Advertisement
E-Paper

‘পরিবেশ রক্ষায় বইমেলা নিষিদ্ধ হয়, কিন্তু বাজির মেলায় অনুমতি মেলে’

কালীপুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই এ বার দেদার নিষিদ্ধ বাজি ফাটার অভিযোগ আসা শুরু হয়েছিল। পুজোর রাতে যা চরম আকার নেয়। অন্যান্য বছরেও কালীপুজোর পরদিন এমন বাজি ফাটার হিড়িক আরও বাড়ে বলে অভিযোগ।

— প্রতীকী চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩০
Share
Save

কালীপুজোর পরদিন, শুক্রবারেও শহরে দেখা গেল শব্দ-সন্ত্রাস। অথচ থানায় থানায় ধরপাকড়ের হিসাব দিয়ে কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা বলেছেন, ‘‘কড়া আইনে পদক্ষেপ করে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে নজির তৈরি হয়।’’ যদিও পরিবেশকর্মীদের বড় অংশই বলছেন, এ ক্ষেত্রেও কিছু ঘটে যাওয়ার পরেই পদক্ষেপ করার কথা বলা হচ্ছে। আগেই কেন কড়া হাতে সামলানো হয়নি?

কালীপুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই এ বার দেদার নিষিদ্ধ বাজি ফাটার অভিযোগ আসা শুরু হয়েছিল। পুজোর রাতে যা চরম আকার নেয়। অন্যান্য বছরেও কালীপুজোর পরদিন এমন বাজি ফাটার হিড়িক আরও বাড়ে বলে অভিযোগ। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শুক্রবার সকাল থেকে দেদার বাজি ফাটার অভিযোগ আসা শুরু হয় কসবা, গরফা, কালিকাপুর, মুকুন্দপুর, গল্ফ গ্রিন, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের মতো একাধিক জায়গা থেকে। বিকেলের পর থেকে এর সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাজি ফাটানোর অভিযোগ আসা শুরু হয় বেহালা, টালিগঞ্জ, বেলতলা, মানিকতলা, কাঁকুড়গাছি, লেক টাউন, শ্রীভূমি, বাঙুর, বেলেঘাটা থেকে। বেলেঘাটার চাউলপট্টি এলাকায় দেখা যায়, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মাঝরাস্তায় দেদার শব্দবাজি ফাটানো চলছে। কিছু দূরে কয়েক জন যুবককে আবার হাতে ধরে রকেট ফাটাতে দেখা গেল। প্রায় কোথাওই সবুজ বাজি ফাটানো নজরে পড়েনি। মানা হয়নি সুপ্রিম কোর্ট বা কলকাতা হাই কোর্টের বাজি সংক্রান্ত কোনও নিয়মও।

কাশীপুর এলাকায় আবার একের পর এক আবাসন থেকে মাত্রাতিরিক্ত আওয়াজের বাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে হয়েছে পুলিশকে। অভিযোগ, যে আবাসনেই পুলিশ ওঠার চেষ্টা করেছে, সেখান থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, দরজায় তালা লাগানো রয়েছে। চাবি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মানিকতলা মেন রোডের কাছে মাঝরাস্তায় শব্দবাজিতে আগুন ধরিয়ে গাড়ি লক্ষ্য করে ছুড়তেও দেখা গিয়েছে। পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। লালবাজার জানিয়েছে, কালীপুজোর দিন থেকে এ দিন সকাল সাতটা পর্যন্ত ৬০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে বাজি ফাটানোর দায়ে গ্রেফতার ২৬৫ জন।

যদিও পরিবেশকর্মী তথা সবুজ মঞ্চের আহ্বায়ক নব দত্তের দাবি, ‘‘আসলে প্রশাসন এ বার বাজির তাণ্ডব বন্ধ করতেই চায়নি। না হলে বাজি বানাতে দিয়ে পরে নিষিদ্ধ করার নিয়মের কী যুক্তি? কলকাতায় যতগুলি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং যত সংখ্যায় বেসরকারি হাসপাতাল আছে, তাতে কার্যত শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই সাইলেন্স জ়োন হওয়ার কথা। কিন্তু বাজি ফাটাতে দেওয়া মানে এই সাইলেন্স জ়োনের নিরাপত্তাও ভাঙা।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ময়দানের পরিবেশ রক্ষায় বইমেলা নিষিদ্ধ হয়, কিন্তু সেখানেই বাজির মেলায় অনুমতি মেলে। এমন ভাবে সমস্ত জিনিস করা হচ্ছে যে, সামনের বছর দেখা যাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও আর কিছু করছে না। এ বার তা-ও তারা নম্বর চালু করে মানুষের অভিযোগ শুনেছে, সামনের বার তা-ও হবে কিনা সন্দেহ।"

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘শহরের কিছু কিছু পকেটে বাজি ফাটছে ঠিকই, কিন্তু বড় অংশের মানুষই বাজি ফাটাচ্ছেন না। এক দিন নিশ্চয়ই এই আইন ভাঙার প্রবণতা বন্ধ হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Firecrackers Kali Puja 2024 Illegal crakers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}