টালা সেতুর গা ঘেঁষে এই পুজো নিয়ে চিন্তায় উদ্যোক্তারা। নিজস্ব চিত্র
পুজোটা ঠিক মতো উতরোবে তো? কোন দিক থেকে দর্শনার্থীরা মণ্ডপে ঢুকবেন, কোন দিক দিয়েই বা তাঁরা বেরোবেন? আপৎকালীন পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুল্যান্স বা দমকলের গাড়ির জন্যই বা কোন পথ ব্যবহার করা হবে?
মহালয়ার এক দিন আগে এখন এই প্রশ্নগুলিই ঘুরপাক খাচ্ছে টালা সেতু সংলগ্ন পুজো কমিটিগুলির মধ্যে। তাঁদের কেউ পুলিশ-প্রশাসনকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে এখনই চিঠি পাঠাচ্ছেন। কেউ আবার চাইছেন, পুরো বন্ধ না করে টালা সেতু দিয়ে অন্তত ছোট গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হোক। একটি-দু’টি পুজো কমিটির আবার দাবি, টালা সেতুর সংস্কারের কাজ করা হোক পুজো মিটে যাওয়ার পরে। যে কোনও মুহূর্তে বড় বিপদের আশঙ্কা নিয়েই তাঁরা বলছেন, ‘‘বৌবাজারের কথা শুনে এত দিন কষ্ট পাচ্ছিলাম। এ তো আমাদেরও একই অবস্থা হল! এত খরচ করে পুজো করা। মানুষই যদি না দেখেন, লাভ কী?’’
শ্যামবাজার থেকে যেতে টালা সেতুর নীচে ডান দিকে টালা বারোয়ারির পুজো মণ্ডপ। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এ বার তাঁদের ৯৯ বছর। সোনালি ঘাস দিয়ে মণ্ডপসজ্জায় ‘উৎসব’-এর থিম ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিমাও চলে এসেছে। তবে এখন টালা সেতু নিয়েই তাঁদের যাবতীয় চিন্তা। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অভিষেক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘টালা সেতুই আমাদের জীবন-রেখা। হাওড়া, হুগলি বা উত্তর ২৪ পরগনার মানুষ এই সেতু দিয়েই মণ্ডপে আসেন। সেটা বন্ধ হয়ে গেলে তো মারাত্মক ব্যাপার হবে।’’ তিনি জানান, পুজোয় ক্যানাল ইস্ট এবং ক্যানাল ওয়েস্ট রোড বন্ধ রাখে পুলিশ। সংস্কারের জন্য টালা সেতুও বন্ধ হয়ে গেলে ওই রাস্তা যাতে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়, সেই অনুমতি চেয়ে কলকাতা পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। অভিষেকবাবুর মতে, ‘‘আপৎকালীন পরিস্থিতি হলে কিছু বলার নেই। তবু যদি সম্ভব হয়, পুজোর জন্য অন্তত টালা সেতু দিয়ে ছোট গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হোক।’’
একই রকম আশঙ্কায় টালা পার্ক প্রত্যয়ের পুজো। এমনিতেই রাস্তা আটকে পুজো করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তার উপরে মণ্ডপ তৈরির সময় থেকেই ওই এলাকার মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়ে যায় বলে পুলিশের দাবি। তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে টালা সেতু বন্ধের আশঙ্কা। পুজোর উদ্যোক্তা শুভঙ্কর সাহার কথায়, ‘‘আমাদের এ বার ৯৪ বছর। ডানলপের দিক থেকে আসতে সমস্যা নেই। তবে কলকাতার দিক থেকে পাইকপাড়া মোড় হয়ে আমাদের মণ্ডপে আসতে টালা সেতু পেরোতে হয়। বিকল্প কী, সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। সেতু বন্ধ হলে আর জি কর রোডেও মারাত্মক চাপ পড়বে।’’
টালা বারোয়ারির উল্টো দিকে, সেতুর একেবারে গা ঘেঁষে টালা পল্লি সাধারণ দুর্গোৎসব সমিতির মণ্ডপ। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এ বার তাঁদের ৭২তম বছর। শিশুদের মানসিক চাপকে থিম হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। জোরকদমে শুরু হয়েছিল মণ্ডপ তৈরির কাজ। তবে সেতু সংস্কারের জন্য বুধবার থেকে মণ্ডপের পিছন দিকের ঝুপড়িগুলি ফাঁকা করার কাজ শুরু করেছে পুলিশ। যা ঘিরে দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছে এলাকায়। পুলিশের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, টালা সেতু বন্ধ হলে চিৎপুর হয়ে প্রাণকৃষ্ণ মুখার্জি রোড ব্যবহার করে টালা পল্লির মণ্ডপে দর্শকদের প্রবেশের ব্যবস্থা করা হবে। তবু পুজো ঘিরে আশঙ্কা কাটছে না। সেতুর সংস্কারের জন্য ত্রিপল দিয়ে মণ্ডপ ঘিরে দেওয়ারও ভাবনাচিন্তা করছেন তাঁরা। উদ্যোক্তা রঞ্জন দাস বললেন, ‘‘পুজো হয়তো বন্ধ হবে না। তবে পুজোর মুখে পাড়ার কেউ ঘরছাড়া হচ্ছেন, এটা উদ্যোক্তা হিসেবে দেখা খুব যন্ত্রণার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy