E-Paper

শহরের পথে এত্তা জঞ্জাল, সাফাইয়ের হাল ফিরবে কি

শহরবাসীর ভোগান্তি কতটা গভীরে? মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার পরে খোঁজ করছে আনন্দবাজার।

উত্তর কলকাতায় ফুটপাতের উপরেই পড়ে আবর্জনা।

উত্তর কলকাতায় ফুটপাতের উপরেই পড়ে আবর্জনা। —নিজস্ব চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫১
Share
Save

বস্তিতে ঢোকার মুখে রাখা জঞ্জাল ফেলার দু’টি নীল ড্রাম উপচে পড়ছে। খাবারের খোঁজে তারই একটিতে কুকুর উঠে তা উল্টে ফেলেছে। ফলে, উপচে পড়া গৃহস্থালির আবর্জনা রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিন্তু সকাল থেকে বিকেল গড়ালেও তা পরিষ্কারের নামগন্ধ নেই। আঁচলে নাক-মুখ ঢেকে ওই রাস্তা পার হতে গিয়ে এক মহিলা বললেন, ‘‘আমাদের কদর শুধু ভোটের সময়ে! ভোট শেষ হয়ে গিয়েছে, এখন কি কারও খেয়াল থাকবে? বড় বাড়ি যাওয়ার রাস্তা হলে এতক্ষণে লোকজন চলে আসত। পিছনে তো সারি সারি টালির ঘর, কেন দেখবে আমাদের?’’

কাজের দিনে দুপুরে কাশীপুর-বেলগাছিয়ার ঘোষবাগান অঞ্চলের এই ছবি যে বিক্ষিপ্ত কোনও ঘটনা নয়, তার প্রমাণ মিলবে শহর ঘুরলেই। শহরের একাধিক বড় রাস্তার চেহারা দেখে নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই সংক্রান্ত পুরসভার দাবি মানা গেলেও গলিপথের চেহারা দেখে তা বিশ্বাস করা কঠিন। কোথাও রাস্তার দু’পাশে আবর্জনা উপচে পড়ছে, কোথাও গলিপথের পাশের ফাঁকা জমি ভরেছে গৃহস্থালির উচ্ছিষ্টে।

সম্প্রতি নবান্নে পুর পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম ধরে একাধিক পুরসভাকে পরিষেবা দেওয়া নিয়ে ভর্ৎসনা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কেন রাস্তা ঝাঁট দেওয়া হয় না? এ বার কি আমি ঝাঁট দেব?’’ কলকাতার পুরসভার সংযুক্ত এলাকার পুর পরিষেবা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা।

যদিও জঞ্জাল সাফাই নিয়ে অভিযোগ এই প্রথম নয়। প্রতি বছরই মশাবাহিত রোগের পাশাপাশি ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ে শহরে। যার জন্য শহরের যত্রতত্র জল জমার পাশাপাশি, জঞ্জাল সাফাই না হওয়ার দিকেও আঙুল তোলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। পুরসভার তরফে নিয়মিত শহর পরিষ্কারের দাবি করা হলেও বাসিন্দাদের বড় অংশের বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্য ভিন্ন। আর সেই অভিযোগ যে অমূলক নয়, তার দেখা মিলছে শহর ঘুরলেই।

উত্তর কলকাতার ঘোষবাগান, লিচুপাড়া, রাজাবাগান, উল্টোডাঙাই হোক কিংবা দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুর, বাঁশদ্রোণী, ব্রহ্মপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা— সর্বত্রই প্রায় এক ছবি। এমনকি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। আরও অভিযোগ, বড় আবাসনে নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হলেও বস্তি বা বাজার এলাকায় পুরসভার সাফাইকর্মীদের দেখা মেলে কদাচিৎ। একই অবস্থা গঙ্গার ঘাট-সহ তীরবর্তী এলাকাতেও।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে শহর এবং শহরতলির পুরসভাগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিল পূর্ত দফতর। সেখানেও জঞ্জাল সাফাই নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। পুরকর্তারা সেখানে পুর আধিকারিকদের রীতিমতো ধমক দিয়েছিলেন বলে খবর। তার পরে প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও জঞ্জাল সাফাইয়ের হাল ফেরেনি। ফলে, মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরেও শহরের হাল আদৌ ফিরবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। পুরকর্তারা যদিও পুরসভার গাফিলতির প্রশ্ন এড়িয়ে আঙুল তুলছেন নাগরিকদের একাংশের যত্রতত্র জঞ্জাল ফেলার ‘বদ অভ্যাস’-এর দিকে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবজর্না তুলে নিয়ে আসার পরেও নাগরিকদের একাংশের যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার অভ্যাস যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই আমরা বরো ধরে জায়গা চিহ্নিত করেছি।’’

এই অভিযোগ এবং পাল্টা দোষারোপের পালা এড়িয়ে আদৌ শহর সাফাইয়ের হাল ফিরবে কি? কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের জঞ্জাল সাফাই নিয়ে তো মুখ্যমন্ত্রীর কোনও অভিযোগ নেই। আমাদের উনি প্রশংসাই করেছেন। আমরা ১০০ শতাংশ জঞ্জাল সাফাই করি। তবে নাগরিকদের একাংশের যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে জরিমানায় জোর দিচ্ছি।’’

(চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

garbage dump garbage Kolkata

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।