Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Laxmi Puja 2023

লক্ষ্মীপুজোর আগে ফুলের দাম শুনে আঁতকে উঠছেন শহরবাসী

শুধু পদ্মই নয়, লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন, শুক্রবার শহরের বিভিন্ন বাজারে ফুলের দাম ছিল কার্যত আকাশছোঁয়া। লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে ফুল কিনতে এসে ক্রেতাদের মাথায় হাত!

An image of Flowers market

বিকিকিনি: লক্ষ্মীপুজোর আগে ফুল কিনতে হাজির ক্রেতারা। শুক্রবার, শিয়ালদহে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:০০
Share: Save:

মাঝারি আকৃতির একটি পদ্মের দাম শুনে আঁতকে উঠে গড়িয়াহাট বাজারের ফুলের দোকান থেকে তিন হাত দূরে সরে গেলেন স্থানীয় বাসিন্দা পিয়ালি রায়। ওই ফুলের দোকানের বিক্রেতা ভীমচন্দ্র সর্দার পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, যে আকৃতির পদ্ম ওই ক্রেতা চাইছেন, তার এক-একটি ৬০ টাকার কমে দেওয়া যাবে না। একটু ছোট আকারের হলে ৫০ টাকা। তার পরেই তাঁর স্বগতোক্তি, ‘‘দুর্গাপুজোয় তো এই পদ্মের দাম আরও বেশি ছিল। এখন সেই দাম দশ, বিশ টাকা কমেছে।’’

শুধু পদ্মই নয়, লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন, শুক্রবার শহরের বিভিন্ন বাজারে ফুলের দাম ছিল কার্যত আকাশছোঁয়া। লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে ফুল কিনতে এসে ক্রেতাদের মাথায় হাত! এক জন তো বলেই ফেললেন, ‘‘ফুলের পাপড়িতে হাত দিলে তো রীতিমতো ছেঁকা লাগছে।’’ মানিকতলা বাজারে এক-একটি জুঁইয়ের মালা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায়। গাঁদা ফুলের একটি মালার দামই ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কুচো ফুল হিসাবে দোপাটি কিনতে গেলেও মধ্যবিত্তের পকেটে টান পড়তে পারে। এক কেজি কুচো দোপাটির দামই ২০০ টাকা। রজনীগন্ধার মালা ৬০ টাকা। এ রাজ্যের একটি গোলাপের দাম ১২ টাকা, বেঙ্গালুরুর একটি গোলাপের দাম ২৫ টাকা। ভীমচন্দ্রের কথায়, ‘‘বৃষ্টি ঠিক সময়ে না হওয়ায় ফুলের ফলন কম হয়েছে। তাই জোগানও কম। ফুলের দাম বাড়ার পিছনে এটা যেমন একটা কারণ, অন্য কারণ হল, অনেক হাত ঘুরে ফুল আমাদের মতো খুচরো বিক্রেতার হাতে আসছে। আমরা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ফুল কিনতে পারলে হয়তো দামটা কিছুটা কম হত।’’

বাড়ির লক্ষ্মীপুজোর জন্য ফুল কিনতে মানিকতলা বাজারে এসে শ্রেয়সী চৌধুরী বললেন, ‘‘ফুলের জন্যই লক্ষ্মীপুজোর বাজেট বেড়ে গেল। ফুল তো নয়, সোনা কিনছি যেন!’’ ওই বাজারের ফুল বিক্রেতা অলোক দাস বললেন, ‘‘দুর্গাপুজোয় ১০৮টি পদ্ম লাগে। লক্ষ্মীপুজোয় পদ্মের এত চাহিদা থাকে না। তবু পদ্মের দাম দুর্গাপুজোর তুলনায় বিশেষ কমল না। বাঙালি মধ্যবিত্ত ফুলের চড়া দামটা লক্ষ্মীপুজোয় বেশি করে টের পাচ্ছে। কারণ, ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপুজো হয়।’’

‘সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বললেন, ‘‘এ বছর বর্ষা দেরিতে এসেছে। পদ্ম বর্ষার ফুল। পদ্মের চাষ শুরু হতেও তাই দেরি হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে পদ্মের ফলন এ বার কম। বেশির ভাগই হিমঘরের পদ্ম। টাটকা পদ্ম খুব কম। কিছু পদ্ম ওড়িশা, বেঙ্গালুরু থেকে আসছে। কিন্তু তাতেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।’’ নারায়ণ জানালেন, এ বার অক্টোবরে নিম্নচাপে টানা বৃষ্টি হওয়ায় ফুলের চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, নদিয়ার মতো ফুল উৎপাদক জেলাগুলিতে। তাই সার্বিক ভাবেই জোগান কম।

মল্লিকঘাট ফুল বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ওই ফুল বাজার-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট, দেউলিয়ার মতো পাইকারি ফুল বাজারে এ দিন রজনীগন্ধা ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অপরাজিতা ৩০০ টাকা, লাল গাঁদা ৮০ টাকা, হলুদ গাঁদা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। পদ্ম বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা প্রতিটি। পাইকারি বিক্রেতাদের মতে, পাইকারি বাজারেই যখন দাম এত বেশি, তখন খোলা বাজারে দাম তো বাড়বেই। ফুল বিক্রেতারা মনে করছেন, শনিবারও ফুলের দাম চড়া থাকবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE