Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

আমাদের লুকোনোর জায়গা দিন দিদি, বলেছিল পুলিশই

স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে যে তাণ্ডব চলেছে, তার আতঙ্ক এখনও কাটেনি। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে, আমরা কি আদৌ নিরাপদ?

উত্তপ্ত পরিস্থিতি।

উত্তপ্ত পরিস্থিতি। —ফাইল চিত্র।

সঙ্গীতা বণিক (আর জি কর হাসপাতালের স্টাফ নার্স)
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৪১
Share: Save:

‘আমাদের লুকোনোর জায়গা দিন দিদি’— কথাটা শুনে অবাক হয়েছিলাম। বাইরে তখন তাণ্ডব চলছে। একের পর এক জিনিস ভাঙচুর এবং তাণ্ডবকারীদের চিৎকারে আমরা তখন ভয়ে কাঁপছি। এর মধ্যে জনাকয়েক পুলিশকর্মীর লুকোতে চাওয়ার আবেদনে ভাবলাম, ‘তা হলে আমাদের নিরাপত্তা দেবেন কারা?’

স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে যে তাণ্ডব চলেছে, তার আতঙ্ক এখনও কাটেনি। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে, আমরা কি আদৌ নিরাপদ? সহকর্মী ও সিনিয়র নার্সদের কেউ কেউ বলছেন, ওই দুষ্কৃতীরা নাকি হুমকি দিয়ে গিয়েছে, সে দিন ছেড়ে দিলেও, পরে এসে কাউকে রেয়াত করবে না। সেই আতঙ্ক থেকে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি তুলেছি। আবাসিক চিকিৎসকদের সঙ্গে আন্দোলনে শামিল হয়েছি। অধ্যক্ষের কাছেও দাবি জানিয়েছি। কিন্তু আজও কিছু হয়নি। বরং আন্দোলনকারী নার্সদের বদলির হুমকি আসছে স্বাস্থ্যভবন থেকে। কেন এমনটা হবে? কর্তব্যরত তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন-ধর্ষণের ঘটনা এবং তার পরে গত বুধবার রাতে যে ভাঙচুর চলল, তাতে কি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানোর অধিকার আমাদের নেই?

বুধবার ট্রমা কেয়ারের চারতলায় ডিউটি করছিলাম। ওই দিন রাত ৮টা থেকে কাজে যোগ দিই। ১২টার কিছু আগেই খবর পাচ্ছিলাম, বাইরে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তখন ট্রমা কেয়ারের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীকে ফোন করে বলি, ‘দাদা, আটতলার ওয়ার্ডে এক বার যেতে হবে। অনুগ্রহ করে সঙ্গে যাবেন।’ তাতে ওই কর্মী জানিয়ে দেন, কোনও ভাবেই যেন একা না যাই। কারণ, বাইরে তখন তুমুল গোলমাল শুরু হয়েছে। কয়েক জন বহিরাগত ট্রমা কেয়ারের একতলায় জরুরি বিভাগেও ঢুকে পড়েছে। আমি যেখানে ডিউটি করছিলাম, সেখানে আরও কয়েক জন নার্স ছিলেন। হঠাৎ মনে পড়ল, সাততলায় এক জন মাত্র নার্স ডিউটিতে রয়েছেন। দিদিকে একা রাখা ঠিক হবে না বুঝে তড়িঘড়ি সেখানে পৌঁছে যাই। জানলা দিয়ে দেখি, বেলগাছিয়ার দিক থেকে লরি করে লোক আসছে। আর স্রোতের মতো লোক ঢুকছে হাসপাতালে। চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পর থেকে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতে আমাদেরও পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। সেখানে ওই দুষ্কৃতীদের আটকানোর বদলে পুলিশ রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাচ্ছে!

ঠিক তখনই দুই পুলিশকর্মী লুকোতে চেয়ে অনুরোধ করেন, আটতলার ওয়ার্ডের দরজার চাবি খুলে দিতে। ফোনে তত ক্ষণে অন্যান্য বিল্ডিং ও ওয়ার্ডে নাইট ডিউটিতে থাকা নার্সদের খবর পাচ্ছি। শুনলাম, কয়েক জন পুলিশ ‘এসএনসিইউ’-এর শৌচাগারে লুকিয়ে পড়েছেন। আবার মহিলা পুলিশকর্মীরা নার্সদের থেকে সাধারণ পোশাক চাইছেন। যাতে তাঁদের চিহ্নিত করতে না পারে দুষ্কৃতীরা। তাণ্ডব বাড়ছে বুঝতে পেরে ওয়ার্ডে রোগীদের থাকার জায়গার আলো নিভিয়ে দিয়েছিলাম। দেখলাম, অন্ধকারে রোগীদের পাশে লুকিয়ে বসে পুলিশকর্মীরাও। যাতে অন্ধকারে তাঁদের চিহ্নিত করা না যায়। চার দিকে তখন প্রচণ্ড চিৎকার। জানলা দিয়ে নীচে তাকাতেই দেখি, ট্রমা কেয়ারের সামনে রাখা পুলিশের গাড়ি উল্টে দিল কয়েক জন।

ভয়ে তখন হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। রোগীর পরিজনেরা বার বার জিজ্ঞাসা করছিলেন, ‘কী হবে দিদি?’ ৩৫-৪০ মিনিট ধরে চলল ভাঙচুর। পুলিশ নিজেই ‘অসুরক্ষিত’ থাকল। তা হলে আমাদের সুরক্ষা কে দেবেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE