ফাইল চিত্র।
তিনটি দশক কাটিয়ে ফেলেছি বিধাননগর উপনগরীতে। সেই ’৯১ সালে এখানে থাকতে এসেছিলাম। তার পরে কোথা দিয়ে কতগুলো বছর কেটে গেল। পৃথিবীর অনেক জায়গার মতো সল্টলেকেও অনেক অনুষ্ঠান করেছি। যখন এখানে থাকতে এসেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, এখানে মিলব-মেলাব, এই ভাবনা নিয়ে থাকব।
জানি না কেন, আজ এত বছর পরেও আমার সঙ্গী এখানকার হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার। এত বড় অতিমারির সময়েও সেই কয়েকটি পরিবার কিংবা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া খুব আপন ভাবে কাউকে পেলাম না। খবরের কাগজে কিংবা সংবাদমাধ্যমে অনেক সময়ে দেখি, একাকী বসবাসকারী কোনও মানুষ হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, অথচ কেউ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি। একা থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাড়িতে চুরি-ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে। অথবা, মৃত্যুর দু’-তিন দিন কেটে যাওয়ার পরে হয়তো কেউ জানতে পেরেছেন, তাঁর প্রতিবেশী মারা গিয়েছেন। এই সব ঘটনা খুব মন খারাপ করে দেয়।
আমি বড় হয়েছি উত্তর কলকাতায়। তবে সঙ্গীত শিক্ষার সুবাদে বহু বছর ধরেই দক্ষিণ কলকাতায় অবাধ যাতায়াত।
শহরের দুই প্রান্তে কিন্তু আমি মানুষের মধ্যে এতটা উদাসীন মনোভাব দেখি না। আমি কাউকে এ সব নিয়ে দোষারোপও করি না। বরং ভাবি, সল্টলেকের মতো জায়গায় আমিই হয়তো নিজেকে অন্যের প্রতিবেশী করে তুলতে পারিনি। কিন্তু এক জন মানুষকে অন্যের প্রতিবেশী হয়ে উঠতে গেলে কী কী করতে হয়, সেটাও এখানে কেউ আমাকে বলেননি।
হয়তো সামাজিক ভাবে আমার একটা পরিচিতি রয়েছে। তাই আমাকে খুব বেশি করে অন্যের উপরে নির্ভর করতে হয় না। কিন্তু যাঁরা একেবারেই সাধারণ মানুষ, যাঁদের যোগাযোগ কম, তাঁদের জন্য তো পাড়া-প্রতিবেশীরাই বড় ভরসা।
আর দিনকয়েক পরেই এখানে পুরসভার নির্বাচন। বিধাননগর এখন কর্পোরেশনে উন্নীত হয়েছে। একটা শহর তখনই উন্নত হয়, যখন সেখানে এক জন অন্য জনের সঙ্গে নিজের চিন্তাভাবনার আদান-প্রদান করেন। তখন একটা গঠনমূলক কাজ হয়। কিন্তু তার জন্য তো একের সামনে অন্যকে নিজের মতামত প্রকাশ করতে হবে। যিনি জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হবেন, তাঁর কাছে অনুরোধ থাকবে, আর পাঁচটি কাজের মতো মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়ানোর ব্যাপারে আর একটু চিন্তাভাবনা যেন তিনি করেন।
অনেক পরিকল্পনা করে এই উপনগরী তৈরি করা হয়েছিল। কলকাতার মতো জনবহুল এলাকা নয়। কলকাতার মতো ঘেঁষাঘেঁষি করে বাড়ির গায়ে বাড়ি নেই এখানে। ঘরের জানলা খুলে দিলে আলো-বাতাস খেলে। তাই এখানে আমাদের মনের জানলাও খুলে রাখা প্রয়োজন। যাতে আন্তরিকতা, স্নেহ, সামাজিক দায়বদ্ধতার মতো বিষয়গুলি মনের ভিতরে বিকশিত হয়।
নাগরিক সমস্যা নিয়ে আমি খুব বেশি কিছু বলতে রাজি নই। কারণ জল জমা, ভাঙা রাস্তা, জলাভাব— এই ধরনের সমস্যা সব জায়গাতেই কমবেশি থাকে।
সমস্যার সমাধানও হয়। আবার সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু যে কোনও সমস্যার সমাধানেই সুস্থ মানসিকতা নিয়ে সম্মিলিত ভাবে মানুষের যোগদান প্রয়োজন। তা হলে সব সমস্যারই সমাধান হতে পারে।
লেখিকা সঙ্গীতশিল্পী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy