Advertisement
১৪ জানুয়ারি ২০২৫

জলেই কি যাবে প্রকল্পের টাকা

প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী, যে ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে টালি নালা গিয়েছে, সেখানে ৬৭টি পথ দিয়ে নিকাশি জল গিয়ে পড়ে ওই নালায়। সেই নিকাশি জলকেই পরিশোধন করে টালি নালায় ফেলার ব্যবস্থা হচ্ছে।

বাধা: জঞ্জাল জমে এমনই হাল টালি নালার। ফাইল চিত্র

বাধা: জঞ্জাল জমে এমনই হাল টালি নালার। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০১:৫৪
Share: Save:

জাতীয় গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানে কলকাতা পুরসভাকে সাড়ে ৩৩৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার প্রস্তাবে নীতিগত সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। উদ্দেশ্য, টালি নালার দূষণ বন্ধ করা। বুধবার কেন্দ্রের থেকে এ ব্যাপারে বার্তা এসেছে পুর ভবনে। ওই টাকায় বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে টালি নালায় দূষিত জল ফেলা বন্ধ করা হবে।

প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী, যে ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে টালি নালা গিয়েছে, সেখানে ৬৭টি পথ দিয়ে নিকাশি জল গিয়ে পড়ে ওই নালায়। সেই নিকাশি জলকেই পরিশোধন করে টালি নালায় ফেলার ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু এত খরচ করে প্রকল্প তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত দূষণ বন্ধ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদেরা।

তাঁরা বলছেন, টালি নালা দিয়ে গঙ্গার জোয়ারের জল ঢুকলেও তা বয়ে যাওয়ার জায়গা নেই। গড়িয়ার পরেই নালা বুজে গিয়েছে। তাই জোয়ারের জল ঢুকলেও তা ফের ফিরে আসে গঙ্গায়। তা ছাড়া, মহাবীরতলার পরে মেট্রোর কাজের জন্য টালি নালার এমনই অবস্থা যে জোয়ারের জল বাধা ঠেলে দক্ষিণে বয়ে যেতে পারে না। তাতেই একটা বদ্ধ জলাশয়ের মতো অবস্থা এই নালার। জোয়ার-ভাটা না খেললে দূষণ কোনও ভাবেই বন্ধ হবে না বলে মত পরিবেশবিদদের।

রাজ্যের এক নদী বিশেষজ্ঞের মতে, টালি নালায় এক সময়ে জোয়ার-ভাটা খেলত। কিন্তু মেট্রোর স্তম্ভ বসিয়ে দেওয়া, জমি দখল করে বেআইনি নির্মাণ করে সেই স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশবিদেরা বলছেন, টালি নালাকে বিদ্যাধরী বা অন্য
নদীর সঙ্গে যোগ করা না গেলে এর পুরো সংস্কার কখনওই সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে টালি নালার স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনা কার্যত অসম্ভব। তবে পলি তুলে ফেললে কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে নদী বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন।

নিকাশি শোধন কেন্দ্র বসিয়ে বর্জ্যের দূষণ কমানোর কথা বলা হলেও লাভ কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দিহান ওই নদী বিশেষজ্ঞ। তাঁর কথায়, ‘‘টালি নালায় নিকাশির জল ফেলা একেবারেই উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে আদিগঙ্গার দু’পা়ড়ে মাটির তলায় বড় পাইপ বসিয়ে তার ভিতরে নালার জল ফেলা উচিত। তার পরে সেই পাইপ দূরে কোনও নিকাশি শোধন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া দরকার।’’

শুধু নিকাশির জলই নয়। সেচ দফতরের এক অফিসারের মন্তব্য, টালি নালা কলকাতা পুরসভার যে ৩৩টি ওয়ার্ড ছুঁয়ে গিয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ যাবতীয় জঞ্জালও ফেলেন টালি নালায়। কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলরেরা বাসিন্দাদের এ ব্যাপারে সচেতন করছেন, এমন উদ্যোগ কখনও দেখা যায়নি।

যে ভাবে বিপত্তারিণী পুজোর সামগ্রী বিনা বাধায় গত মঙ্গলবার টালি নালায় ফেলা হয়েছে, তাতে পরিবেশবিদেরা উদ্বিগ্ন। ওই নালায় জলের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে সেখানে যে শুধু ময়লা জমছে তাই নয়, বর্ষার জল উপচে ভাসাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। টালি নালায় জঞ্জাল ফেলা পুরো বন্ধ করতে ফের জাতীয় পরিবেশ আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন পরিবেশবিদেরা।

সম্প্রতি টালি নালার সংস্কারে একাধিক নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পরিবেশবিদেরা নৌকায় টালি নালার বিভিন্ন অংশ ঘুরেও দেখেছেন। একাধিক বার নালা থেকে জঞ্জাল ও পলি তুলে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সচেতনতার কাজ একেবারেই হয়নি। পরিবেশবিদদের অভিযোগ, অতীতে যে ক’বার টালি নালার সংস্কারের কথা ভাবা হয়েছে, জোর দেওয়া হয়েছে মূলত দু’টি বিষয়ে। পলি তুলে, মাটি কেটে নালারগভীরতা বাড়ানো এবং নিকাশির জল যাতে সরাসরি নালায় না পড়ে, তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু কোনওটিই এখনও পর্যন্ত সফল হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Ganga Action Plan project টালি নালা KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy