Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

দশভুজার আবাহনে এ বার জল সাশ্রয়ের পাঠও

নষ্ট: শ্যামবাজারে পাইপের মুখে কল নেই। পড়েই যাচ্ছে জল। শহর জুড়ে অপচয় কমাতে তাই সচেতন করা হবে পুরোহিতদেরও। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নষ্ট: শ্যামবাজারে পাইপের মুখে কল নেই। পড়েই যাচ্ছে জল। শহর জুড়ে অপচয় কমাতে তাই সচেতন করা হবে পুরোহিতদেরও। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

দুর্গাপুজো চলুক পুজোর মতো। কিন্তু পানীয় জল নষ্ট না করে। শহরে আসন্ন পুরোহিত প্রশিক্ষণ শিবিরের মূল বার্তা হতে চলেছে এটাই!

পানীয় জলের অপচয় নিয়ে সারা বিশ্বেই তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই আলোচনা থেকে বাদ পড়তে চাইছেন না পুরোহিতেরাও। কারণ, পুজোর রীতি মানতে গিয়ে অনেক পানীয় জল নষ্ট হয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তাই মানিকতলায় আগামী মাসের শেষে অনুষ্ঠিত হতে চলা পুরোহিত প্রশিক্ষণ শিবিরে দুর্গাপুজো কী ভাবে করতে হবে, তার পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি পুরোহিতদের এটাও শেখানো হবে যে, কী ভাবে জলের অপচয় না করেও পুজো করা যায়। শুধু পুরোহিতদের নয়, পুরুষ-নারী নির্বিশেষে পুজোর জোগাড়ের কাজে নিযুক্ত সকলকেই এই সচেতনতার বার্তা দেওয়া হবে। যাতে তাঁরা শিখতে পারেন, কী ভাবে পুজোর রীতি মান্য করেও জলের অপচয় আটকানো যায়।

প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর— এই তিন দিন ধরে চলবে ওই প্রশিক্ষণ শিবির। গত ১৮ বছর ধরে ওই শিবিরের আয়োজন হয়ে আসছে। দুর্গাপুজোর নানা খুঁটিনাটি ও নিয়মকানুন শেখানো হয় ওই শিবিরে। ওই প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজক সংস্থার সভাপতি নিতাই চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, পাঁচ দিনের পুজোয় প্রতিনিয়ত জলের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, পানীয় জল দিয়েই হাত-পা-মুখ ধোয়া হচ্ছে। আবার সেই জলেই বাসনপত্র পরিষ্কার করা হচ্ছে। ফলে পানীয় জলের এক বিপুল অপচয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয় পুজো চলাকালীন। নিতাইবাবুর কথায়, ‘‘এমনি গঙ্গাজলেও পুজোর প্রয়োজনীয় কাজ করা যায়। সেই গঙ্গাজলেই আনুষঙ্গিক কাজকর্ম হোক। আমরা এ-ও দেখেছি যে, পানীয় জল নষ্ট করে কোনও কোনও পুরোহিত হাত-পা ধুয়ে যাচ্ছেন তো ধুয়েই যাচ্ছেন। জলকষ্ট নিয়ে যেখানে এত কথা হচ্ছে চার দিকে, সেখানে দুর্গাপুজোর মতো একটা মহাসম্মেলন তো বাদ পড়তে পারে না! তাই পানীয় জলের অপচয় রোধের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির থেকেই বার্তা দেওয়া হবে।’’

পুজোর সময়ে পানীয় জলের অপচয়ের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন পুরোহিতদের একাংশও। তাঁরা স্বীকার করছেন, পুজোর ‘শুদ্ধতা’ রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময়েই অতিরিক্ত পানীয় জল খরচ করা হয়। শহরের এক দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িত পুরোহিত তুলসীদাস মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘পুজোর রীতি-আচার রক্ষা করার সঙ্গে কী ভাবে পানীয় জলের অপচয় আটকানো যায়, তা আমাদের দেখা উচিত।’’

পানীয় জলের অপচয় ও জল পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার বিষয়টি এ বার কাশী বোস লেনের থিমের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। পুজোর রীতিকে মাধ্যম করেই পানীয় জল অপচয়ের প্রসঙ্গটি দর্শকদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে। তার পাশাপাশি, পানীয় জলের অপচয় আটকানোর জন্য পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে আগামী মাস থেকেই শহর জুড়ে প্রচার চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। কাশী বোস লেনের পুজোকর্তা সোমেন দত্ত বলেন, ‘‘মণ্ডপে যদি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগাই, তা হলে সেই যন্ত্রের জলের পুনর্ব্যবহার দেখাতে চাই আমরা। সেই জলে পুজোর সরঞ্জাম ধোয়া ও পুজোর জায়গা পরিষ্কারের কাজটা হয়ে যাবে। তার জন্য পানীয় জলের প্রয়োজন হবে না। জল ‘রিসাইক্লিং’ করার এ রকম অনেক চিন্তাভাবনা করেছি।’’

দুর্গাপুজো এ বার অক্টোবর মাসে। কিন্তু তার আগেই পানীয় জলের অপচয় রোখার ‘কাউন্টডাউন’ শুরু হয়ে গিয়েছে!

অন্য বিষয়গুলি:

Water Priests Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy