Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Entally Police Station

দেড় বছর আগে মৃত শিশুর নামে ‘নিখোঁজের’ নোটিস থানাতেই!

নোটিস-বোর্ডের ‘নিখোঁজ’ শিশুটির নাম আয়ান মল্লিক। এক বছর সাত মাসের আয়ান বাবা-মায়ের সঙ্গে তিলজলা থানা এলাকায় থাকত। সদ্য দৌড়তে শেখা আয়ান বছর দেড়েক আগে হঠাৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়।

এন্টালি থানার নিখোঁজের নোটিশ বোর্ডে শিশুর ছবি।

এন্টালি থানার নিখোঁজের নোটিশ বোর্ডে শিশুর ছবি। —নিজস্ব চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৯
Share: Save:

শিশুর রঙিন ছবির উপরে বড় বড় হরফে ইংরেজিতে লেখা, ‘মিসিং বয়’। সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর। থানার বারান্দায় টাঙিয়ে রাখা নোটিস-বোর্ডে আরও নিখোঁজের ভিড়ে জ্বলজ্বল করছে সেই ছবি। অথচ, যোগাযোগের সেই নম্বরে ফোন করলে বলা হচ্ছে, ‘‘ছেলে তো বেঁচে নেই! দেড় বছর আগেই মৃত্যু হয়েছে।’’ তার পরেও কী ভাবে এন্টালি থানার নিখোঁজের নোটিস বোর্ডে থাকে সেই শিশুর ছবি? এর উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না শিশুটির বাবা-মা।

নোটিস-বোর্ডের ‘নিখোঁজ’ শিশুটির নাম আয়ান মল্লিক। এক বছর সাত মাসের আয়ান বাবা-মায়ের সঙ্গে তিলজলা থানা এলাকায় থাকত। সদ্য দৌড়তে শেখা আয়ান বছর দেড়েক আগে হঠাৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। শুরু হয় খোঁজ। কোথাও কোনও খোঁজ না পেয়ে তিলজলা থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন বাবা। শিশুটির মা নুরজাহান খাতুনের কথায়, ‘‘খুব বেশি দূরে ও যেত না। যে যে জায়গায় যেতে পারে, সব জায়গাতেই খোঁজখবর করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও হদিস না পেয়ে থানায় জানাই।’’ খোঁজ মিলেছিল চার দিন পরে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি খাল থেকে উদ্ধার হয় আয়ানের দেহ। প্রাথমিক ভাবে খালের জলে পড়ে গিয়ে ডুবে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারকে জানিয়েছিল পুলিশ। পুলিশি প্রক্রিয়া সেরে শিশুর শেষকৃত্য করে পরিবার।

দেড় বছর আগে মৃত সেই শিশু এখনও কী ভাবে থানার ‘নিখোঁজের’ বোর্ডে থাকে? লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, নিখোঁজের কোনও অভিযোগ থানায় এলে পার্শ্ববর্তী থানাগুলিকে জানানো হয়। ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি পরেও ‘নিখোঁজের’ কোনও সন্ধান না পাওয়া গেলে তার পরে সমস্ত থানার কাছে ছবি-সহ বার্তা যায়। সেই সঙ্গে থানার তরফে নোটিস-বোর্ডে সেটি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অন্য কোনও থানা থেকে নিখোঁজের বার্তা এলেও এই ভাবে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি করছে এন্টালি থানা। আয়ানের ক্ষেত্রেও সে ভাবেই ছবি-সহ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে আর তা খোলা হয়নি বলে মনে করছেন পুলিশকর্মীদের একটি অংশ।

এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে তদন্তের পরবর্তী গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে থানা কেন খোঁজখবর রাখবে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। লালবাজারের পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, বিষয়টি এমন হওয়া উচিত নয়। এক কর্তার কথায়, ‘‘কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

তবে আয়ানের বাবা হীরা মল্লিক দেড় বছর আগের ভয়ঙ্কর স্মৃতি ভুলতে চাইছেন। কোনও ঝামেলায় পড়ায় ভয়ে এ নিয়ে বেশি কথা বলতেও নারাজ তিনি। জানা গেল, আয়ান চলে যাওয়ার পরে একটি কন্যাসন্তান হয়েছে ওই দম্পতির। তার বয়স এখন চার মাস। আপাতত তাকে আঁকড়ে বাঁচতে চাইছেন হীরা ও তাঁর স্ত্রী। হীরার কথায়, ‘‘ছেলে হারানোর স্মৃতি মনে করতে চাই না। এই মেয়েই আমাদের সব। ওকে নিয়েই বাঁচতে চাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Entally Police Station child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy