Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Promoters

আন্তর্জাতিক মর্যাদা? তাতে কী এসে যায় প্রোমোটারদের!

সরকারি-বেসরকারি জমি দখলের ঘটনা আকছারই ঘটে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলাভূমি? প্রোমোটারদের হাত থেকে রেহাই নেই তারও।সরকারি-বেসরকারি জমি দখলের ঘটনা আকছারই ঘটে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলাভূমি? প্রোমোটারদের হাত থেকে রেহাই নেই তারও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:০৪
Share: Save:

বিধাননগর সম্প্রসারণের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা ছিল রাজ্য সরকারের। তার জন্য প্রয়োজন ছিল ৮০০ একর জমির। সেই মতো ঠিক হয়েছিল, পূর্ব কলকাতার যে জলাভূমি অঞ্চল রয়েছে, সেখানে সংশ্লিষ্ট ট্রেড সেন্টার তৈরির কাজ করা হবে। সরকারের যুক্তি ছিল, বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে ওই বাণিজ্যিক কেন্দ্র তৈরি প্রয়োজন, যেখানে একই ছাদের তলায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেন করা সম্ভব হবে। কিন্তু বেঁকে বসলেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁরা বললেন, ওই জলাভূমি তো আদতে শহরের ‘ফুসফুস’। যার মাধ্যমে শহরের যাবতীয় তরল নিকাশি বর্জ্য প্রাকৃতিক ভাবে পরিশোধিত হয়। সেই জমিতে নির্মাণ হলে তো শহরের নিকাশি ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে! শুধু তা-ই নয়, তাঁরা এটাও জানালেন, আসলে ওই বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্থাপন মোটেই সরকারের প্রস্তাব নয়। বরং এটা বাণিজ্যিক মুনাফা লাভের জন্য পরিবেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বেসরকারি উদ্যোগ! সরকার একে ‘উন্নয়ন’-এর মোড়কে ফেলে প্রচার করতে চাইছে।

তাই ওই উদ্যোগের বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে। হাইকোর্ট রায় দিল, পূর্ব কলকাতার ওই জলাভূমিতে অনুমতি ছাড়া কোনও রকম নির্মাণ বা উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে না। কিন্তু প্রথম থেকেই যার উপরে বাণিজ্যিক থাবার আগ্রাসন, তাকে আর কত দিন সেই আগ্রাসনের বাইরে রাখা সম্ভব! তাই ওই রায়ের ২৮ বছর পরে অভিযোগ উঠেছে, সেখানে ২৫ হাজার দখলদার রয়েছে! যা শুনে বিস্মিত, উদ্বিগ্ন জাতীয় পরিবেশ আদালত। কারণ, সরকারি-বেসরকারি জমি প্রোমোটারদের দখলে চলে যাওয়ার ঘটনা এ রাজ্যে হামেশাই ঘটে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলাভূমির মর্যাদাপ্রাপ্ত ‘রামসার সাইট’ পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতেও প্রোমোটার রাজ? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, হ্যাঁ। যার ফলে দুই ২৪ পরগনার ৩৭টি মৌজার ২৫৪টি ভেড়ি নিয়ে বিস্তৃত প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টরের এই জলাভূমির একাংশ ক্রমশই প্রোমোটারদের দখলে চলে যাচ্ছে। সে বেআইনি নির্মাণ ভাঙা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট, জাতীয় পরিবেশ আদালতের যত নির্দেশই থাক না কেন! এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘প্রোমোটারদের টাকার তো অভাব নেই। তাই আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে ভাঙার কাজ কখনও দেরি, কখনও আবার ভাঙাই যাচ্ছে না।’’

অথচ ২০০২ সালের ১৯ অগস্ট একে ‘ওয়েটল্যান্ডস অব ইন্টারন্যাশনাল ইম্পর্ট্যান্স’ হিসেবে রামসার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বছরে এই জলাভূমি থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার টন মাছ এবং ৫৫ হাজার টন আনাজ সরবরাহ হয় শহর ও সংলগ্ন এলাকায়। ‘ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ডস ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ (ইকেডব্লিউএমএ)-র তরফে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পরোক্ষে মেনে নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের ভাষায়, ‘বিকজ় অব ইনক্রিজ়িং প্রেশার অব আর্বানাইজ়েশন, চেঞ্জ ইন দ্য কোয়ালিটি অ্যান্ড কোয়ান্টিটি অব সলিড ওয়েস্ট অ্যান্ড সুয়ার, অ্যাজ় অলসো হিউম্যান নেগলেক্ট, দ্য সাইট ইজ আন্ডার থ্রেট ফ্রম ভেরিয়াস ডিরেকশন।’ সংস্থা সূত্রের খবর, ২০১৩ থেকে ২০১৬, এই সময়সীমায় দুই ২৪ পরগনার ছ’টি থানায় বেআইনি নির্মাণ-সহ ১৫২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আবার গত বছরই রাজ্য জানিয়েছে, বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত ৩৫৭টি ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

যদিও পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, এই সংখ্যা মোটেই বাস্তবের ঠিক প্রতিফলন নয়। কারণ ২০০৭-’১৪, এই সাত বছরে মাত্র ১৫৪টি বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ১৯৯২ সালে যে সংস্থা হাইকোর্টে মামলা করেছিল, তাদের পক্ষে পরিবেশকর্মী বনানী কক্কর বলেন, ‘‘জলাভূমি রক্ষার কাজ সরকারের। অথচ সেই কাজটা করছি আমরা।’’ মামলার আর এক আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, কলকাতা পুরসভাই ওই এলাকায় নির্মাণের নকশার অনুমোদন দিচ্ছে। অথচ ২০১১ সালে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ওই এলাকায় নতুন নির্মাণের জন্য ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) দেওয়া হবে না। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘কিন্তু ২০১৭ সালে অজানা কারণে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হল! ফলে বেআইনি নির্মাণ আগের মতোই আছে।’’

আরও পড়ুন: সোমবার থেকে ফের বাড়ছে মেট্রো

আরও পড়ুন: ওষুধ অমিল ন্যায্য মূল্যের দোকানে, ভোগান্তি

যদিও ‘ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ডস ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’-র চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের বক্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশ মতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আইনি জটিলতার জন্য দেরি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু পূর্ব কলকাতা জলাভূমি সংরক্ষণে সরকার বদ্ধপরিকর।’’ (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Promoters Wetland Illegal Construction Environment Water Bodies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy