ধর্মতলায় ধর্মপুজো। — নিজস্ব চিত্র।
চালিয়ে যাওয়ার ব্রত নিয়ে কলকাতায় শুরু হল ধর্মঠাকুরের পুজো। এক কালে ধর্মঠাকুরের পুজো হত বলেই কলকাতার প্রাণকেন্দ্রের নাম ধর্মতলা হয় বলে দাবি করে শুক্রবার বুদ্ধপূর্ণিমার দিন থেকে শুরু হল ‘হারিয়ে যাওয়া’ পুজো। চলবে পাঁচ দিন।
ভারতের ‘লুপ্ত’ মেলা-পার্বণ খুঁজে বার করা এবং তা ফিরিয়ে আনার জন্য বছর কয়েক আগে ‘মার্গদর্শনম’ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়। মূলত সেই সংগঠনের উদ্যোগেই হুগলি জেলার ত্রিবেণীতে কুম্ভমেলার আয়োজন শুরু হয় ২০২২ সালে। দাবি করা হয়েছিল কয়েক হাজার বছর আগে ইলাহাবাদের মতো হুগলির ত্রিবেণী সঙ্গমেও কুম্ভস্নানের রেওয়াজ ছিল। এর পরে চলতি বছরে সেই আয়োজন বড় আকার নেয়। দেখাদেখি নদিয়ার কল্যাণীতেও গঙ্গায় কুম্ভস্নান শুরু হয়। হুগলির উদ্যোগের কথা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন। এ বার একই রকম ভাবে কলকাতায় নতুন পুজোর সূচনা হল।
আয়োজকদের অন্যতম প্রধান কলকাতার মহানির্বাণ মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সর্বানন্দ অবধূত মহারাজ। তিনি জানিয়েছেন, এই উদ্যোগের সঙ্গে রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ থেকে ইস্কন-সহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন রয়েছে। স্বামী সর্বানন্দ বলেন, ‘‘আমরা ধর্মতলার যে প্রাচীন ইতিহাস, তা জাগরিত করার জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছি। ধর্মঠাকুরের পুজোর জন্যই একদিন এই অঞ্চলের নাম হয়েছিল ধর্মতলা।’’
শুক্রবার পার্ক স্ট্রিটের উল্টো দিকের ময়দানে বট গাছের নীতে একটি পাথরখণ্ড রেখে শুরু হয় পুজো। তার আগে হয় ধ্বজারোহন। ধূপধুনোর গন্ধে, যজ্ঞের আগুনে তৈরি হয় পুজোর আবহ। আয়োজকরা জানিয়েছে, পাঁচ দিনের এই উৎসব শেষ হবে আগামী মঙ্গলবার রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিনে। শুক্রবার বিভিন্ন মঠ, মিশনের সাধুসন্তরা এসে গিয়েছেন কলকাতায়। আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনই পূজাঅর্চনার পাশাপাশি হবে ধর্মীয় সভা। প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন থাকবে। শেষ দিনে বিশ্ব শান্তির কামনায় হবে মহাযজ্ঞ।
প্রধানত বাংলার রাঢ় অঞ্চলীয় আদিবাসীদের দেবতা এই ধর্মঠাকুর। তাঁর কোনও মূর্তি নেই। একটি এবড়োখেবড়ো পাথরকে সিঁদুর-চন্দন পরিয়ে উপাসনা করেন ডোম, বাউড়ি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কলকাতায় ধর্মঠাকুরের পুজোর আয়োজকদের দাবি, ‘কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থের লেখক বিনয় ঘোষের মতেও এই এলাকায় বহুকাল আগে ধর্মঠাকুরের মন্দির ছিল।
আয়োজকদের লক্ষ্য, প্রতি বছর এই ভাবে বুদ্ধপূর্ণিমা থেকে পাঁচ দিনের ধর্মঠাকুরের পুজোর আয়োজন করা হবে কলকাতায়। এখন সে ভাবে বড় আকার না নিলেও একদিন এটা কলকাতার অন্যতম উৎসব হয়ে উঠবে। মূলত দুর্গাপুজোর জন্য পরিচিত কলকাতা কি তবে সত্যিই নতুন ঠাকুর পেয়ে যাবে? বলবে আগামী দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy