দেওয়ালে লেখার উপায় না থাকলেও টাঙানো হয়েছে ব্যানার। শুক্রবার, কসবার একটি বাড়িতে। — নিজস্ব চিত্র।
ভোটের প্রচারে ব্যবহারের জন্য মা নিজের বাড়ির দেওয়াল লিখতে দিতে চেয়েছিলেন একটি রাজনৈতিক দলকে। মেয়ের আবার সেই দলকে অপছন্দ। তিনি চেয়েছিলেন, অন্য এক রাজনৈতিক দল তাঁদের বাড়ির দেওয়াল লিখুক! কসবার এন কে ঘোষাল রোডের ওই বাড়ির বাসিন্দারা এই নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছিলেন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মুখে। এ নিয়ে দুই রাজনৈতিক দলের লড়াই পৌঁছয় থানা পর্যন্ত। চাপান-উতোরের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে, ওই মা-মেয়ের কাছ থেকে কি আদৌ অনুমতি নিয়েছিল কোনও রাজনৈতিক দল?
চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জেলায় জেলায় দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছিল। বেশির ভাগ জায়গায় দেওয়াল লেখা, পোস্টার লাগানোর কাজ সদ্য শেষ হয়েছে। তবে বেশির ভাগ জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে, বাড়ির মালিকের অনুমতির বিষয়টি রাজ্যের সংস্কৃতিতে অধরাই রয়ে গিয়েছে এখনও! রাজনৈতিক দলগুলির তরফে যেমন আগাম লিখিত অনুমতি নেওয়ার রেওয়াজ নেই, তেমনই এ নিয়ে প্রতিবাদও নেই নাগরিক সমাজে। এ নিয়ে আদৌ কোনও স্পষ্ট নিয়ম আছে কি না, তা জানেন না অধিকাংশই!
এর মধ্যেই অন্যান্য বারের মতো এ বারও সামনে আসছে দেওয়াল লিখন ঘিরে গন্ডগোলের অভিযোগ। পুলিশ সূত্রের খবর, নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে গত কয়েক দিনে শুধু কলকাতাতেই দেওয়াল লিখন ঘিরে ৬২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু পুলিশই জানাচ্ছে, যে সংখ্যায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে, ঘটনা ঘটেছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। বহু ক্ষেত্রেই দু'পক্ষকে থানায় ডেকে মিটমাট করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় বললেন, ‘‘কর্মীদের বুঝিয়ে চলেছি, বাড়ির দেওয়ালে যাকে খুশি লিখতে দিক, ভোটটা আমাদের দিলেই হল।’’ দমদমের প্রার্থী সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা টিপ্পনী, ‘‘সব কিছুর মতো দেওয়ালটুকুরও দখল চাই অনেকের। তাঁরা বোঝেন না, মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হয়, সব কিছুর দখল নিতে গেলে লোকে খারাপ বলে।’’ যদিও ভুক্তভোগীদের দাবি, কোনও পক্ষই নির্বাচনের আগে এ সব নিয়ে সামান্যতম সৌজন্যের ধার ধারে না।
২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল (প্রিভেনশন অব) ডিফেসমেন্ট অব পাবলিক প্রপার্টিস অ্যাক্ট, ১৯৭৬’-এর উপরে জোর দেয় রাজ্য সরকার। এই আইন অনুযায়ী, বাড়ির দেওয়াল নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করলে অপরাধী হিসাবে ছ’মাসের হাজতবাস এবং ১০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। কিন্তু ভারতীয় নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রচারের জন্য যে ছাড় দেয়, এই আইন তার চেয়েও কঠোর। পরবর্তী কালে নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে নিয়ম বেঁধে দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, দেওয়াল লেখা নিয়ে কোনও জবরদস্তি চলবে না। সরকারি সম্পত্তির দেওয়ালে কোনও রকম ভোটের প্রচার চলবে না। লাগানো যাবে না হোর্ডিং, পোস্টার, ব্যানারও। বেসরকারি বাড়ি বা সম্পত্তির দেওয়াল ব্যবহার করতে হলে মালিকের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। বাড়ি মালিকের অনুমতি না থাকলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকেই সেই দেওয়াল লিখন মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি তাঁরা না করেন, তা হলে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক মোছার ব্যবস্থা করবেন। মোছার খরচ আদায় করতে হবে প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেই। কিন্তু প্রশ্ন, এই বিষয়ে কি আদৌ যথাযথ নজরদারি চালানো হয়? স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
কসবার এন কে ঘোষাল রোডে সেই বাড়ির সামনে পৌঁছে দেখা গেল, বিতর্ক এড়াতে সেটির দেওয়াল আর লেখার উপযুক্ত রাখা হয়নি। দেওয়ালের গায়ে ‘স্টোন চিপস’ বসিয়ে রং করে দেওয়া হয়েছে। তবে উপর দিয়ে ইট চাপা দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানার। বেল বাজিয়ে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেল, মা-মেয়ের সেই লড়াইটাই আর নেই। মা, দেবযানী গুহর মৃত্যু হয়েছে ২০২০ সালে। এখন বাড়ির মালিক তাঁর মেয়ে, পেশায় সফটওয়্যার সংস্থার কর্মী দেবীপর্ণা বললেন, ‘‘মা নেই, বিতর্ক চাই না বলেই দেওয়ালটা রং করিয়েছি।’’ কিন্তু তাতেও যে রাজনৈতিক ব্যানার ঝুলছে! অনুমতি নেওয়া হয়েছে? উত্তর দিতে চাননি দেবীপর্ণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy