বিধাননগরের মেলায় বন্দিদের রায়বেঁশে নাচ।নিজস্ব চিত্র
বিশ্ব জুড়ে শুধুই নৈরাজ্য আর ধ্বংস। ধৈর্য হারাচ্ছে মানুষ। এ বার নাচের মাধ্যমে তাই মানুষের কাছে শান্তির বাণী পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হল। তা-ও যে সে জায়গায় নয়, কারাগারের অন্তরালে। দমদম জেলের ১৪ জন বন্দি সাধারণের কাছে নিয়ে যাবেন সেই শান্তির বাণী। মাধ্যম— কেরলের জনপ্রিয় মার্শাল আর্ট নৃত্য, কালারিপায়ত্তু।
নাচের মাধ্যমে বন্দিদের সংশোধনের প্রয়াস নতুন নয়। দমদম জেলেই বন্দিরা এর আগে বাংলার মার্শাল আর্ট কিংবা রায়বেঁশে নাচের অনুষ্ঠান করে দর্শকদের মন জয় করেছেন। তাঁরাই এ বার অনুশীলন শুরু করেছেন কালারিপায়ত্তুতে।
বন্দিজীবন শেষ হওয়ার পরেও এই নাচের টানেই জেলে ফিরে এসেছেন বছর তিরিশের গোরাচাঁদ ঘোষ। নদিয়ার বাহাদুরপুরের ওই বাসিন্দার কথায়, ‘‘জেলের ভিতরে এই কাজটার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে জীবনটাই বদলে গিয়েছে। ছাড়া পাওয়ার পরেও নাচটা চালিয়ে যাচ্ছি। এটা জীবনের অক্সিজেন বলতে পারেন।’’ গোরাচাঁদবাবু জানালেন, ক’দিন আগেই বিধাননগরের এক মেলায় নেচে গিয়েছেন পুরনো বন্দি-বন্ধুদের সঙ্গে। এত দিন জেলের ভিতরে শিখেছিলেন বাংলার মার্শাল আর্ট। এ বার শিক্ষা নিচ্ছেন কেরলের মার্শাল আর্টে।
জেল থেকে বেরিয়ে ফের এমন সংশোধন প্রয়াসের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখার নজির এ রাজ্যে প্রথম ঘটিয়েছিলেন নাইজেল আক্কারা। তাঁর কথায়, ‘‘জেলে বন্দিরা যে জীবন কাটান, তাতে সব আছে। কিন্তু কোনও সম্মান নেই। এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেটাই পান বন্দিরা। মানুষের সম্মান তাঁরা আর হারাতে চান না।’’ বন্দিদের নিয়ে তৈরি ‘বাল্মীকি প্রতিভা’য় প্রথম অভিনয় করেন নাইজেল। ‘‘অভিনয় করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। বিশেষ করে মানুষের যে স্বীকৃতি পেয়েছি, সেটা আর হারাতে ইচ্ছে করে না। তাই বারবার ফিরে যাই’’— বলছেন তিনি। জেল-কর্তারা জানাচ্ছেন, শুধু গোরাচাঁদবাবুরাই নন। বন্দিদের যে বাইরে অনুষ্ঠান করতে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তেমন নিরাপত্তা না থাকলেও কোনও বন্দিই কখনও পালিয়ে যাননি। কেন? নাইজেলের ব্যাখ্যা, ‘‘ওঁরা জানেন, এক বার কেউ পালালে বা কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালে পুরো সংশোধনের কর্মকাণ্ডটাই বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে আখেরে ক্ষতি তাঁদেরই।’’
দমদম জেলে বন্দিদের কেরলের মার্শাল আর্টের নৃত্যকলায় তালিম দিচ্ছেন চিরন্তন ভাদুড়ী। তাঁর কথায়, ‘‘বন্দিদের জীবনটা শুধুই সাদা কিংবা কালো। এই বিষয়ের ভাবনাটা আমার মাথায় সে জন্যই এসেছে। শান্তির মধ্যে দিয়ে, আলোচনার মধ্যে দিয়েও যে জীবনের অনেক কিছুর সমাধান হতে পারে, সেটা ওঁদের জীবনবোধের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়াটা খুবই জরুরি।’’ এই যুক্তি মানছেন নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘জেলের মধ্যে আটকে থাকা মানুষগুলো সব সময় শান্তি খোঁজে। তাই ওদের এমন কিছু করা উচিত, যার সঙ্গে শান্তি বা ক্ষমার কথা বলা রয়েছে। স্বভাবতই, ওরাই যখন অন্যদের শান্তির কথা বলবে, তখন এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে অন্য মাত্রা পাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy