ফাইল চিত্র।
পুজোর বিজ্ঞাপনের নিরিখে হাতিবাগান মোড়, বিধান সরণি, অরবিন্দ সরণির ‘স্থান মাহাত্ম্য’ কতটা! সে কথা বোঝাতেই ওই এলাকার ছবির সঙ্গে পুজোর সময়ে সেখানে কত লোক হয়, সাদা কাগজে সেই হিসেব লিখে বিজ্ঞাপনী এজেন্টদের কাছে ছুটছেন উদ্যোক্তারা। বুধবারও তেমনই দিনভর ছুটে তাঁদেরই এক জন বললেন, “২২ দিন বাদে ষষ্ঠী। বিধান সরণিতে আমাদের ১৬টা গেটের একটারও বিজ্ঞাপন জুটল না! স্টল দেবে কে? পুজোর টাকা আসবে কোথা থেকে?”
বিজ্ঞাপন না জোটার এই হাহাকার পুজোর ‘হটস্পট’ হিসেবে পরিচিত গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, লেক রোড, ভিআইপি রোড, শ্যামবাজার, বাগবাজারের প্রায় সর্বত্রই। বড় পুজোর কর্তারা জানাচ্ছেন, এখনও কোনও স্পনসর ‘পাকা কথা’ দিচ্ছেন না। বহু বিজ্ঞাপনদাতা বুঝেই উঠতে পারছেন না, এ বার ভিড় হবে কি না! ভিআইপি রোডের এক বড় পুজোর কর্তা বললেন, “করোনার জেরে ভিড় হবে কি? ভিড় না হলে সংস্থা বিজ্ঞাপন দেবে কেন? সব সংস্থা চার অক্টোবরের পরে দেখা করতে বলছে।” তাঁদের পুজোয় যে এখনও বাঁশ পড়েনি, সে কথা জানিয়ে ত্রিধারা সম্মিলনীর অন্যতম উদ্যোক্তা দেবাশিস কুমার বলেন, “এ বার স্পনসরেরাও খেলবে। আগে যে পাঁচ লক্ষের বিজ্ঞাপন দিত, এ বার কুড়ি হাজার ধরাবে। পুজোয় বিজ্ঞাপন দিয়ে যত লোকের কাছে পৌঁছনো যায়, অন্য কোনও ভাবে যায় কি?”
উত্তরের কাশী বোস লেনের উদ্যোক্তারা আবার বেশি চিন্তিত বিজ্ঞাপনের সংখ্যা নিয়ে। এক উদ্যোক্তা সৌমেন দত্ত জানান, অন্য বার এই সময়ে তাঁদের ১২টি গেটের অন্তত ন’টি বিজ্ঞাপনে ভরে যায়। বাড়ির গায়ের হোর্ডিং, রাস্তার পিলারের বিজ্ঞাপন নিয়েও কথা পাকা হয়ে যায়। এ বার বিজ্ঞাপন এসেছে দু’টি। বালিগঞ্জ সমাজসেবী, লেক শিবমন্দির, মুদিয়ালির পুজো কমিটিও জানাচ্ছে, এখনও স্পনসরই জোগাড় হয়নি। সমাজসেবীর উদ্যোক্তা অরিজিৎ মৈত্র বললেন, “লেক রোড, সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের জন্যই এখনও বিজ্ঞাপন আসেনি। যে সংস্থা যা দিতে চাইবে তা-ই মানতে হবে। নয়তো পরে যখন বাজার ফিরবে, তখন ওই সংস্থা আর বিজ্ঞাপন দিতে চাইবে না।” গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীনের উদ্যোক্তা মান্টা মিশ্র আবার জানালেন, স্পনসর তো নেই-ই, সেই সঙ্গে সরকারি দফতরগুলিও পুজোর প্রচারের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। আগে যে দফতর ৮০টি পুজোয় বিজ্ঞাপন দিত, এ বার তারা ৪০টির বেশি কমিটিকে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতেও আশাবাদী টালা বারোয়ারির উদ্যোক্তারা। তাঁদেরই এক জন অভিষেক ভট্টাচার্য বললেন, “এ বার ১০০ বছর। ৯৯ বা ১০১ হলে স্রেফ কাপড় পেঁচিয়ে প্রতিমা বসিয়ে পুজো হত। সেটা শতবর্ষে পারব না বলেই যাবতীয় খরচ বাঁচিয়ে ভারতীয় সেনাকে উৎসর্গ করে থিম হয়েছে। স্পনসরদের একটু সাহায্য পেলেই হবে।” ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজো উদ্যোক্তা শাশ্বত বসু বললেন, “এটাই এ বারের চ্যালেঞ্জ। খরচ বাঁচালেই সব করা যায়। প্রতি বার সাত-আট মাস ধরে মণ্ডপের কাজ চলে। এত দিন শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। এ বার সবটা হচ্ছে এক মাসে। ফলে খরচ বাঁচছে। তা ছাড়া মণ্ডপে লোহা ছেড়ে বাঁশের কাঠামো করলেই খরচ বাঁচে অনেক।” তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী পুজো হওয়ার আশ্বাস দিতে কিছুটা হাল ফিরেছে। তা ছাড়া ৫০ হাজার টাকার সাহায্যও রয়েছে।” এ বার স্পনসর এলেও সামাজিক কাজে বেশি বরাদ্দ রেখে পার্কে পুরসভার তৈরি ভাষা শহিদের বাঁধানো মঞ্চেই পুজো করবে দেশপ্রিয় পার্ক। উদ্যোক্তা সুদীপ্ত কুমার বললেন, “এ বার মানুষের পাশে থাকি, পরের বার দেখা যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy