E-Paper

অবৈধ নির্মাণে দ্রুত গ্রেফতার করতে সাজা বৃদ্ধি হোক, চায় পুলিশ

সূত্রের খবর, খুব দ্রুত বিধানসভায় এ ব্যাপারে সংশোধনী পাশ হতে পারে। যার মাধ্যমে বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা সাত বছরের অধিক করা হতে পারে।

—প্রতীকী চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৪:৫৩
Share
Save

জামিন পাওয়াই নিয়ম, জেলে যাওয়া ব্যতিক্রম। এই নীতি ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছিল, সাত বছরের কম সাজা হতে পারে, এমন অভিযোগের ক্ষেত্রে গ্রেফতার না করে, জেলে না ভরে বিচার প্রক্রিয়া চালাতে হবে। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে সরাসরি গ্রেফতার না করে নোটিস ধরাতে হবে। এর জেরেই কি একের পর এক বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হয়েও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ানো যায়! পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে না জেনেই কি একের পর এক আইনভঙ্গের ঘটনা ঘটানো হয়? গার্ডেনরিচ বিপর্যয়ের পরে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। এই পরিস্থিতিতেই এ বার আরও কড়া আইন আনার ভাবনাচিন্তা করছে প্রশাসন।

সূত্রের খবর, খুব দ্রুত বিধানসভায় এ ব্যাপারে সংশোধনী পাশ হতে পারে। যার মাধ্যমে বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা সাত বছরের অধিক করা হতে পারে। মূলত লালবাজার থেকেই এই প্রস্তাব নবান্নে পাঠানো হচ্ছে। আপাতত বিষয়টি কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েলের বিচারাধীন। এক জন বিশেষ নগরপালের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে নগরপালের দফতর থেকেই সেই রিপোর্ট নবান্নে যেতে চলেছে বলে সূত্রের খবর।

গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তার উপস্থিতিতে বৈঠকে বসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেখানে পুর আইন সংশোধন এবং বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধি যোগ করে পদক্ষেপ করা যায় কি না, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কলকাতা পুলিশের কর্তা মুরলীধর শর্মাকে পুলিশের সঙ্গে পুরসভার যোগাযোগ রক্ষাকারী আধিকারিক বা লিয়াজ়ঁ অফিসার হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে উপস্থিত আইনজ্ঞ এবং পুলিশকর্তারা নিজেদের মতো করে এ বিষয়ে রিপোর্ট দেবেন বলে ঠিক হয়। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করা যায় কি না, তার প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশ থেকে যে রিপোর্ট যেতে চলেছে, তাতেই আইন সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে বলে খবর।

কলকাতা পুরসভার আইনজীবী শ্যামল সরকার জানান, ২০১৫ সালে রাজ্য সরকার বিধানসভায় বিল্ডিং আইনের ৪০০ ধারা সংশোধন করে। সেই সংশোধন অনুযায়ী, বেআইনি নির্মাণ হলেই পুর আইনের ৪০১ ধারায় ‘স্টপ ওয়ার্ক’ বা কাজ বন্ধের নোটিস পাঠানো যেতে পারে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট-সহ পুর আইনের ৪০০ (১) ধারায় সংশ্লিষ্ট নির্মাণ দ্রুত ভেঙে ফেলার নির্দেশ জারি করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন স্পেশ্যাল অফিসার (বিল্ডিং) বা এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। পাশাপাশি, নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে ৪০০ (১এ) ধারায় ব্যবস্থা নিতে পারে পুরসভা। থানায় অভিযোগ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পুর আদালতে হাজিরা দেওয়ার সমন পাঠানো যেতে পারে। ঘটনার গুরুত্ব অনুযায়ী, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের হাজতবাস হতে পারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির। কিন্তু এই আইনের সুযোগ নিয়েই একের পর এক বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হয়েও অনেকে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান বলে অভিযোগ। শ্যামল বলেন, ‘‘যে হেতু এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা সাত বছরের কম, তাই পুলিশকে গ্রেফতারের আগে নোটিস ধরাতে হয়। নোটিস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে থানায় পরিচিতির সুবাদে পুরসভার তরফে অভিযোগ জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি খবর পেয়ে যান। এর পরে সরাসরি আদালতে গিয়ে আগাম জামিন নিয়ে নেন। এতে কাউকেই তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করা যায় না। এর পরে মামলা যত দিন চলে চলুক, জামিন হয়ে গিয়েছে জেনে নতুন বেআইনি নির্মাণে হাত দিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি!’’

লালবাজারের এক কর্তা বললেন, ‘‘এর জেরেই পাড়ায় পাড়ায় মাথা তোলা প্রোমোটারদের শায়েস্তা করা যাচ্ছে না। দেদার বেআইনি নির্মাণ করে চলেছেন তাঁরা। আরও শক্ত আইন হলে এ জিনিস হবে না।’’ আর এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘কোনও বাড়ি ভেঙে পড়ে কারও মৃত্যু হলে তখন সরাসরি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের মামলা করা হয়। কিন্তু কারও মৃত্যু ঘটে যাওয়ার পরে কড়া হয়ে কী হবে? এত জনের মৃত্যুর মতো বিপর্যয় আগে আটকাতে হবে। সেই জন্যই আইন সংশোধন প্রয়োজন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Illegal Constructions Garden Reach Building Collapse police investigation Strict Punishment

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।