—ফাইল চিত্র
সিঁথি থানায় পুলিশি হেফাজতে মৃত রাজকুমার সাউয়ের দেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট বলছে, তাঁর বাঁ কনুই এবং বাঁ কানের উপরে খুলিতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। সেগুলি ভোঁতা কোনও বস্তুর আঘাতে হয়েছে। মৃত্যুর পিছনে হৃদ্যন্ত্র বিকল হওয়াকেই ‘প্রত্যক্ষ কারণ’ (ইমিডিয়েট কজ়) হিসেবে চিহ্নিত করেছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকের একটি দল। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, যে কোনও মৃত্যুই তো শেষমেশ হৃদ্যন্ত্র বিকল হওয়ার জেরে হয়। তা হলে রাজকুমারের শরীরের আঘাত তাঁর মৃত্যুর ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? রিপোর্টে অবশ্য বলা হয়েছে, এই ধরনের আঘাতে সাধারণত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে না।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজকুমারের হৃদ্যন্ত্রের অবস্থা তত ভাল ছিল না। দুটো আঘাতের চিহ্ন ছিল। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কারও উপরে শারীরিক অত্যাচার করা হয় বা মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয় এবং সেই ব্যক্তির হৃদ্যন্ত্রের অবস্থা ভাল না হয়, তা হলে হৃদ্রোগ ত্বরান্বিত হয়।
বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে জমা পড়া ওই রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে যে, ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে হওয়া ‘ভিসেরা’ পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ বিশদে ব্যাখ্যা করা যাবে। ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসকেরা রিপোর্টে হৃদ্যন্ত্র বিকল হওয়ার পিছনে প্রাথমিক ভাবে হৃদ্রোগকেই দায়ী করেছেন।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, লালবাজারের হোমিসাইড শাখা এ দিন আদালতে অ্যাডভোকেট জেনারেলের অফিসে ওই রিপোর্ট জমা দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও পাঠিয়েছে। তাতে ময়না-তদন্তের ভিডিয়ো, থানার বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও পাঠানো হয়েছে।
এ দিন রাজকুমারের ভাই রাকেশ সাউ বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের রিপোর্টে মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে বলে জানানো হয়েছে। ওই আঘাত থেকেই দাদার মৃত্যু হয়েছে, হৃদ্রোগে নয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমার সামনে দাদাকে মারধর করা হয়েছিল। দাদা চেয়ার থেকে পড়ে যায়, বুকেও লাথি মারা হয়। দাদার মৃত্যু মারধরের জেরেই হয়েছে।’’ হাইকোর্টে রাজকুমারের পরিবারের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘যে কোনও ঘটনাতেই হৃদ্যন্ত্র বিকল হতে পারে। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে মারধরের ফলে আঘাতের উল্লেখ রয়েছে। তার ফলেই যে হৃদ্রোগ হয়নি, তার প্রমাণ কী?’’ বিষয়টি ‘আদালতের বিচারাধীন’ বলে লালবাজারের কর্তারা মন্তব্য করতে চাননি।
একটি চুরির ঘটনার তদন্তে ১০ ফেব্রুয়ারি পাইকপাড়ার বাড়ি থেকে রাজকুমারকে সিঁথি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের দাবি, চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজন আসুরা বিবি জানিয়েছিলেন, চোরাই জিনিসপত্র তিনি রাজকুমারের দোকানে বিক্রি করেছিলেন। জেরার সময়ে রাজকুমার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আর জি করে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
রাজকুমারের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশি অত্যাচারেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি ছিল, আসুরাও তাঁদের মারধরের কথা জানিয়েছিলেন। পরে আসুরা বয়ান বদল করেন। রাজকুমারকে যিনি জেরা করেন, সেই সাব-ইনস্পেক্টর সৌমেন্দ্রনাথ দাসকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বাকি এক এসআই অরিন্দম দাস ও এক সার্জেন্ট চিন্ময় মহান্তকে ‘ক্লোজ’ (সাময়িক ভাবে কাজ থেকে অব্যাহতি) করা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। তদন্ত করছে হোমিসাইড শাখা।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, ১১ ফেব্রুয়ারি ময়না-তদন্ত হয়। চিকিৎসকেরা লিখেছেন, ময়না-তদন্তের ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছে। যে দু’টি আঘাতের চিহ্ন মিলেছে, তারও সময় ওই ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা আগের।
রাজকুমারের মৃত্যু নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়। তাতে প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করন নায়ার রাধাকৃষ্ণন পুলিশের কাছে জানতে চান, এই ঘটনায় কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে? এ দিন ময়না-তদন্তের রিপোর্টের পাশাপাশি বিশদ তদন্ত রিপোর্টও জমা পড়েছে। আরও বলা হয়েছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে সুরতহাল করানো হয়েছে, আর জি করের প্যাথলজি বিভাগ হিস্টো-প্যাথলজি পরীক্ষা করছে এবং শিয়ালদহ আদালতের বিচারক বলরাম হাজরা বিচারবিভাগীয় তদন্ত করছেন। রাজকুমারের পরিবারের একাধিক সদস্য, আসুরা বিবি, ঘটনার সময়ে পুলিশি হেফাজতে থাকা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক অভিযুক্ত-সহ বিভিন্ন সাক্ষীর বয়ান ও থানা সংক্রান্ত নথিও জমা দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে সিসিটিভি ফুটেজের ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়নি। তা অন্যত্র পরীক্ষা করানোর কাজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy