Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

পর্দায় আড়ালেই পুজো চলছে ‘বড়’ দুর্গার

লালবাজারের পুলিশ কর্তারা বাইরে থেকে প্রতিমা দর্শন বন্ধ করে দিয়েছেন বটে, কিন্তু দেশপ্রিয় পার্কের বড় দুর্গার আড়ালে থাকা ছোট দুর্গার পুজো মহাসপ্তমীতে হয়েছে ধুমধাম করেই। দেবী এ দিন সেখানে পূজিত হয়েছেন ষোড়শপচারে, যথা নিয়মে।

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৫ ১৯:১২
Share: Save:

এ যেন বন্দিদশায় পূজিত হওয়া।

লালবাজারের পুলিশ কর্তারা বাইরে থেকে প্রতিমা দর্শন বন্ধ করে দিয়েছেন বটে, কিন্তু দেশপ্রিয় পার্কের বড় দুর্গার আড়ালে থাকা ছোট দুর্গার পুজো মহাসপ্তমীতে হয়েছে ধুমধাম করেই। দেবী এ দিন সেখানে পূজিত হয়েছেন ষোড়শপচারে, যথা নিয়মে।

তবে, দেশপ্রিয় পার্কের বড় দুর্গার মূর্তি যাতে কোনও মতেই পার্কের বাইরে থেকে দেখতে না যায়, সেই ব্যবস্থাও করেছে পুলিশ। পার্কের চার দিকে ৩০ ফুটেরও বেশি নীল কাপড় দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে, যাতে কোনও অবস্থাতেই উঁকিঝুঁকি মেরে বড় দুর্গা দেখতে পাওয়া না যায়। কিন্তু পুজোপ্রেমীদের দমাতে এসব আবরণ যে নিছকই ফিকে তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে বারবার। পঞ্চমীর দিন পুজো বন্ধের পরই উত্সাহী দর্শক রেলিঙে উঠে মোবাইলে ছবি তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। ষষ্ঠী, এমনকি সপ্তমীতেও ছবিটা ছিল প্রায় একই।

ম্যাডস্ক স্কোয়ারে বসে গড়িয়ার শ্রীপর্ণা তালুকদার বারবার ফোনে খোঁজ করছিলেন বন্ধুর কাছে, ‘‘হ্যাঁরে, কোনও ‘চান্স’ই কি নেই বড় দুর্গা দেখার?’’ উত্তরে যদিও সদর্থক কিছুই শুনতে পেলেন না তিনি। ষষ্ঠীর রাত প্রায় আড়াইটে। গড়িয়া থেকে হাজরা যাওয়ার বাসে তখন ঠাসা লোকজন। দেশপ্রিয় পার্ক আসতেই বাসের ভিতরে গুনগুনিয়ে উঠছে ভিড়। কানে আসছে ‘‘ওই দেখ, একটু দেখা যাচ্ছে রে’’, ‘‘দেখ না ছবিটা ওঠে কিনা’’গোছের মন্তব্য। কাল হয়ত অনুমতি মিলবে— এমন আশা ঠিক যেন ছাইচাপা আগুনের মতো উস্কে উঠছে কতকাতাবাসীর মনে।

সোমবার দেশপ্রিয় পার্কের বড় দুর্গার মুখ ঢেকে দেওয়া হলেও লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীর মূর্তি ঢাকা হয়নি। ফলে ওই দিনও পার্কের রেলিং ধরে বা পার্কের ধারের গাছে চড়ে ওই মূর্তিগুলি দেখার জন্য লোকজনকে জড়ো হতে দেখা গিয়েছিল। ফলে পার্কের পাশে ফুটপাথেও মানুষের ঢল নামে। তা আটকাতেই এ দিন পার্কের চারপাশ কাপড় দিয়ে মুড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।

এ দিন সকাল থেকেই দেশপ্রিয় পার্কের আশপাশে ভিড় সরাতে ব্যস্ত ছিল পুলিশ। ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন লালবাজারের গোয়েন্দা প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষও। বিকেলে দেশপ্রিয় পার্ক লাগোয়া পুজো মণ্ডপগুলির ভিড় সামলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন ছিল।

কিন্তু দেশপ্রিয় পার্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও, শহরের অন্য যে সব পুজো উদ্যোক্তারা নিয়ম মেনে পুজো করেননি, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, কেনই বা সেই পুজো এখনও বন্ধ হচ্ছে না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। শহরের এক পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভা এ বার এমন একটি পুজো কমিটিকে পুরস্কার দিয়েছে, যারা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পুজো করেনি।’’

শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, বিধি না মেনে পুজো করা হলে তা বন্ধ করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব। সেই প্রভাবের কাছে মাথা নত করেছেন লালবাজারের কর্তারা। ফলে শহর জুড়ে নিয়ম না মেনে পুজো করার প্রবণতা বাড়ছে। ঝাণ্ডার রঙই যে শেষমেষ পুজোর নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে এটাই এখন ‘সবচেয়ে বড় সত্যি’ মেনে নিচ্ছেন ছোট বড় সব পুজো উদ্যোক্তারাই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy