প্রেস ক্লাবের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
দিল্লি-সহ দেশ জুড়ে সাংবাদিকদের বাড়িতে পুলিশি হানা ও হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি মতো বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করল কলকাতার প্রেস ক্লাব। মিছিলে অংশ নেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস শূর এবং সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক-সহ অন্যান্য বর্ষীয়ান সাংবাদিকেরা।
সাংবাদিকদের উপর ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তুলে মঙ্গলবারই তার তীব্র নিন্দা করেছিল প্রেস ক্লাব। বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবের সদস্যেরা গান্ধী মূর্তির পাদদেশ থেকে মিছিল করেন। মিছিল মেয়ো রোড, জওহরলাল নেহরু রোড হয়ে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত গিয়েছে। সাংবাদিকদের আটক, গ্রেফতার এবং ইউএপিএ-র মতো দমনমূলক আইন প্রয়োগের নিন্দা করেছে এসইউসিও। প্রতিবাদে পথে নেমেছে তারাও। ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির মোড়ে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে এসইউসি-র ডাকে। বিক্ষোভে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কুশপুতুলে আগুন দেন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, কলকাতা জেলা সম্পাদক সুব্রত গৌড়ী।
গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে চতুর্থ স্তম্ভকে রক্ষা করার জন্য সব নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে ‘শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’ও। ওই মঞ্চের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা লক্ষ করছি, সরকার সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে তাদের তোষামোদকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চায়। সরকারি কাজের কোনও ত্রুটি বা বিরূপ সমালোচনা তারা একেবারেই সহ্য করতে চায় না। অথচ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নষ্ট হলে অথবা ধ্বংস হলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে, প্রগতি রুদ্ধ হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার ও গণতন্ত্রকে হত্যা করে যারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়, তারাই সর্বাগ্রে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে।’’
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার সিজিও কমপ্লেক্স (ইডির দফতর) অভিযান করেছে বামেরা। উল্টোডাঙার হাডকো মোড় থেকে মিছিল করে ইডির দফতরের সামনে যান সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিমেরা। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও শাসক তৃণমূলের দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। এরই সঙ্গে দিল্লিতে সাংবাদিকদের উপর ‘দমনপীড়ন’ নিয়েও সরব হয়েছে বামেরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোর থেকে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল ‘নিউজ়ক্লিক’ সংবাদ পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকদের বাড়িতে হানা দিয়েছিল। তার পরে পোর্টালের দফতর সিল করে দেওয়া হয়। দিল্লি পুলিশ ‘নিউজ়ক্লিক’-এর বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র বিভিন্ন ধারায় মামলা করেছে। অভিযোগ, চিনের সংস্থা ‘নিউজ়ক্লিক’-এ লগ্নি করেছে। সেই টাকা নিয়ে ওই সংবাদ পোর্টাল চিনের হয়ে প্রচার চালিয়েছে। ‘নিউজ়ক্লিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ এবং সংস্থার হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের প্রধান অমিত চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার সকালে তাঁদের দিল্লির আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমের উপরে হামলা, সাংবাদিকদের বাড়িতে হানার ঘটনায় বুধবারই দেশের সাংবাদিকদের ১৬টি সংগঠন দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে চিঠি লিখে তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া, ডিজিপাব নিউজ় ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন, ইন্ডিয়ান উওমেন প্রেস কোরের মতো সংগঠনগুলি এই চিঠিতে জানিয়েছে, সাংবাদিকতাকে সন্ত্রাসবাদ বলে কাঠগড়ায় তোলা যায় না। দেশের বড় সংখ্যক সাংবাদিক শাস্তির ঝুঁকির মুখে কাজ করছেন। সংবিধানের কাছে সকলে দায়বদ্ধ— এই মৌলিক সত্য নিয়ে বিচারবিভাগকে ক্ষমতার মোকাবিলা করতে হবে। প্রধান বিচারপতির কাছে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলির দাবি, সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন-ল্যাপটপ আটক বন্ধ করতে হবে। দেশ-বিদেশের কিছু ঘটনা তুলে ধরা নিয়ে সরকারের আপত্তি রয়েছে বলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা বাকস্বাধীনতার পক্ষে ঝুঁকির কারণ। সাংবাদিকরা আইনের ঊর্ধ্বে নন। কিন্তু তাঁদের ভয় দেখানো সমাজের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় প্রভাব ফেলে। বুধবারই দিল্লির প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় জমায়েত হয়ে সাংবাদিকরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন। যন্তর মন্তরে বেশ কিছু বামপন্থী সংগঠনও বিক্ষোভ দেখায়।
‘নিউজ়ক্লিক’র তরফেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চিনের কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার নির্দেশে তারা কোনও সংবাদ প্রকাশ করেনি। চিনের হয়ে তারা প্রচারও চালায়নি। বিদেশ থেকে সংস্থায় যে লগ্নি এসেছে, তা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy