কাজ করে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অধীন ডগ স্কোয়াড। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আর্থিক সহায়তায় পথকুকুরের নির্বীজকরণ ও জলাতঙ্ক রোধে প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি চলে পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে। তবুও কেন শহরে কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে? পুরসভার অন্দরের খবর, ১৪৪টি ওয়ার্ড নিয়ে চলা কলকাতা পুরসভার ডগ স্কোয়াডে আছে মাত্র ন’টি গাড়ি এবং ২৫ জন কর্মী। তাই কি এমন বেহাল পরিস্থিতি?
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে স্টার থিয়েটারে প্রাণিসম্পদ দফতরের এক কোটি টাকা অর্থ সাহায্যে ১৪৪টি ওয়ার্ডের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালে ওই দফতর থেকেই এই কাজে পুরসভা পেয়েছিল ৭৮ লক্ষ টাকা। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পথকুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণে কেন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে? উদ্বেগ যে অমূলক নয়, তা কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক নেওয়ার পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে।
বিজেপি পুরপ্রতিনিধি মীনাদেবী পুরোহিত এই নিয়ে গত বছর তিন বার পুর অধিবেশনে সরব হয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পথকুকুরের নির্বীজকরণ, টিকাকরণ কর্মসূচির সাফল্যে পুরসভা ঢাক পেটালেও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে, বড়বাজারের বিভিন্ন
এলাকায় পথকুকুরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে গত বছর তিনটি পুর অধিবেশনে বলেও কাজ হয়নি।’’ প্রতিদিন তাঁর ওয়ার্ডের কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট, রাজা কাটরা, মহাত্মা গান্ধী রোড, দিগম্বর জৈন টেম্পল রোডে কুকুরের কামড়ের শিকার হচ্ছেন পথচারী ও বাসিন্দারা। এমনটাই অভিযোগ করছেন মীনাদেবী। বড়বাজার এলাকার আর এক বিজেপি পুরপ্রতিনিধি বিজয় ওঝারও একই অভিযোগ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচি কলকাতা পুরসভা শুরু করলেও আমার ওয়ার্ডে পথকুকুরের দাপটে বাসিন্দারা এত অতিষ্ঠ কেন?’’
এই কর্মসূচির সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শাসকদলেরই এক পুরপ্রতিনিধি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কাশীপুর, শ্যামবাজার, টালা এলাকায় পথকুকুরের দাপটে ত্রস্ত থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা।’’
তবে কি এই কর্মসূচির কোথাও গলদ থাকছে?
পুর স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, পথকুকুরদের নির্বীজকরণের বাইরেও অনেক কাজ তাঁদের করতে হচ্ছে। লোকবল কম। পুরসভার ডগ স্কোয়াডের অধীনে ন’টি গাড়ি এবং ২৫ জন কর্মী রয়েছেন। এত কম কর্মী দিয়ে কাজ চালানো অসম্ভব বলে মত তাঁদের। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ড থেকে অসুস্থ পথকুকুরকে সরাতে নিয়মিত ফোন আসে। পুরপ্রতিনিধি থেকে ভিআইপি— সকলেই দ্বারস্থ হন পুরসভার এই বিভাগে। এ দিকে ধাপা ও এন্টালিতে কুকুর রাখার তিনশোটি খাঁচা রয়েছে পুরসভার। ফলে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বহু ক্ষেত্রে অভিযোগ পেয়েও কুকুর ধরা যায় না। যে কারণে নির্বীজকরণের হারও কমেছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১২ সালে সমীক্ষা অনুযায়ী কলকাতায় পথকুকুরের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫২ হাজার। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ। ২০১১ সালে রোজ যেখানে প্রায় দশটি কুকুরের নির্বীজকরণ করা হত, এখনও সেই সংখ্যা একইরকম রয়ে গিয়েছে। পথকুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ লুকিয়ে এখানেই।
প্রশ্ন উঠছে, ডগ স্কোয়াডের কর্মীদের কুকুর ধরার পদ্ধতি নিয়েও। অভিযোগ, কুকুরের গলায় দড়ির প্যাঁচ দিয়ে ধরে তাকে গাড়িতে তুলে ধাপা বা এন্টালিতে স্কোয়াডের নির্দিষ্ট পরিসরে নিয়ে যাওয়া হয়। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। পথকুকুরদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার রাধিকা বসুর অভিযোগ, ‘‘ডগ স্কোয়াডের কর্মীদের কোনও প্রশিক্ষণ নেই। নেট বা জাল ছাড়াই কুকুর ধরতে আসেন তাঁরা। লাঠিতে দড়ি বেঁধে কুকুর ধরার পদ্ধতি ঠিক নয়। এর ফলে গাড়ি নিয়ে গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কুকুর ধরাই হয় না। আমরা জাল দিয়ে যত্ন করে কুকুর ধরি। পুরসভা চাইলে পাশে দাঁড়াব।’’
যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর দাবি, ‘‘পথকুকুরের নির্বীজকরণ ও প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ নিয়মিত হচ্ছে। কোনও খামতি নেই।’
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy