জল-যন্ত্রণা: মহেশতলার চন্দননগর এলাকার দক্ষিণ মোল্লাপাড়ায় পুকুর উপচে ভেসে গিয়েছে রাস্তা। গত ছ’মাস ধরে এ ভাবেই জমা জল ঠেলে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র।
বর্ষা বিদায় নিয়েছে বহু দিন। কিন্তু এখনও জমা জলে পা ডুবিয়ে যাতায়াত করতে হয় বাসিন্দাদের। বজবজ ট্রাঙ্ক রোড থেকে একটু নামতেই মহেশতলা পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দননগর। এলাকার সব পুকুরই ভরে আছে দুর্গন্ধযুক্ত পচা জলে। জলমগ্ন রাস্তাও। নিকাশি নালা ভরে আছে পলিতে। জল আর নামে না।
পুকুরপাড়ে বাসন মাজছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মণিকা গায়েন। জল-যন্ত্রণার বিষয়ে প্রশ্ন করতেই প্রায় চিৎকার করে উঠলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকাটা ঘুরে দেখুন এক বার! বর্ষার জলই এখনও নামেনি। আধ ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই ঘরে জল ঢুকে পড়ে। ঘরের সামনে বাঁধ দিয়েছি। তাতেও জল আটকায় না। পুরসভা বলে কি আদৌ কিছু আছে এখানে? ওরা কী মনে করে, আমরা মানুষ নই?’’
একটু এগোলেই ২২ নম্বর ওয়ার্ডের জালখুরা এলাকা। সেখানে পুকুর থেকে জলা, সবই পচা জলে টইটুম্বুর। নিকাশি নালা রুদ্ধ। জলে ভাসছে রাস্তাও। জালখুরার শেখপাড়া বা হালদারপাড়ার বাসিন্দাদের বছরের বেশ কয়েক মাস বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। কারণ বর্ষায় বাড়ির ভিতরেও কোমর-জল দাঁড়িয়ে যায়। নামতে লাগে পাঁচ-ছয় মাস।
এলাকার বাসিন্দা হাসিবুল হালদার ও আব্দুল উদুর হালদার বললেন, ‘‘জুলাইয়ে এলাকা ছাড়তে হয়। অধিকাংশেরই ঠিকানা হয় আত্মীয়দের বাড়ি। খাট, আলমারি-সহ সব জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাই। ঘরে কোমর-জল দাঁড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে সাপের উপদ্রব।’’ এলাকার বাসিন্দা জাহানারা বেগম বললেন, ‘‘গত বছর দোতলায় দুটো ঘর করেছিলাম। বর্ষায় একতলার সমস্ত জিনিস দোতলায় রেখেছিলাম। সেপ্টেম্বরেও হাঁটুজল ছিল। এক দিন চন্দ্রবোড়া সাপের ছোবল খাই। কোনও মতে বেঁচে ফিরেছি।’’
মহেশতলার ৩৫টি ওয়ার্ডেরই নিকাশির বেহাল অবস্থা। নালা থেকে খাল, সবই বুজে গিয়েছে। এখানকার মূল তিনটি নিকাশি খাল চড়িয়াল, মণি ও বেগোরের দীর্ঘ দিন সংস্কার হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশি সমস্যায় তাঁরা জেরবার। কিন্তু হুঁশ নেই পুরসভার।
রয়েছে পানীয় জলের সমস্যাও। পাইপে জল এলেও চাপ খুব কম। সুতোর মতো জল পড়ে। ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে এই সমস্যা বেশি। বিকেলে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভোলা নস্কর দাঁড়িয়ে ছিলেন পুরসভার কলের সামনে লম্বা লাইনে। তাঁর কথায়, ‘‘দু’বেলা দু’ঘণ্টা করে জল আসে। কিন্তু কতটা আসবে, তা জানা থাকে না। পুরসভায় বহু বার জানানো হয়েছে। প্রতিকার হয়নি। আশপাশের ওয়ার্ড থেকেও জল নিয়ে আসি। না হলে কিনে খেতে হয়।’’
রাস্তার অবস্থাও বেহাল। তবে নির্বাচনের আগে কিছু রাস্তায় পিচের প্রলেপ পড়েছে। সম্প্রতি গঙ্গারামপুর ও আক্রা রোড সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান অটোচালকেরা। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। পুরসভা কয়েকটি গর্ত বুজিয়েই দায় সেরেছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার সৌন্দর্যায়নে পার্ক তৈরি হয়েছে একাধিক, কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান হয়নি। মহেশতলায় তৈরি হয়েছে একাধিক বড় আবাসন। কিন্তু
আবাসিকদের অভিযোগ, বাইরের রাস্তায় আলো নেই। দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও রয়েছে।
পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক দুলাল দাস বলেন, ‘‘খাল সংস্কারের জন্য সেচ দফতরকে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। খালধারে অবৈধ নির্মাণ ঠেকাতেও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আইনি জটিলতায় কাজ হয়নি।’’ নিকাশি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কলকাতা পুরসভার একটি বৃহত্তর অংশের নিকাশি পথ মহেশতলা দিয়ে গিয়েছে। এক দিকে নানা সমস্যায় মহেশতলার নিকাশি জেরবার। তার উপরে কলকাতার চাপ।’’
সিপিএম নেতা প্রভাত চৌধুরী বলেন, ‘‘ভোট প্রহসনে পরিণত হয়েছে। তাই ভোটে হারার ভয়ও নেই। সেই কারণেই পরিষেবায় নজর দেওয়া হয় না।’’ স্থানীয় এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘ভোট এখন লুট করা হয়। সেই কারণে জয়-পরাজয় আর পরিষেবার উপরে নির্ভর করে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy