ব্যবস্থা: (বাঁ দিকে) রাজ্যে বার্ড ফ্লু-র প্রভাব না থাকলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আলিপুর চিড়িয়াখানার পাখির খাঁচার সামনে চলছে জীবাণুনাশের কাজ। (ডান দিকে) নিউ মার্কেটে মুরগির দোকানে ক্রেতারা। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ ও নিজস্ব চিত্র
দেশের ন’টি রাজ্যে বার্ড ফ্লু-এ আক্রান্ত হয়ে প্রায় দেড় হাজার পাখির মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় পশু পালন ও ডেয়ারি মন্ত্রক প্রতিটি রাজ্যের উপরে কড়া নজর রাখছে। বার্ড ফ্লু-র প্রভাব পড়েছে এ রাজ্যেও। ‘পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশন’-এর সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি সোমবার বলেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ায় গত দু’দিনে পশ্চিমবঙ্গে মুরগির মাংসের বিক্রি ২০ শতাংশ কমেছে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের একটাই আবেদন, গুজবে কান দেবেন না। গুজবের কারণেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। যার ফলে মুরগির মাংসের বিক্রি কমছে।’’ এ রাজ্যে বার্ড ফ্লু ঠেকাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে কলকাতা-সহ প্রতিটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার উত্তর থেকে দক্ষিণ, কলকাতার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেল, মুরগির ব্যবসায় এখনও বার্ড ফ্লু-র আঁচ সে ভাবে লাগেনি। তবে বিক্রেতারা বেশ আতঙ্কে রয়েছেন। নিউ মার্কেটের মুরগি বিক্রেতা তথা ‘নিউ মার্কেট মুরগি ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ মুসতাকিম বললেন, ‘‘সাধারণ মানুষ এখনও মুরগির মাংস কিনতে আসছেন ঠিকই, তবে বিভিন্ন রাজ্যে যে হারে বার্ড ফ্লু বাড়ছে, তাতে আমাদের চিন্তাও বাড়ছে।’’ একই কথা মানিকতলা বাজারের মুরগি বিক্রেতা বিজয় সাউয়ের। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এখানে আঁচ না পড়লেও একটা চিন্তা তো রয়েছেই। আগামী দিনগুলিতে কী হয়, সেটাই দেখার!’’ গড়িয়াহাট বাজারের মুরগির মাংস বিক্রেতা বেলু ঘোষের বক্তব্য, ‘‘গত দু’দিনে আমার দোকানের বিক্রি দশ শতাংশ কমেছে। অন্যান্য রাজ্যে প্রতিদিন যে হারে বার্ড ফ্লু বাড়ছে, তাতে আমরা ঘোর চিন্তায় রয়েছি।’’
বরাহনগরের মাংস বিক্রেতা পলাশ সাহার আবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে মুরগির বিশাল খামার রয়েছে। পলাশবাবুর কথায়, ‘‘বার্ড ফ্লু ঠেকাতে মুরগির খামারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করছি। তবে আতঙ্ক তো হচ্ছেই। ক্রেতারা এর পরে কী করবেন, সেটাই ভাবার বিষয়।’’
রাজ্যের প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রের খবর, প্রতি সপ্তাহে এ রাজ্যে দু’কোটি পঞ্চাশ লক্ষ কেজি মুরগির মাংস প্রয়োজন। প্রতিদিন ডিম দরকার হয় তিন লক্ষ। মদনমোহনবাবুর কথায়, ‘‘স্রেফ গুজবের কারণে গত দু’দিনে মুরগির মাংসের পাশাপাশি ডিম বিক্রিও ২০ শতাংশ কমেছে।’’
এখনও পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ, কেরল, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, গুজরাট ও মহারাষ্ট্র থেকে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও হাঁস, মুরগি ও কাকের মাধ্যমে এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। অন্যান্য রাজ্যে বার্ড ফ্লু ছড়ালেও তার জন্য এ রাজ্যের মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। সিদ্ধার্থবাবুর কথায়, ‘‘বার্ড ফ্লু পাখিদের ইনফ্লুয়েঞ্জা। ১৩১ ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা পাখিদের দেহে ছড়াতে পারে। এ বার যে দু’টি ভাইরাস ছড়িয়েছে, সেগুলি হল, ‘এইচফাইভএনএইট’ এবং ‘এইচফাইভ এনওয়ান’। তবে এই ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়ায় না। রাজ্যবাসী নির্ভয়ে মুরগির মাংস খান। গুজবে কান দেবেন না।’’ তবে অন্যান্য রাজ্যের বার্ড ফ্লু-র আঁচ যাতে এ রাজ্যে না লাগে, তার জন্য মুরগি ও পাখির খামারগুলিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিদ্ধার্থবাবু।
তাঁর কথায়, ‘‘খামারগুলিতে জৈব সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত পরিষ্কার করে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। খামার চত্বরে চুন ছড়ানোর পাশাপাশি এক শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। প্রতিটি খামারের প্রবেশদ্বারে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের ‘ফুটবাথ’ ব্যবহার করতে হবে।’’ সিদ্ধার্থবাবুর পরামর্শ, খামারে পাখি বা মুরগির অস্বাভাবিক মৃত্যু হলেই অবিলম্বে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মৃত পাখিটিকে মাটির অন্তত তিন ফুট নীচে পুঁতে দিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy