Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
kasba

গোলমালের নেপথ্যে কি সিন্ডিকেটের পালাবদল?

গণেশ পুজোর বিসর্জনে এক মহিলাকে কটূক্তি করাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার সন্ধ্যায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কসবার জগন্নাথ ঘোষ রোড এলাকা। দফায় দফায় সংঘর্ষে গোটা এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।

বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:২৭
Share: Save:

গোলমালের নেপথ্যে কি শুধুই গণেশ পুজোর বিসর্জন? না কি এর পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য? প্রকাশ্যে সে সব বলে কেউ ‘বিপদ’ বাড়াতে না চাইলেও এলাকায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে পুরভোটে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে কসবা জুড়ে ‘দখলদারি’র হাওয়া বদলের কথা। শাসকদলের তরফে কোনও অভিযোগ স্বীকার করা না হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘বিসর্জন তো আসলে একটা মুখোশ! এলাকায় সিন্ডিকেট-বিবাদের স্তূপে একটু আগুনের ফুলকির প্রয়োজন ছিল। বিসর্জন সংক্রান্ত বিবাদ যা জুগিয়েছে।’’

গণেশ পুজোর বিসর্জনে এক মহিলাকে কটূক্তি করাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার সন্ধ্যায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কসবার জগন্নাথ ঘোষ রোড এলাকা। দফায় দফায় সংঘর্ষে গোটা এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। বাড়িতে ঢুকে বাঁশ, রড নিয়ে মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে। হামলার হাত থেকে রেহাই পাননি মহিলারাও। ঘণ্টাখানেক ধরে তাণ্ডব চলে এলাকায়। বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে আহত পাঁচ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় দু’পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেছে কসবা থানায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার এক দফা ঝামেলার পরে শনিবার ফের পরিস্থিতি চরমে ওঠে। বিসর্জন নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের কথা বলা হলেও আদতে এর পিছনে এলাকার সিন্ডিকেটের দখলদারির বিবাদকেই দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আসলে বিসর্জনের মুখোশকে ঢাল হিসাবে সামনে আনা হচ্ছে। কিন্তু সেই মুখোশ সরালেই সিন্ডিকেটের দাঁত-নখ বেরিয়ে আসছে।’’

কসবার জগন্নাথ ঘোষ রোড এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। গত পুরভোটে এই ওয়ার্ডে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। তার আগে দীর্ঘ সময় ধরে এই ওয়ার্ড বামেদের হাতে ছিল। পুরভোটের পরে এলাকার রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সিন্ডিকেটের দখলদারির সমীকরণও বদলাতে থাকে বলে দাবি।

স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বাম কাউন্সিলরের সময়েই শাসকদলের এক দাপুটে নেতা এলাকার রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতেন। মূলত তাঁর অনুগামীদের হাতেই ছিল সিন্ডিকেটের ভার। বেআইনি নির্মাণ থেকে শুরু করে এলাকায় ইট, বালি, সিমেন্ট ফেলার বরাত— সবটাই চলত সেই অনুগামী ‘দাদাদের’ অঙ্গুলিহেলনে। কিন্তু দাবি, পুরভোটের পরে সেই সমীকরণ দ্রুত বদলায়। এলাকায় সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক হিসাবে দ্রুত উঠে আসেন নতুন ‘দাদা’। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই নতুন এবং পুরনো ‘দাদাদের’ দ্বন্দ্ব আরও বাড়ছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বস্তি-সহ আশপাশের এলাকার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ আপাতত যাঁর দখলে, তাঁকে পুরভোটের সময়েও দাপট দেখাতে দেখা গিয়েছিল। এমনকি, বস্তি এলাকার ভোট নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন তিনিই।’’ গন্ডগোলে নাম জড়ানো সেই ‘দাদা’ বর্তমান কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ বলেও এলাকাবাসীর দাবি।

যদিও ঘনিষ্ঠতার দায় এড়িয়ে বৈশ্বানর বলছেন, ‘‘ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসাবে এলাকার সকলের সঙ্গেই আমার পরিচিতি। এখানে ঘনিষ্ঠ হওয়ার কোনও বিষয় নেই। এটি আদতে গণেশ পুজো ঘিরে দুই পাড়ার সংঘর্ষ। এঁদের অনেকেই একে অপরের আত্মীয়। বিরোধীরা রাজনৈতিক রং লাগিয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

kasba Clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy