Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ganges

গঙ্গারতির জন্য বাছাই দুই ঘাট, বাকিগুলির দুর্দশা কাটবে কবে

ঘাট পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকা পুরকর্মীরা জানাচ্ছেন, সব চেয়ে খারাপ অবস্থা নিমতলা ঘাট লাগোয়া ভূতনাথ মন্দির থেকে বাগবাজার মায়ের ঘাট পর্যন্ত অংশের।

অযত্ন: আবর্জনায় ভরে রয়েছে নিমতলা ঘাট। ছবি: রণজিৎ নন্দী

অযত্ন: আবর্জনায় ভরে রয়েছে নিমতলা ঘাট। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:০৮
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নিয়মিত গঙ্গারতি করার মতো জায়গা বাছার জন্য শহরের গঙ্গার ঘাটগুলিতে পরিদর্শন করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত মিলেনিয়াম পার্কের তৃতীয় ‘ফেজ়ের’ একটি ঘাট এবং বাজেকদমতলা ঘাটের নাম প্রস্তাব করা হলেও উত্তর থেকে মধ্য কলকাতার ঘাটগুলি পরিদর্শন করতে গিয়ে রীতিমতো কালঘাম ছুটেছে পুরকর্তাদের।

অভিযোগ, সব চেয়ে খারাপ অবস্থা উত্তরের ঘাটগুলির। পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে তো বটেই, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ওই সমস্ত ঘাটে যে ভাবে অসামাজিক কাজকর্মের আসর বসে, তা নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগে বিদ্ধ হতে হয়েছে পুরকর্মীদের। প্রশ্ন উঠেছে, গঙ্গারতির জন্য কোনও একটি ঘাট বাছাই করে সৌন্দর্যায়ন করা হলেও বাকি ঘাটগুলির পরিস্থিতির উন্নতি হবে কবে?

চলতি মাসেই এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শহরের গঙ্গার ঘাটগুলি খারাপ হয়ে গিয়েছে। পুরসভা কেন এটা দেখে না? মন্ত্রী, সেক্রেটারি, সরকার বদল হয়, কিন্তু নীতির তো বদল হয় না। ঘাটগুলির বিষয়ে নজর দেওয়া হবে না কেন? কেন আমায় বলতে হবে?’’

এর পরেই শহরের গঙ্গার ঘাটগুলি পরিদর্শনে বেরোন পুরকর্তারা। যান মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। বেশ কিছু জায়গায় জঞ্জাল সাফ করিয়ে আলো লাগানোর বন্দোবস্ত করা হয়। হকারদের প্লাস্টিকের ছাউনি খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি, যেখানে যা মেরামতি প্রয়োজন দ্রুত করতে বলা হয়। সেই সূত্রেই সামনে আসে ঘাটের করুণ পরিস্থিতির কথা।

ঘাট পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকা পুরকর্মীরা জানাচ্ছেন, সব চেয়ে খারাপ অবস্থা নিমতলা ঘাট লাগোয়া ভূতনাথ মন্দির থেকে বাগবাজার মায়ের ঘাট পর্যন্ত অংশের। এক পুরকর্মীর দাবি, ‘‘সন্ধ্যা হলেই সেখানে নেশার আসর বসে। চায়ের দোকানেও গাঁজা বিক্রি হয়। মোটরবাইকের দাপটও চোখে পড়ার মতো। একটি বাইকে তিন জন, কখনও চার জন হেলমেট ছাড়াই সওয়ার হয়ে রেস চলে। কখনও বা ঘাটের ধারে রাস্তা আটকে মোটরবাইক, গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে বসানো হয় নেশার আসর।’’ আর এক পুরকর্মীর কথায়, ‘‘ওই এলাকার চক্ররেল বিশেষ ব্যবহার হয় না। রেললাইনের উপরেও তাস-জুয়ার ঠেক বসতে দেখেছি। সন্ধ্যা ৭টা-৮টার পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। প্রায়ই দু’দলের হাতাহাতি, মারামারির অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়েরা বলেছেন, পুলিশে অভিযোগ করেও লাভ হয় না। সন্ধ্যা হলেই ভয়ে বাড়ি তেকে বেরোতে পারেন না ঘাট লাগোয়া কয়েকটি বাড়ির বাসিন্দারা।’’

উত্তর কলকাতার এই অংশটি জোড়াবাগান, শ্যামপুকুর এবং উত্তর বন্দর থানার অন্তর্গত। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারেরা জানাচ্ছেন, ওই সমস্ত ঘাট সংলগ্ন রাস্তায় প্রতি রাতেই আলাদা নজরদারি দল ঘোরে। কিন্তু ধরে এনে ব্যবস্থা নিলেও পরিস্থিতির বদল হয় না। এক পুলিশ অফিসারের মন্তব্য, ‘‘গাঁজার কেস দিলেও শিক্ষা হয় না। বেরিয়ে এসে আবার যে কে সে-ই! এমন অনেক গাড়ি, লরি ধরা হয়েছে, যেগুলি অসামাজিক কাজকর্মের প্রধান জায়গা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। কিন্তু এমন মামলা বেশি দূর যায় না। ধরে এনে লাভ হয় না বলেই বুঝিয়ে কাজ মেটানোর চেষ্টা করা হয়।’’

ঘাট পরিদর্শনে যাওয়া মেয়র পারিষদ তারক সিংহ বললেন, ‘‘গঙ্গারতির জন্য এমন জায়গা খোঁজা হচ্ছে, যেখানে আরতির পাশাপাশি বিনোদন পার্কও গড়ে তোলা যাবে। আলোর খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জায়গার পাশাপাশি ফুড কোর্ট করা যাবে। এর জন্য বন্দরের অধীনে থাকা মিলেনিয়াম পার্কের অংশটি আদর্শ। ওই জায়গাটি সাজানোর প্রস্তাব দিয়েছি। তবে বাকি ঘাটগুলির খুব খারাপ অবস্থা। সেগুলি নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে পুলিশ এবং পুর কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দেব।’’

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলার আগে কেন এই দিকে নজর দেওয়া হয়নি? উত্তর নেই পুর প্রশাসনের কারও কাছেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Ganges Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy