ব্যবস্থা ছিল পরিবেশবান্ধব বিসর্জনের। তবে সেই দিকে পা বাড়ায়নি প্রায় কোনও পুজো কমিটিই। প্রথা মেনে গঙ্গায় বিসর্জনের ঝোঁকই ছিল বেশি। শনিবার, দইঘাটে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
দশমী থেকেই প্রতিমা বিসর্জন চলছে শহরের বিভিন্ন ঘাটে। কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে শহরের অধিকাংশ প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। গঙ্গার দূষণ রুখতে এ বছর হেস্টিংস এলাকার দইঘাটে পরীক্ষামূলক ভাবে হোসপাইপ দিয়ে প্রতিমা গলাতে উদ্যোগী হয়েছিল কলকাতা পুরসভা। শুক্রবার এই পদ্ধতির উদ্বোধন হলেও শনিবার একটিও প্রতিমা এই পদ্ধতিতে গলানো সম্ভব হয়নি। উল্টে বেশির ভাগ প্রতিমাকে গঙ্গায় বিসর্জন দিতে দেখা যায় দইঘাটে। অভিযোগ, সেই কাঠামো গঙ্গায় ভেসে যেতেও দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে বিসর্জনের দায়িত্বপ্রাপ্ত, কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘বিসর্জনের একটা ধর্মীয় রীতিনীতি আছে। আমরা গঙ্গার ঘাটে পরিবেশবান্ধব বিসর্জনের ব্যবস্থা করলেও কোনও পুজো কমিটিকে জোর করে সেই পরিবেশবান্ধব বিসর্জন মেনে চলতে বাধ্য করতে পারি না।’’ যদিও পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের যুক্তি, ‘‘পুরসভা যখন পরিবেশবান্ধব বিসর্জনের ব্যবস্থা চালু করল, তখন তাদের উচিত পুজো কমিটিগুলিকে সচেতনতার পাঠ দিয়ে এই পদ্ধতি মেনে চলতে বাধ্য করা। না হলে এমন পরিবেশবান্ধব বিসর্জন পদ্ধতি চালু করে কোনও লাভ নেই।’’
প্রতি বছর কলকাতার গঙ্গায় প্রায় হাজার চারেক প্রতিমার নিরঞ্জন হয়। কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘শুক্রবার জাজেস ঘাট, বাজেকদমতলা ঘাট, দইঘাট এবং নিমতলা ঘাটে প্রায় দেড় হাজার প্রতিমা নিরঞ্জনের কাজ শেষ হয়েছে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের মোট ১৭টি গঙ্গার ঘাট ছাড়াও ৩৩টি জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জনের কাজ আগামী ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।
এ দিন সকাল থেকেই ঘাটগুলি থেকে প্রতিমার কাঠামো, ফুলমালা-সহ পুজোর সামগ্রী সাফাইয়ের কাজ শুরু করেন পুরকর্মীরা। এই কাজে পুরসভার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরও। জাজেস ঘাট, বাজেকদমতলা ঘাট ও নিমতলা ঘাটে মোট চারটি ক্রেন গঙ্গা থেকে কাঠামো তোলার কাজ শুরু করেছে। বাজেকদমতলা ঘাটে জলে ভাসমান বার্জের উপরে এবং পাড়ে
একটি করে ক্রেন রাখা হয়েছে। নিমতলা এবং জাজেস ঘাটে রয়েছে একটি করে ক্রেন, যা জলে ফেলা মাত্রই কাঠামো টেনে তোলার কাজ করছে। এ দিন বিভিন্ন ঘাট পরিদর্শন করেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার ও দেবব্রত মজুমদার। পরে দেবব্রতবাবু জানান, পুরসভার এক হাজার কর্মী ও ১০০টি গাড়ি কাঠামো, সামগ্রী ঘাট থেকে ধাপায় নিয়ে গিয়ে ফেলছে।
গত বছরের মতোই করোনা-বিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জনের কাজ চলছে। গঙ্গাদূষণ রোধে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা অনুযায়ী গঙ্গাপাড়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফুলমালা-সহ পুজোর অন্য সামগ্রী একত্রিত করে রাখা হচ্ছে। কোভিড-বিধি মেনে ভিড় এড়াতে ঘাটে থাকছে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মীও।
দমদমের তিনটি পুর এলাকায় একাধিক জলাশয়ে শুক্রবারেই অধিকাংশ প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। সেই সঙ্গে রাত থেকে কাঠামো তুলে ফেলার কাজ দ্রুত শুরু করেছে পুরসভা। অন্য বছরের তুলনায় এ বার জলদূষণ রুখতে পুরসভাগুলি তুলনায় বেশি তৎপর হলেও কোভিড-বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে অবশ্য অনীহা দেখা গিয়েছে পুর নাগরিকদের একাংশের মধ্যেই।
দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার তিন-চারটি জলাশয়ে প্রায় দেড়শো প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। এখনও প্রায় ৫০টি প্রতিমা নিরঞ্জনের কাজ বাকি। দমদম পুর এলাকায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত ১১৮টি প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য বরুণ নট্ট। তবে তিনটি পুর এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রতি বছরই কাঠামো জলাশয়ের পাশ থেকে সরানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের দেরি হয়। পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের পরে কাঠামোগুলি সরিয়ে নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy