বিধানসভায় বিক্ষোভে বিরোধীরা। ফাইল চিত্র
ডেঙ্গি প্রতিরোধে অন্যতম বড় হাতিয়ার ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা’। ডেঙ্গি নিয়ে নির্দেশিকায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। কিন্তু এ রাজ্যে সেই ‘সদিচ্ছা’তেই বড়সড় খামতি রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। যেখানে শুধু শাসকই নয়, বিরোধী দলের সক্রিয়তার ক্ষেত্রেও একটা খামতি থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে ডেঙ্গির চরিত্র যে ভাবে বদলাচ্ছে, তাতে শুধুমাত্র বছরের কয়েক মাস ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতনতা প্রচার বা আলোচনাই যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট নয় বিধানসভার পরিসরে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কও। কিন্তু তার পরেও শাসক বা বিরোধী দল, সকলের কাছেই ডেঙ্গি এখনও একটি ‘মরসুমি সমস্যা’ হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এক পতঙ্গবিদের কথায়, ‘‘ডেঙ্গি সাধারণত খবরে আসে অগস্ট থেকে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে এ নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। প্রতি বছরই এমন ঘটে। কিন্তু তার পরেও মরসুমি সমস্যার বাইরে বেরোতে পারেনি ডেঙ্গি।’’ আর এক পতঙ্গবিদ আবার বলছেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনা রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। সরকার কেন তথ্য গোপন করছে বা ডেঙ্গি-তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না কেন, প্রতি বছর এ বিষয়েই আলোচনা থমকে থাকে।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘দিল্লিতে স্বাস্থ্য নিয়ে একটা আন্দোলন তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে ডেঙ্গির মতো বিষয়কেও নিছকই কোনও দলের সাফল্য-ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হয়। ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে তা সরকারি ব্যর্থতা। আবার ডেঙ্গি প্রতিরোধ করতে পারলে সরকার তা নিজেদের সাফল্য বলে প্রচার করে। সর্বস্তরের অংশগ্রহণ সেখানে একেবারেই নেই।’’ আর এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মন্তব্য, ‘‘যে ওয়ার্ড কমিটিগুলি তৈরি হয়, সেগুলিতে শাসকদলেরই লোক থাকে। কেউ ভাবেন না যে, হাতে গোনা কয়েক জন দলীয় কর্মীকে দিয়ে ডেঙ্গির সঙ্গে লড়াই সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ সব থেকে আগে দরকার।’’
ডেঙ্গিকে রাজনৈতিক চর্চার স্তরে নিয়ে যেতে যে এ রাজ্যের বিরোধী দলগুলিরও গাফিলতি রয়েছে, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। মেনে নিচ্ছেন, ডেঙ্গি নিয়ে তাঁদের প্রতিবাদ শুধুমাত্র বিধানসভা চত্বরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে শাসকদল তো তথ্য গোপন করছেই। কিন্তু আমাদের, অর্থাৎ বিরোধীদের তরফেও একে রাজনৈতিক বিষয় করার ক্ষেত্রে খামতি থেকে যাচ্ছে।’’ তবে বিরোধী পক্ষের এই খামতি প্রসঙ্গে অবশ্য একমত হচ্ছেন না সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, এ রাজ্যে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের পিছনে রয়েছে ‘সরকারি অপদার্থতাই’। তাঁর কথায়, ‘‘ভাঙচুরের রাজনীতি তো আমরা করি না। কিন্তু নিজেদের মতো করে আমরা এলাকা পরিষ্কার করি। তবে সরকারি পরিকাঠামো ছাড়া এ ব্যাপারে সফল হওয়া মুশকিল।’’
কলকাতা পুরকর্তাদের অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে ডেঙ্গি নিয়ে যে সক্রিয়তার অভাব রয়েছে, তা চলতি বছরে আরও একবার প্রমাণিত। ডেঙ্গির মরসুমে এই হালের পরেও অনেক এলাকায় এখনও মশার বংশবিস্তারের সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়ে রয়েছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় ভাবে পুরসভা চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন এলাকার কোথায় জল, নোংরা জমেছে, তা পুরভবনে বসে জানা সম্ভব নয়। সেটা কাউন্সিলরই ভাল জানবেন। কিন্তু সেখানেই অনেকের খামতি থাকছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy