Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Illegal Constructions

অবৈধ বাড়ি ভাঙার কাজে দেরি, পুলিশ থাকা সত্ত্বেও বাধা

বেআইনি বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে পুলিশি নিরাপত্তা পাওয়া নিয়ে অতীতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম লালবাজারের কর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ডিজি যুগ্ম নগরপালকে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও বুধবার কেন পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী পাঠানো হল না?

দক্ষিণ কলকাতার এন কে ঘোষাল রোডে এই বেআইনি পাঁচতলা বাড়ি ভাঙতে গিয়েই প্রথমে বাধা পান পুরকর্মীরা। পরে অবশ্য বাড়ির ছাদের একাংশ ভাঙতে শুরু করে পুরসভা।

দক্ষিণ কলকাতার এন কে ঘোষাল রোডে এই বেআইনি পাঁচতলা বাড়ি ভাঙতে গিয়েই প্রথমে বাধা পান পুরকর্মীরা। পরে অবশ্য বাড়ির ছাদের একাংশ ভাঙতে শুরু করে পুরসভা। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৪৫
Share: Save:

এলাকা ঘিরে আছেন কয়েকশো জন। গলির মুখে পরপর রাখা মোটরবাইক। একটি বাইকে বসে এক জন নজর রাখছেন, এলাকায় কারা আসছেন, তার উপরে। আর এক জন বাইকে বসেই ফোন করে কাউকে বলছেন, ‘‘আরও ছেলে পাঠা। পুলিশ, পুরসভাকে কাজ করতে দেওয়া যাবে না কিন্তু!’’ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফোন রাখতেই পাশের জন এগিয়ে এসে বলছেন, ‘‘এখন ছেড়ে দিলে কিন্তু ভোটের পরে কোনও বাড়ির কাজেই হাত দেওয়া যাবে না।’’

ঘটনাস্থল কসবা থানা এলাকায়। বুধবার দুপুরে কলকাতা পুরসভার ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের এন কে ঘোষাল রোডের একটি ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেল, এমনই দৃশ্য। পাঁচতলা বাড়ির পুরোটাই বেআইনি। মঙ্গলবার ওই বাড়ি ভাঙতে গিয়ে প্রবল বাধার মুখে পড়ে কলকাতা পুরসভা ও পুলিশ। দিনভর দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসতে হয় তাদের। বুধবারও পুলিশের সঙ্গে টানা তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইলেন পুরসভার লোকজন। দুপুরের পরে অবশ্য কোনও মতে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়। তার আগে এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, যে বাড়ি ঘিরে এত কাণ্ড, সেখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে পুলিশকর্মীরা। প্রশ্ন করলে তাঁরা বলছেন, ‘‘সরাসরি পুলিশের ব্যাপার তো নয়। পুরসভা বাড়ি ভাঙার নোটিস দিয়েছে। এলাকার লোকজন ভাঙতে দিচ্ছেন না। আমরা কী করতে পারি!’’ অথচ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরসভার ডিজি (বিল্ডিং) উজ্জ্বল সরকার যুগ্ম নগরপাল (সদর) মিরাজ খালিদকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, বুধবার যেন ওই বাড়ি ভাঙতে লালবাজারের স্পেশ্যাল স্কোয়াড পাঠানো হয়। যদিও এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সব মিলিয়ে জনা ১৫ পুলিশকর্মী এসেছেন। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ডিজি-র চিঠি অনুযায়ী, বুধবার পুলিশের তরফে র‌্যাফ নামানোর কথা ছিল। কিন্তু পাঠানো হয়নি।’’

বেআইনি বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে পুলিশি নিরাপত্তা পাওয়া নিয়ে অতীতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম লালবাজারের কর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, মঙ্গলবার ডিজি (বিল্ডিং) যুগ্ম নগরপালকে (সদর) চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও বুধবার কেন পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী পাঠানো হল না? বিল্ডিং বিভাগের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘বুধবার পুলিশ কার্যত পুতুলের মতো আচরণ করেছে। পুলিশ কঠোর মনোভাব নিলে আমরা আগেই বাড়ি ভাঙার কাজ করতে পারতাম।’’ এ নিয়ে যুগ্ম নগরপালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’’

এ দিন ওই বেআইনি বাড়িতে সংবাদমাধ্যম ঢুকতেই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। ক্যামেরা দেখেই বাইকবাহিনী রীতিমতো তাড়া করতে শুরু করে। ওই বাড়ির সামনে পৌঁছে দেখা যায়, গ্রিলের গেট ও দরজা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে মহিলাদের দল। পুরসভার লোকজন তো বটেই, কেউ সেই বাড়ির কাছে গেলেই ‘হিসাব বুঝে নেওয়া হবে’ বলে চিৎকার করতে থাকেন তাঁরা। সঙ্গে গালিগালাজ। পুর বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের অভিযোগ, বাড়ি ভাঙা আটকাতে স্থানীয় লোকজন ও পাশের বস্তির বাসিন্দাদের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ওই বাড়ি আমরা ভাঙবই।’’ এ দিন দুপুর ২টোর পরে বিল্ডিং বিভাগের কর্মীরা ওই বাড়ির পাঁচতলার ছাদের একাংশ ভাঙার কাজ শুরু করেন।

প্রশ্ন উঠেছে, পাঁচতলা বেআইনি বাড়ি তৈরি হওয়ার পরে কেন টনক নড়ল পুরসভার? কেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারেরা বেআইনি বাড়ি তৈরির বিষয়ে শুরুতেই খবর পেলেন না? বেআইনি বাড়ির নির্মাণকাজের শুরুতেই পুর কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও এখনও কি উদ্যোগে ঘাটতি রয়ে গিয়েছে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান পুরসভার ডিজি (বিল্ডিং)। লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘কেন ওখানে কাজ করতে এত সমস্যা হয়েছে, স্থানীয় থানার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। যে কোনও রকম গাফিলতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy