Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

মিছিলে গিয়ে রিল-নিজস্বীতে মজে স্কুলপড়ুয়ারা, প্রশ্নে সংবেদনশীলতা

স্কুলশিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, নীতিবোধের অভাব রয়েছে বলেই অনেকের মনে এমন ভয়াবহ ঘটনাও সহমর্মিতা তৈরি করতে পারছে না।

স্কুলশিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, নীতিবোধের অভাব রয়েছে বলেই অনেকের মনে এমন ভয়াবহ ঘটনাও সহমর্মিতা তৈরি করতে পারছে না।

স্কুলশিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, নীতিবোধের অভাব রয়েছে বলেই অনেকের মনে এমন ভয়াবহ ঘটনাও সহমর্মিতা তৈরি করতে পারছে না। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩০
Share: Save:

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়া তরুণীকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গত ১৪ অগস্ট ‘রাত দখলের’ মিছিলে বাগুইআটি মোড়ে ভিড়ের মধ্যে হাঁটছে এক দল স্কুলপড়ুয়াও। তাদের অনেকের হাতেই মোবাইল। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতেই সমাজমাধ্যমের জন্য ভিডিয়ো তুলছে তারা। আপলোড করার পরে সেই ভিডিয়োর নীচে তারা লিখছে, ‘প্লিজ় আমার চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন। আমাকে টাকা রোজগার করতে সাহায্য করুন।’ শুধু রাত দখলের ওই মিছিলেই নয়, তার পর থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছে স্কুলপড়ুয়ারা। সেই সব মিছিলেও দেখা গিয়েছে, মোবাইলে ভিডিয়ো বা নিজস্বী তুলতেই বেশি মগ্ন তারা। সেই নিজস্বী বা ভিডিয়ো চটপট কিছু ক্ষণের মধ্যেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে দেওয়া হচ্ছে।

পড়ুয়াদের এই প্রবণতা দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, সত্যিই কি তারা সকলে আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামছে, না কি এর পিছনে রয়েছে শুধুই রিল, ভিডিয়ো বা নিজস্বী তোলার তাগিদ? তারা কি এই ঘটনা এবং তার ভয়াবহতার গুরুত্ব আদৌ অনুধাবন করতে পারছে? না কি স্রেফ হুজুগে মেতে সমাজমাধ্যমের ‘কন্টেন্ট’ তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে? যে ‘কন্টেন্ট’ অর্থোপার্জনের একটি পন্থাও বটে।

স্কুলশিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, নীতিবোধের অভাব রয়েছে বলেই অনেকের মনে এমন ভয়াবহ ঘটনাও সহমর্মিতা তৈরি করতে পারছে না। তাই শহরের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার বদলে মিছিলে গিয়েও তারা মেতে উঠছে রিল তৈরি বা নিজস্বী তোলায়। বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘সরকার ট্যাব কেনার জন্য যে টাকা দিচ্ছে, সেই টাকায় ট্যাব না কিনে বেড়াতে চলে যাচ্ছে অনেক পড়ুয়া। পরে ট্যাবের ভুয়ো বিল দিচ্ছে স্কুলকে। এমন ঘটনাও দেখেছি। সহপাঠিনীকে অশালীন মেসেজ পাঠিয়েছে কোনও ছাত্র, এমন অভিযোগও পেয়েছি। এরাই আবার দেখছি, আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। এদের তো নৈতিকতার বোধই তৈরি হয়নি। এরা মিছিলে গিয়ে নিজস্বী তুলবেই। রিল বানাবেই। ওরা অনেকেই জানে না, আর জি করের জন্য মিছিলে হাঁটা আর বড়দিনের পার্ক স্ট্রিটের ভিড়ে হাঁটা এক নয়।’’ সুমনা জানালেন, তাঁরা নবম শ্রেণি থেকেই পড়ুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, আর জি করের ঘটনা কতটা স্পর্শকাতর ও ভয়াবহ। পড়ুয়াদের তাঁরা বলছেন, সমাজমাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মিছিলে হাঁটার দরকার নেই। ‘ভার্চুয়াল বিপ্লবী’ হওয়ার মতো ঘটনা এটা নয়।

মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের ডিরেক্টর দেবী কর মনে করেন, অনেকেই এখন ভিড় বাড়ানোর জন্য জোর করে পড়ুয়াদের মিছিলে নিয়ে যাচ্ছেন। যা পড়ুয়াদের পক্ষে ক্ষতিকর। এই পড়ুয়ারাই মিছিলে গিয়ে নিজস্বী তুলছে বা রিল বানাচ্ছে। দেবী বলেন, ‘‘যে সমস্ত পড়ুয়া নিজেদের তাড়নায় মিছিলে যাচ্ছে, তারা কিন্তু এই ধরনের রিল বানানো বা নিজস্বী তোলা থেকে দূরে থাকছে। সমাজমাধ্যমে ছবিও দিচ্ছে না। ছেলে-মেয়েদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বোধ থাকা দরকার। নৈতিকতার বোধ তৈরি হয় স্কুল এবং বাড়ি থেকে। শুধু প্রতিবাদ মিছিলে যাওয়াটা অর্থহীন।’’

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য মনে করেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে কোনও পোস্ট দিয়ে কেউ কত লাইক ও কমেন্ট পেল, তা নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে। কোন বিষয়টি সমাজমাধ্যমে দেওয়া যায়, কোনটা দেওয়া যায় না, সেই বোধটা স্কুল থেকেই তৈরি হওয়া দরকার। আর জি করের মতো ঘটনায় নির্যাতিতার ছবি ও নাম কেন দেওয়া যায় না, তা স্পষ্ট ভাবে পড়ুয়াদের বুঝিয়ে বলেছি। আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে মিছিলে গিয়ে রিল বানানো কোনও ভাবেই সংবেদনশীলতার পরিচায়ক নয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Medical College And Hospital Incident Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy