উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সিমেস্টারের পাঠ্যবই রিভিউ করতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে অনেক দিন আগেই দিয়ে দিয়েছেন প্রকাশকেরা। অভিযোগ, সেই বইয়ের অধিকাংশই পড়ে রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অফিসে। কারণ, বইয়ের রিভিউ যাঁরা করবেন, তাঁদের অনেকেই ব্যস্ত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নজরদারির কাজে। ফলে পরীক্ষা শেষ হলে তবেই রিভিউয়ের কাজ শুরু হবে। যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে, তৃতীয় সিমেস্টারের বই পড়ুয়ারা আদৌ সময়ে পাবে তো? যদিও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘পড়ুয়াদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সময় মতো তৃতীয় সিমেস্টারের সব পাঠ্যবই বাজারে চলে আসবে। বেশ কিছু বইয়ের টেক্সট বুক নম্বর ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে।’’
২০২৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের সিমেস্টার পদ্ধতিতে পড়াশোনা। সিমেস্টার পদ্ধতি আসার পরে পাঠ্যক্রমেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী তৃতীয় সিমেস্টার হবে এমসিকিউ-এর উপরে। এর জন্য প্রয়োজন নতুন পাঠ্যবই। অভিযোগ, সেই বই এখনও পর্যন্ত বাজারে এসেছে হাতে গোনা। তৃতীয় সিমেস্টারের বই প্রকাশকদের একাংশের দাবি, তাঁরা বই জমা দিয়েছেন জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে। উচ্চ মাধ্যমিক শুরুর আগে তো অনেক সময় ছিল।
সংসদ জানাচ্ছে, কোনও পাঠ্যবই যখন কোনও বেসরকারি প্রকাশকের থেকে নেওয়া হয়, তখন তা একাধিক বার রিভিউ করতে হয়। এক জন প্রকাশক প্রথমে কোনও পাঠ্যবই জমা দেওয়ার পরে সেই বই যায় এক জন রিভিউয়ারের কাছে। বই পড়ে কোনও সংশোধন করার থাকলে তার উল্লেখ করেন তিনি। সংশোধন করে প্রকাশক ফের সংসদে জমা দেন। সেই বই আবার রিভিউয়ারের কাছে যায়। প্রয়োজন হলে আবার সংশোধন করার কথা বলা হয় প্রকাশককে। ফের সেই সংশোধন হয়ে গেলে প্রকাশককে বই সংসদে জমা দিতে হয়। রিভিউয়ার কমিটি সেই বই দেখে সন্তুষ্ট হলে টেক্সট বুক নম্বর (টিবি নম্বর) দিয়ে বইটিকে প্রকাশ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
শিক্ষা সংসদের এক কর্তা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। নিয়োগ নেই অথচ প্রচুর শিক্ষক অবসর নিচ্ছেন। এ দিকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষা নেওয়া, পাঠ্যক্রম তৈরি— প্রতি স্তরেই কাজ বেড়েছে। এত কাজ একসঙ্গে করার শিক্ষক কোথায়? যাঁরা এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নজরদারির কাজ করছেন, তাঁদের ওই ডিউটি থেকে সরিয়ে বইয়ের রিভিউ করানো সম্ভব নয়।
প্রশ্ন উঠেছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষের পরে বইয়ের রিভিউয়ের কাজ শুরু হলে তৃতীয় সিমেস্টারের জন্যে সময় মতো বই পড়ুয়ারা পাবে তো? কারণ, উচ্চ মাধ্যমিকের পাশাপাশি দ্বিতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা হচ্ছে। দু’টি পরীক্ষাই শেষ হবে প্রায় একসঙ্গে। কয়েক জন অভিভাবকের প্রশ্ন, দ্বিতীয় সিমেস্টার শেষ হলেই তৃতীয় সিমেস্টার শুরু হবে। সেই সিমেস্টারের বই সময় মতো পাবে কি তাঁদের ছেলেমেয়েরা?
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)