—প্রতীকী চিত্র।
উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের পরীক্ষা কেন্দ্রে এখন স্বচ্ছ ফাইল এবং বোর্ড নিয়ে ঢোকার অনুমতি আছে। কিন্তু এই দু’টি জিনিস নিয়েও ছাত্রছাত্রীরা আগামী বছর পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে কি না, এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে সেই প্রশ্ন উঠে গেল।
এ বার উত্তর কলকাতার একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে স্বচ্ছ বোর্ডে উত্তরপত্র রেখে লিখছিল উচ্চ মাধ্যমিকের এক পরীক্ষার্থী। উত্তরপত্রের একটি সাদা পাতা রাখা ছিল স্বচ্ছ বোর্ডের উপর। বাকি খাতা ভাঁজ করে লিখছিল সে। কিন্তু বার বার ওই স্বচ্ছ বোর্ডের উপর রাখা
সাদা পাতার দিকে তাকানোয় নজরদার শিক্ষকের সন্দেহ হয়। সাদা খাতায় কেন ওই পরীক্ষার্থী বার বার তাকাচ্ছে, তা দেখতে সেখানে যেতেই ওই শিক্ষক দেখেন, ওই খাতার নীচে স্বচ্ছ বোর্ডে ছোট ছোট করে লেখা। সঙ্গে সঙ্গে সেই বোর্ডটি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে কেড়ে নেন তিনি। কিন্তু বোর্ড হাত নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে তিনি দেখেন, সেখানে কিছুই লেখা নেই!
এ কি কোনও জাদু? একটু আগেই তো ওই শিক্ষক দেখেছেন, স্বচ্ছ বোর্ডে ছোট ছোট করে লেখা রয়েছে। তা হলে সেই লেখা কী ভাবে অদৃশ্য হতে পারে? ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘সেই স্বচ্ছ বোর্ডটি আলোর দিকে ধরতেই ফের দেখতে পেলাম, ছোট ছোট অক্ষরে লেখা রয়েছে সেখানে। কিন্তু সেই লেখা পড়াই যাচ্ছে না। সেই বোর্ডকে যে মুহূর্তে একটা সাদা পাতার উপরে রাখলাম, অক্ষরগুলি স্পষ্ট হয়ে গেল। ইতিহাসের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট পড়তে পারলাম।’’
ওই শিক্ষক জানাচ্ছেন, রঙিন বোর্ড পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা যাবে না, এটা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নির্দেশিকায় আছে। কিন্তু স্বচ্ছ বোর্ড এবং ফাইল আনার উপরে কোনও
নিষেধাজ্ঞা ছিল না। কিন্তু এই ঘটনার পরে আর স্বচ্ছ বোর্ড এবং ফাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা যাবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠে আসছে।
কলকাতারই অন্য একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের কয়েক জন শিক্ষক জানাচ্ছেন, স্বচ্ছ ফাইলের ভিতরে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এবং অ্যাডমিট কার্ডের মাঝখান থেকে নকল করার কাগজ বেরিয়েছে। ছোট স্বচ্ছ ফাইলে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ও অ্যাডমিট কার্ড আনছে পরীক্ষার্থীরা। উপর থেকে দেখলে দেখা যাচ্ছে, স্বচ্ছ ফাইলে শুধু ওই দু’টি নথি রয়েছে। কিন্তু ওই দুই নথির মাঝখানে যে রাখা আছে নকল করার ছোট ছোট কাগজ, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
সিবিএসই এবং সিআইএসসিই বোর্ডের পরীক্ষায় রঙিন বোর্ড তো বারণই, এমনকি গত কয়েক বছর ধরে স্বচ্ছ বোর্ড নিয়ে আসাও নিষিদ্ধ হয়েছে। সিবিএসই বোর্ডের অধীন একটি স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘স্বচ্ছ বোর্ড নিয়ে কিছু অভিযোগ ওঠায় এখন সেটি নিয়ে আসা নিষিদ্ধ। পড়ুয়ারা বেঞ্চেই খাতা রেখে লেখে।’’
এ বছর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে মোবাইল ফোন নিয়ে ধরা পড়েছে ৭৫ জন পরীক্ষার্থী। তাদের সকলের সব পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, নকল করার কাগজ নিয়েও কিন্তু কম সংখ্যক পরীক্ষার্থী ধরা পড়েনি। যারা তেমন কাগজ-সহ ধরা পড়েছে, তাদের বেশির ভাগকেই সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্বচ্ছ বোর্ড এবং ফাইল নিয়ে এ বছর অভিযোগ শুনেছি। আগামী বছরের বোর্ডের পরীক্ষায় যাতে কোনও অসাধু উপায় পরীক্ষার্থীরা অবলম্বন করতে না পারে, তার জন্য বেশ কিছু অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সব নিয়ে আমরা শীঘ্রই বৈঠক করব। এই নিয়ে পরীক্ষক, প্রধান পরীক্ষক এবং পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত অনেকের মতামত নিয়ে অতিরিক্ত কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা স্থির করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy