বরফ দিয়ে রাখা হচ্ছে কুকুরছানাগুলির দেহ। বুধবার, জোড়াবাগানে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
কোনওটির মুখ, কোনওটির বা গলা শক্ত করে দড়ি দিয়ে বাঁধা। কোনওটির আবার চারটে পা একসঙ্গে করে বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। কিছুটা দূরে একটির গলার সঙ্গে বাঁধা অন্যটির গলা! বুধবার সকালে জোড়াবাগানের একটি গুদামঘর থেকে এ ভাবেই উদ্ধার হল পাঁচটি কুকুরছানার মৃতদেহ, যা ফিরিয়ে আনল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে মারার ঘটনার স্মৃতি। এ বারের ঘটনায় বেঁধে পেটানোর পরে বিষ দিয়ে ওই কুকুরছানাদের খুন করা হয়েছে বলে জোড়াবাগান থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন কয়েক জন পশুপ্রেমী। এফআইআর রুজু করে এ দিন সন্ধ্যায় অভিযুক্ত সন্দেহে এক জনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ, বৃহস্পতিবার ওই কুকুরছানাদের দেহের ময়না-তদন্ত হওয়ার কথা বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে।
অভিযোগকারী পশুপ্রেমী দময়ন্তী সেনের দাবি, জোড়াবাগান থানা এলাকার রামধন খান লেনের একটি গুদাম থেকে একসঙ্গে পাঁচটি কুকুরছানার দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে সকালে তাঁদের কাছে খবর যায়। তাঁরা গিয়ে দেখেন, অজয় ঠাকুর নামে এক ব্যক্তিকে ধরে মারধর করছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, বছর বাহান্নর ওই ব্যক্তিই কুকুরছানাগুলিকে খুন করেছেন। এর পরেই খবর যায় থানায়। পুলিশ গিয়ে অজয়কে থানায় নিয়ে যায়। আয়ুষি দে নামে এক পশুপ্রেমীর দাবি, যে গুদামঘর থেকে নিহত কুকুরছানাদের উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানেই দেখাশোনার কাজ করেন অজয়। এ দিন সকালে প্রথমে দু’টি কুকুরছানাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন সাগর শেঠি নামে এক যুবক। তার পরেই ধীরে ধীরে উদ্ধার হয় আরও তিনটির মৃতদেহ। আয়ুষি বলেন, ‘‘অজয়ের নামে আগেও কুকুরদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল। ছুরি হাতে তাদের ভয় দেখানোরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অনেকেই বলছেন, মত্ত অবস্থায় আগের রাতে ওই ব্যক্তিই কুকুরগুলিকে জোর করে খাবার খাইয়েছেন।’’ আয়ুষিদের দাবি, পাঁচটি কুকুরছানাকে মেরে ফেলা হলেও একটি বেঁচে গিয়েছে। তাকে আপাতত তার মায়ের সঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভয়ে কাউকে কাছেই ঘেঁষতে দিচ্ছে না তারা।
অজয় অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি যে গুদামঘরে কাজ করেন, সেটির মালিক বিনয় ঘোষ দাবি করেন, ‘‘অজয়ই ওই কুকুরছানাগুলিকে খাওয়াত এবং ওদের দেখাশোনা করত। যিনি দেখাশোনা করেন, তিনিই কি খুন করতে পারেন?’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘অজয় অবশ্য মদ্যপান করে। এক বার একটি কুকুরকে ধরে মেরেছে বলেও শুনেছিলাম। কিন্তু একেবারে খুন করে ফেলবে বলে মনে হয় না।’’
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের পাশে প্রায় দেড়শো বর্গফুট জায়গা নিয়ে রয়েছে ওই গুদামঘরটি। পাশে রয়েছে আরও একটি বহুতল। কারও নাম না করে বিনয় দাবি করেন, ওই বহুতলের কোনও বাসিন্দা এই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন। আজ, বৃহস্পতিবার বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে দেহগুলির ময়না-তদন্ত করানোর পাশাপাশি ওই এলাকা থেকে কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করছে পুলিশ। আপাতত বরফে মুড়ে দেহগুলি রাখা হয়েছে থানা চত্বরেই।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এনআরএসের ভিতর থেকে এ ভাবেই একসঙ্গে ১৬টি মৃত কুকুরছানাকে উদ্ধারের ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। ময়না-তদন্তে জানা যায়, পিটিয়ে মারা হয়েছিল ওই কুকুরছানাদের। মারের চোটে কয়েকটির যকৃৎ-ও ফেটে যায়। ওই ঘটনায় দুই নার্সিং পড়ুয়া গ্রেফতার হন। লাগাতার আন্দোলনে পশুহত্যা-বিরোধী কঠোর আইন পাশের দাবি ওঠে। এই ঘটনায় জল কোন দিকে গড়ায়, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy