মীনাক্ষী ঘোষ —ফাইল চিত্র।
বিয়েতে অনুষ্ঠান হয়নি। তাই ধুমধাম করে কাল, বুধবার বিবাহবার্ষিকী উদ্যাপনের পরিকল্পনা হয়েছিল। সব প্রস্তুতিও ছিল সারা। কিন্তু টনসিলের অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে মৃত্যু হল বধূর। বাগুইআটির যে নার্সিংহোমে ওই বধূ ভর্তি ছিলেন, তার বাইরে সোমবার সকালে বিক্ষোভ দেখান তাঁর পরিজনেরা। উত্তেজনা ছড়ায় নার্সিংহোম চত্বরে।
পুলিশ জানায়, মৃতার নাম মীনাক্ষী ঘোষ (১৯)। বাগুইআটির জোড়ামন্দির এলাকার ওই নার্সিংহোমে গত বৃহস্পতিবার ভর্তি করানো হয় তাঁকে। রবিবার দুপুরে অস্ত্রোপচার হয় মীনাক্ষীর। পরে গভীর রাতে নার্সিংহোম থেকে ফোনে বাড়ির লোকজনকে জানানো হয়, মীনাক্ষীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। সোমবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকার মাঠকলের সুকান্তপল্লিতে। এ দিন নার্সিংহোমের সামনে মীনাক্ষীর পরিবারের লোকজন বিক্ষোভ দেখালে উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাগুইআটি থানার পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। পরিবারের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। যদিও তারা পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। এ দিন দুপুরে রতনবাবুর ঘাটে মীনাক্ষীর শেষকৃত্য হয়।
মৃতার স্বামী শিবশঙ্কর ঘোষ জানান, গলার ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন মীনাক্ষী। তাই স্ত্রীকে এক স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তিনি। শিবশঙ্করের কথায়, ‘‘গলার ডান দিকের অংশটি ফুলে গিয়েছিল। ডাক্তারবাবু নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে বলেন। জানান, টনসিলের অস্ত্রোপচার করতে হবে। বৃহস্পতিবার স্ত্রীকে সেখানে ভর্তি করি। রবিবার দুুপুরে অস্ত্রোপচারের পরেও ও ঠিক ছিল। রাতে খবর পাই, শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক। এত কম সময়ে কী ঘটে গেল, বুঝলাম না। চিকিৎসকও কথা বলছেন না।’’ কান্নায় ভেঙে পড়েন মীনাক্ষীর স্বামী।
টনসিলের অস্ত্রোপচারে রক্তক্ষরণ ঠেকানো জরুরি বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। কান-নাক-গলার (ইএনটি) শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘টনসিলের অস্ত্রোপচারের পরে মৃত্যুর ঘটনা আগেও ঘটেছে। ওই অস্ত্রোপচারে রক্তক্ষরণ একটি বড় বিষয়। টনসিল বাদ দেওয়ার পরে সবার আগে রক্তক্ষরণ আটকাতে হয়। বাগুইআটির ঘটনায় কী হয়েছিল, তা ময়না তদন্ত করালে স্পষ্ট হত।’’
মীনাক্ষীর মৃত্যুর ঘটনায় ওই নার্সিংহোমে এসে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান পারিষদ প্রবীর পাল। নার্সিংহোমের তরফে প্রবীর এবং সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, মীনাক্ষীর রক্তে শর্করার (সুগার) পরিমাণ হঠাৎ খুব কমে গিয়েছিল। সেপটিক শকের কারণে মৃত্যু হয় তাঁর। পরে প্রবীর বলেন, ‘‘টনসিলের অস্ত্রোপচার করাতে এসে এত অল্পবয়সি একটি মেয়ের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আমরা পরিবারের লোকজনকে বলেছিলাম, অভিযোগ দায়ের করতে। সেটা হলে ময়না তদন্ত হত। তাতে হয়তো কিছু সূত্র বেরোত। কিন্তু ওঁরা রাজি হননি।’’
কী কারণে মীনাক্ষীর মৃত্যু হল, তা জানতে ওই চিকিৎসককে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও তিনি উত্তর দেননি। মীনাক্ষী ও শিবশঙ্করের পরিবারের লোকজন জানান, বিশেষ কারণে বিয়ের অনুষ্ঠান করা যায়নি বলে দুই পরিবার ঠিক করেছিল, ৩১ জানুয়ারি ধুমধাম করে বিবাহবার্ষিকী পালন করা হবে। শিবশঙ্কর বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, স্ত্রী ভাল হয়ে বাড়ি আসবে। এক দিন বিশ্রাম নিয়ে ৩১ তারিখ অনুষ্ঠান করব। সব শেষ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy