ফাইল চিত্র।
‘কী করে হল এমনটা!’ ‘শেষ পর্যন্ত বিজেপি!’
শহরের রোমান ক্যাথলিকদের কাছ থেকে ধেয়ে আসছে প্রশ্নবাণ। অন্যেরাও এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন। তবু চার্চের পূর্বতন ফাদার তথা খিদিরপুরের লয়োলা স্কুলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ রডনি বোর্নিয়োর বিজেপিতে যোগদান সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয়ে এখনও আর্চবিশপের কাছ থেকে সদুত্তর মেলেনি। তাই ক্ষুব্ধ রোমান ক্যাথলিকদের একাংশ। কয়েকটি বিষয়ে জানতে চেয়ে রোমান ক্যাথলিক গির্জা সদস্যদের তরফে শুক্রবার কলকাতার আর্চবিশপকে চিঠিও দেওয়া হয়। বিজেপিতে যোগদানের পরে রডনি বোর্নিয়োর সঙ্গে গির্জার কী সম্পর্ক হবে, সেই বিষয়েও আরও স্বচ্ছতা দরকার বলে তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন।
তিনি ধর্মযাজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে মেনে নিলেও রডনি বলেছিলেন, ‘‘আমি ধর্মযাজক হিসেবে দীক্ষিত। অদীক্ষিত কী করে হব?’’ এখন প্রশ্ন উঠছে, খ্রিস্টানদের সঙ্গে অতীতে নানা সংঘাতে জড়িয়ে পড়া একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার দরুণ তাঁর উপরে কি কোনও ধর্মীয় দণ্ড নেমে আসছে? রোমান ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃপক্ষের বিধি মেনে ‘ডিফ্রক’ বা ‘লেইসাইজ়েশন’ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে রডনি বোর্নিয়োর ধর্মযাজকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে কি? এই প্রশ্নও রোমান ক্যাথলিকদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
শনিবার এ বিষয়টি কিন্তু খোলসা করেননি আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজ়া। তিনি বলেন, ‘‘উনি (রডনি বোর্নিয়ো) ধর্মযাজক হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। স্পষ্ট ভাবে এই নির্দেশ দিয়েছি। বাকিটা বলতে পারব না।’’ কোনও ধর্মযাজককে ‘ডিফ্রক’ বা ‘লেইসাইজ়েশন’-এর অধিকার রোমান ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ ক্ষমতাকেন্দ্র ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে। কিন্তু আর্চবিশপ কি রডনি বোর্নিয়োর বিষয়টি ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন? জবাবে আর্চবিশপ শুধু বলেন, ‘‘সেটা দরকার হলে জানাব।’’ ক্যাথলিক অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সভানেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা ম্যানটোশের কথায়, ‘‘আর্চবিশপ এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন, তার অপেক্ষা করছি। এটুকু বলতে পারি, উনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় আমরা ব্যথিত।’’ তৃণমূল শিবিরের ঘনিষ্ঠ অ্যাঞ্জেলিনার দাবি, ‘‘রডনি বোর্নিয়ো তৃণমূল নেতৃত্বেরও পরিচিত ছিলেন। তৃণমূলের ভূমিকা খ্রিস্টান সমাজের জন্য ইতিবাচক। রাজ্যে ভোটের আগে তিনি বিজেপি শিবিরে গেলেন, এটা রোমান ক্যাথলিকরা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না।’’
রডনির ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের অবশ্য প্রশ্ন, ‘‘আর্চবিশপের নির্দেশে কেন বলা হল, তিনি (রডনি) বিজেপিতে গিয়েছেন বলে ধর্মযাজক থাকতে পারবেন না? এর মানে কি তিনি তৃণমূলে গেলে সেটা সমস্যার ছিল না?’’ সম্প্রতি অজমেঢ়ে এক ধর্মযাজক স্থানীয় বিশপের গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরে তাঁকে শাস্তি দিয়ে সমাজচ্যুত (এক্সকমিউনিকেট) করা হয়েছে। অর্থাৎ, ওই ব্যক্তি গির্জার অনুষ্ঠানে শামিল হতে পারবেন না। আপাতত রডনি বোর্নিয়ো ধর্মযাজকের কাজ করতে পারবেন না, এটুকুই শুধু বলা হয়েছে। তবে সামগ্রিক ভাবে রডনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় রোমান ক্যাথলিকদের বড় অংশ তীব্র ভাবে আহতই হয়েছেন। নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই বিজেপি-র বিরুদ্ধ স্বর হিসেবে তাঁরা গোটা দেশে আত্মপ্রকাশ করেন।
কিন্তু একই সঙ্গে রডনির ঘটনা এড়ানো যেতেও পারত বলে কলকাতায় প্রকাশিত রোমান ক্যাথলিকদের পত্রিকা ‘দ্য হেরাল্ড’-এর সম্পাদকীয়তে লিখেছেন সম্পাদক ফাদার দেবরাজ ফার্নান্ডেজ। দেবরাজের লেখায় বলা হয়েছে, ‘রডনিকে শুধুই আত্মম্ভরী বলে দায় এড়ানো যায় না। বাংলায় রাজনৈতিক ডামাডোল তথা শাসকদলের তখ্তে বসার কঠিন যুদ্ধ চলছে। এই সময়ে এক জন প্রতিভাবান ধর্মযাজক কেন একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিলেন, ক্যাথলিক সমাজ এবং অন্য গোষ্ঠীরাও তার জবাব খুঁজছে।’’ বিজেপিতে রডনিকে কোন ভূমিকায় দেখা যাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি ঠিক করেছি না ভুল করেছি, তা সময়েই বোঝা যাবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy