Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

মমতার ছোঁয়া নেই, আলুর দামে দ্বিগুণ বৃদ্ধি চার মাসে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জ্যোতি আলুর দাম বেঁধে দিয়েছিলেন কেজি প্রতি ১৩ টাকায়। তিন-চার মাসের মধ্যে সেই আলুর দাম গিয়ে দাঁড়াল কোথাও ২৩ টাকা, কোথাও ২৪। কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের বক্তব্য, ভিন্ রাজ্যের জোগানের চাপের জন্য আলুর দাম ২৩ টাকার থেকে কম করা কার্যত অসম্ভব। পাশাপাশি তাঁর দাবি, এখনও খোলা বাজারে ১৫ টাকা কেজি দরে আলু অমিল নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১৪
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জ্যোতি আলুর দাম বেঁধে দিয়েছিলেন কেজি প্রতি ১৩ টাকায়। তিন-চার মাসের মধ্যে সেই আলুর দাম গিয়ে দাঁড়াল কোথাও ২৩ টাকা, কোথাও ২৪। কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের বক্তব্য, ভিন্ রাজ্যের জোগানের চাপের জন্য আলুর দাম ২৩ টাকার থেকে কম করা কার্যত অসম্ভব। পাশাপাশি তাঁর দাবি, এখনও খোলা বাজারে ১৫ টাকা কেজি দরে আলু অমিল নয়। কারণ, সরকার সরাসরি গুদাম থেকে কিনে আলু বিক্রি করছে। ফলে সরকারের পক্ষে ১৫ টাকা করে আলু বিক্রি করা সম্ভব। যদিও শুক্রবার কলকাতার বড় বড় তিন-চারটে বাজারে ঘুরেও ১৫ টাকা দরের আলুর খোঁজ মেলেনি।

প্রশ্ন উঠেছে, ১) মন্ত্রীর বলা ওই দামের আলু কোথায় মিলবে? ২) ভিন্ রাজ্যে পাঠানোর জন্য এখানে যে ২৩ টাকা কেজি-র নীচে আলু দেওয়া সম্ভব নয়, তা কি মুখ্যমন্ত্রী জানেন? ৩) আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এ বার মুখ্যমন্ত্রী কি কোনও নির্দেশ দেননি?

কৃষি বিপণন মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আলুর এই দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে অবহিত। কী ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে আগামী ১১ ডিসেম্বর বৈঠক হবে।” যার অর্থ, বাজারে আলুর দাম বেড়ে গিয়েছে জেনেও সরকার তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সময় নিচ্ছে।

মাস চারেক আগেও আলুর দাম যখন ক্রমশ বেড়ে চলছিল, তখন তা নিয়ন্ত্রণ করতে মুখ্যমন্ত্রী সোজা পাইকারি বাজারে হানা দিয়েছিলেন। বাজারের নজরদারির জন্য টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিলেন। এমনকী, নিজের রাজ্যের মানুষকে আলু খাইয়ে ভিন্ রাজ্যে আলুর গাড়ি যাওয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন তিনি। ১৩ টাকা দামের সরকারি আলু মিলনমেলায় গুদামে রেখে বিক্রি করা হয়েছে বিভিন্ন বাজারে। মুখ্যমন্ত্রীর এত সবের পরেও আলুর দাম বাজারে কমল তো না-ই, বরং নভেম্বরের শেষে তা বেড়ে দাঁড়াল ২৪ টাকায়। যা গত কয়েক বছরে কখনও হয়নি। গত বছরেও এই সময়ে খুচরো বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ছিল কেজি প্রতি ১৭ টাকার মধ্যে।

এই পরিস্থিতিতে টাস্ক ফোর্স আলাদা করে কোনও নজরদারি করছে? টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা নজরদারি আছে বলে জানালেও বাস্তবে আলু ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতারা, সকলেই জানাচ্ছেন তেমন কোনও নজরদারি চোখে পড়েনি। যদিও টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবি কোলে বলেন, “এ বার পরিস্থিতি একটু আলাদা। এখন পুরনো আলু শেষ হয়ে আসছে। অন্য দিকে নতুন আলু এখনও বাজারে আসেনি। তাই দামটা বেড়ে গিয়েছে। নতুন আলু বাজারে এলেই দাম অনেকটা কমে যাবে।” টাস্ক ফোর্সের আর এক সদস্য তথা মানিকতলা বাজারের সম্পাদক প্রভাত দাস বলেন, “আমরা নতুন আলুর দিকে তাকিয়ে আছি। পঞ্জাব থেকে নতুন আলু আসে। সেটাও এখনও আসেনি।”

শোভাবাজারের আলু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এক দিকে যেমন নতুন আলু আসেনি, তেমন আবার আলুর কোল্ড স্টোরেজ বন্ধের সময়ও হয়ে এল। প্রতি বছরই ডিসেম্বর মাসে আলুর কোল্ড স্টোরেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই কোল্ড স্টোরেজের সব বরফ গলিয়ে গুদাম সাফ করে কয়েক দিনের জন্য বন্ধ রেখে ফের আলু মজুত করা শুরু হয়। পোস্তা বাজারের এক আড়তদার বরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ বার কোল্ড স্টোরেজ যদি পয়লা ডিসেম্বরই বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে গোটা ডিসেম্বর জুড়েই আলুর চাহিদা খুব বেড়ে যাবে। তখন দামও অনেকটা বাড়ার আশঙ্কা। ভিন্ রাজ্য থেকে আলু আনতে হবে। নতুন আলু না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।” বরুণবাবুর মতে কোল্ড স্টোরেজ যদি ১৫ ডিসেম্বর নাগাদ বন্ধ হয়, তা হলে হয়তো দাম বাড়লেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে।

কলেজ স্ট্রিট বাজারের একাংশ আবার অভিযোগ করেছে, নভেম্বরের শেষে পুরনো আলু শেষ হয়ে এলেও আলুর জোগান কম হওয়ার কথা নয়। কিছু কিছু কোল্ড স্টোরেজ মালিক ইচ্ছা করে আলু মজুত রাখছেন অতিরিক্ত লাভের আশায়। কারণ, ডিসেম্বর মাসে কোল্ড স্টোরেজ বন্ধ হয়ে গেলে ভিন্ রাজ্যে আরও বেশি করে অতিরিক্ত দামে আলু পাঠাতে পারবেন। যার জেরে ফের রাজ্যে আলুর জোগান কমে যাবে। ব্যবসায়ীদের এক অংশের অভিযোগ, সরকার যদি এই সব বিষয়ে নজর না দেয়, তবে নতুন আলু বাজারে এলেও দাম কতটা কমবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy