নাকাল: এ ভাবেই যানজটে জেরবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
কয়েক দিন আগেই স্কুলে যাওয়ার পথে রেললাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে দাদু-নাতনির। রেল তখন বলেছিল, দমদম-বেলঘরিয়া স্টেশনের মাঝে রেললাইন পারাপার না করে বরাহনগরের বাসিন্দারা ঘুরপথে যাতায়াত করুন। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই ঘুরপথে সব থেকে বড় ‘কাঁটা’ নোয়াপাড়া আন্ডারপাস!
যেখানে বর্ষায় প্রায় গোটা আন্ডারপাসই জলে ডুবে থাকে। আর গরম ও শীতকালে সঙ্কীর্ণ আন্ডারপাসে সব সময়েই লেগে থাকে যানজট। ফুটপাত না থাকায় সেখানে হাঁটাচলা করারও কোনও উপায় নেই। অগত্যা সারা বছরই লোকজন আন্ডারপাস ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে রেললাইন পারাপার করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘কেউ কি আর সাধ করে বিপদের মধ্যে যেতে চায়? উপায় নেই বলেই বাধ্য হয়ে লাইন পেরোতে হয়।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, একে তো আন্ডারপাসটি চলাচলের যোগ্য নয়। তার উপরে রেললাইন পারাপার না করে বিকল্প রাস্তা ধরে যাতায়াত করলে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। তাতে সময়ও অনেক বেশি লাগে। লাইন পেরিয়ে সহজেই যেখানে পৌঁছনো যায়, ঘুরপথে সেখানে যেতে দু’টি অটো পাল্টাতে হয়। রেললাইনের দু’পারের মানুষের সুষ্ঠু যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে বহু বার রেলকে জানানো হলেও এখনও কিছু হয়নি বলেই দাবি স্থানীয় সাংসদ ও কাউন্সিলরের।
দমদম ও বেলঘরিয়া স্টেশনের মাঝের ওই অংশে রেললাইনের পূর্ব দিকে রয়েছে বরাহনগর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ নোয়াপাড়া কলোনি, হরেকৃষ্ণ পল্লি, দু’নম্বর গভর্নমেন্ট স্কিম কলোনি, মনোরঞ্জন রায় নগর কলোনি ও ডাক্তারবাগান এলাকা। সেখানে থাকেন প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা। রেললাইনের পশ্চিম দিকে রয়েছে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপল্লি, শীতলামাতা লেন, মৎস্যজীবী কলোনি, এক নম্বর ওয়ার্ডের নিরঞ্জন সেন নগর ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তালবাগান এলাকা-সহ বরাহনগরের বাকি সব ওয়ার্ড। সে দিকে ছ’টি হাইস্কুল, পাঁচটি প্রাইমারি স্কুল ও দু’টি কলেজ রয়েছে। রয়েছে বাজার, হাসপাতাল এবং বি টি রোড। ফলে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিত্য প্রয়োজনে রেললাইনের পশ্চিম দিকে আসতে হয়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা রেললাইন না পেরোলে অনেকটা ঘুরে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া ৩৪সি বাসস্ট্যান্ডের কাছে থাকা আন্ডারপাসের নীচ দিয়ে পশ্চিম দিকে আসতে হয়। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল, আন্ডারপাসটির উচ্চতা যেমন কম, তেমনই সেটি সঙ্কীর্ণ। যানজট লেগেই রয়েছে। পথচারীরা জানান, একটু বড় গাড়ি ঢুকলেই সেগুলি আন্ডারপাসে আটকে যায়। আবার মুখোমুখি কোনও গাড়ি চলে এলেও যানজট তৈরি হয়। পথচারীদের হাঁটার কোনও জায়গাই থাকে না।
ওই রাস্তা দিয়েই বরাহনগর থেকে নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত চারটি রুটের অটো চলে। পুরসভার জঞ্জাল বোঝাই গাড়ি ওই আন্ডারপাস দিয়েই প্রমোদনগর ভাগাড়ে যাতায়াত করে। পাশে থাকা বাগজোলা খালের জলস্তর ও আন্ডারপাসের রাস্তার উচ্চতা প্রায় সমান। ফলে বর্ষার সময়ে খালের জল যেমন জমা হয়, তেমনই বৃষ্টির জলও জমে। পাম্প চালিয়ে রাস্তার জমা জল কমানো সম্ভব হলেও রোদ না উঠলে আন্ডারপাস জলমুক্ত হয় না বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের।
১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অঞ্জন পাল বলেন, ‘‘আন্ডারপাসটি আরও চওড়া করতে এবং সেটির উচ্চতা বাড়াতে রেলকে বহু বার বলেছি। ওভারব্রিজ করার জন্যও বলেছিলাম। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’ বহু বার জানানোর পরেও কোনও স্থানীয় সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি ফের সংসদে তুলবেন বলে জানান দমদমের সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘‘রেল যে কোনও কাজেই দেরি করে। ওই আন্ডারপাসের বিষয়ে বহু বার বলেছি। আবার বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy