E-Paper

ধাপার ভাগাড়ে যাওয়া নিষিদ্ধ, তা হলে কী করে গেলেন ওঁরা? বাজ পড়ে দু'জনের প্রাণ যেতেই প্রশ্ন

মাঠপুকুর মোড় থেকে ধাপার ভাগাড় পর্যন্ত নিরাপত্তার বালাই নেই। পুলিশ তো দূর, পুরসভার কর্মীদেরও দেখা নেই! এমনকি, স্থানীয় মানুষ পুরসভার আবর্জনার গাড়িতে চড়েই পৌঁছে যান পাহাড়ে।

Dhapa Dumping Ground

অবাধ: বাজ পড়ে দু’জনের মৃত্যুর পরের দিনও আবর্জনা থেকে জিনিস সংগ্রহের কাজ চলছে ধাপায়। শনিবার।  ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ০৯:৩৪
Share
Save

কাদাগোলা জল নেমে আসছে। দুর্গন্ধে টেকা দায়। অনেক নীচ দিয়ে উড়ছে চিল-শকুনের দল! এর মধ্যেই কাদায় এঁটে যাওয়া চাকা ঠেলে আবর্জনার পাহাড়ে উঠছে ময়লা-বোঝাই সব লরি। সেগুলিরই কোনওটিতে প্লাস্টিক মাথায় দিয়ে বসে জনা দশেক মহিলা-পুরুষ, কোনওটিতে ঝুলে ঝুলে যাচ্ছেন তরুণ-তরুণী। সকলেরই গন্তব্য, ধাপার আবর্জনার পাহাড়!

শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখানেই কাজ করতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে পালানি মণ্ডল (২৪) এবং কাজলা নস্কর (৫৮) নামে দুই মহিলার। সন্ন্যাসী মণ্ডল নামে বছর ষাটেকের আর এক জন শনিবারও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সন্ন্যাসীর ছেলে প্রদীপ মণ্ডল এ দিন বলেন, ‘‘বজ্রাঘাতের পর থেকে বাবা কানে ভাল শুনতে পাচ্ছেন না। বার বার ওখানে যেতে বারণ করি। বাবা যে বেঁচে গিয়েছেন, এটাই বড় কথা! ওখানে মাথা গোঁজারও তো জায়গা নেই!’’

এক পরিবেশ বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘ভাগাড়ের বিপুল আবর্জনার মধ্যে মিথেন-সহ বিভিন্ন গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়। যার উপস্থিতিতে আগুনও ধরে যায় সেখানে। এমন পরিবেশে বজ্রপাত হলে তার ভয়াবহতা ও ক্ষতির আশঙ্কা অন্য জায়গা থেকে স্বাভাবিক ভাবেই বেশি হবে।’’ অভিযোগ উঠেছে, তবুও সচেতন হননি কলকাতা পুরসভা কর্তৃপক্ষ। যে কারণে ওই রকম ঝুঁকিপ্রবণ স্থানে অনায়াসে নিত্যদিন যাতায়াত করেন পালানিরা।

অথচ, খাতায়-কলমে কলকাতা পুরসভার ধাপার ভাগাড়ে বিনা অনুমতিতে কারও প্রবেশাধিকার নেই! সেখানে পালানি, কাজলা, সন্ন্যাসীরা গেলেন কী ভাবে? প্রসঙ্গত, এই ধাপাই করোনা রোগীদের মৃতদেহ সৎকার ঘিরে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল। খোঁজ করে জানা গেল, মাঠপুকুর মোড় থেকে ধাপার ভাগাড় পর্যন্ত নিরাপত্তার বালাই নেই। পুলিশ তো দূর, পুরসভার কর্মীদেরও দেখা নেই! এমনকি, স্থানীয় মানুষ পুরসভার আবর্জনার গাড়িতে চড়েই পৌঁছে যান পাহাড়ে। দীর্ঘ বছর ধরে ওই চত্বরে খোলাখুলি চলে আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক বাছাইয়ের ব্যবসা। প্লাস্টিক এবং কেব্‌ল এখানে বিনা বাধায় পোড়ানো হয়। কুড়িয়ে আনা সামগ্রী ওই চত্বরেই বিক্রি হয় ১০-১৮ টাকা কেজি দরে। দৈনিক ২০০-২৫০ টাকা আয় করতেই জীবন বাজি রাখেন ওঁরা।

পালানির সঙ্গেই শুক্রবার কাজে যাওয়া বিকাশ মণ্ডল নামে এক যুবক নিয়ে গেলেন সেখানে। দেখা গেল, ভাগাড়ের মুখে লরি ওজন করার লম্বা লাইন। বিকাশ জানান, এই জায়গা পেরোতে পারলেই উপরে ওঠার তেমন বাধা থাকে না। ভাগাড়ের গেট থেকে বেরিয়ে বাঁ দিকে কোভিডে মৃতদের দেহ সৎকারের পুরসভার চুল্লি পার করে উঠে যেতে হয় ধাপার পাহাড়ে। শুক্রবার বৃষ্টির পরে কাদায় মাখা সেই রাস্তা আরও ভয়ঙ্কর। চাকা পিছলে যাচ্ছে বার বার। কোনও মতে উপরে উঠতেই লরি থেকে নেমে পড়েন পালানি, সন্ন্যাসীরা। শুরু হয় প্রতিযোগিতা!

প্লাস্টিক কুড়িয়ে যে যত বেশি ওজন নামাতে পারবেন, তাঁর আয় তত। সেখানে না আছে বসার জায়গা, না আছে আশ্রয়স্থল! খুকি মণ্ডল নামে এক মহিলা বললেন, ‘‘এই গামছাই আমাদের বড় ভরসা। জল খেতেও তিন কিলোমিটার নামতে হয়।’’ কাদায় দাঁড়িয়েই রেহানা বিবি বললেন, ‘‘কাল যখন বাজ পড়ে, ওরা বেঁচে ছিল। ডাম্পার গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে যেতেই সব শেষ। এই পাঁক পেরিয়ে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়নি।’’

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার দাবি করলেন, ‘‘যথেষ্ট নজরদারি চলে। তার পরেও যদি এই ভাবে ওখানে উঠে গিয়ে কারও মৃত্যু হয়, সেই দায় কে নেবে? পুরসভায় বলব বিষয়টা, যাতে আরও কড়াকড়ি হয়।’’ প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, আবর্জনা ঘিরে ব্যবসার যে বিশাল সাম্রাজ্য, তাতে পাঁকে-চক্রে দু’জনের মৃত্যুতে কি কিছু বদলাবে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dhapa Dumping Ground Death Lightning

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।