Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Crime

ছেলেকে কাছে না-পেয়েই কি খুন স্ত্রী এবং শাশুড়িকে

অমিত ছেলেকে কাছে পেতে মরিয়া ছিল। আর তা সম্ভব না-হওয়াতেই সোমবার সে ওই কাণ্ড ঘটায় বলে পুলিশের অনুমান। সুইসাইড নোটেও সেই তথ্য রয়েছে।

তদন্ত: ফুলবাগানের সেই আবাসন থেকে বেরিয়ে আসছেন হোমিসাইড শাখার অফিসারেরা। মঙ্গলবার। (ইনসেটে) অমিত আগরওয়াল। নিজস্ব চিত্র

তদন্ত: ফুলবাগানের সেই আবাসন থেকে বেরিয়ে আসছেন হোমিসাইড শাখার অফিসারেরা। মঙ্গলবার। (ইনসেটে) অমিত আগরওয়াল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০৩:০৬
Share: Save:

সাতষট্টি পাতার একটি সুইসাইড নোট লিখেছিল অমিত আগরওয়াল। যার ছত্রে ছত্রে রয়েছে শ্বশুরবাড়ির প্রতি তীব্র ক্ষোভ। ক্ষোভের প্রধান কারণ, ১০ বছরের ছেলেকে তার থেকে আলাদা করার ‘ষড়যন্ত্র’।

সোমবার বিকেলে ফুলবাগানের আবাসনে ঢুকে শাশুড়ি ললিতা ঢনঢনিয়াকে গুলি করে খুন করে আত্মঘাতী হয় অমিত। শ্বশুর সুভাষ ঢনঢনিয়া পুলিশকে জানান, তাঁকেও গুলি করতে চেয়েছিল অমিত। কিন্তু পিস্তলে কিছু সমস্যা হওয়ায় তিনি বেঁচে যান। সুইসাইড নোটে নিজের জীবনের সঙ্গে অমিত তুলনা টেনেছে মহাভারতের। আর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার কাছে ‘কৌরব’।

তদন্তে জানা গিয়েছে, অমিত একটি সেভেন এমএম পিস্তল ব্যবহার করেছিল। ঘটনাস্থলেই পাওয়া গিয়েছে সেটি। পুলিশ জেনেছে, সোমবার ফ্ল্যাটে ঢুকেই শ্বশুর ও শাশুড়ির সঙ্গে বচসা শুরু করে অমিত। জানায়, তাঁদের মেরে আত্মঘাতী হবে। শ্বশুর-শাশুড়ি ভেবেছিলেন, অমিত ভয় দেখাতে ও সব বলছে। কিন্তু পিস্তল বার করতেই তাঁরা ভয় পেয়ে যান। অমিতের শ্বশুর পুলিশকে জানিয়েছেন, অমিত গুলি চালাতে গেলে পিস্তলে সমস্যা দেখা দেয়। তখন সে শাশুড়ির কাছে স্ক্রু-ড্রাইভার চায়। পরে নিজেই সেটি ঠিক করে গুলি চালায়। গুলি গিয়ে দরজায় লাগে। পরের গুলি লাগে শাশুড়ির গায়ে। তিনি মেঝেতে পড়ে যান। ফের গুলি চালাতে গেলে পিস্তলে আবার সমস্যা দেখা দেয়। সেই সুযোগে তার শ্বশুর পাশের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে পড়শিদের ফ্ল্যাটে চলে যান।

পড়শিরাই খবর দেন পুলিশে। পুলিশ এসে দরজা খুলে দেখে, অমিতও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। তার দেহের পাশেই বেশ কয়েক পাতার সুইসাইড নোট। যা পড়তে গিয়ে চমকে ওঠেন গোয়েন্দারা। তাতে অমিত বেঙ্গালুরুতে স্ত্রী শিল্পীকে খুনের কথা লিখে গিয়েছে। পুলিশ জেনেছে, অমিত তার শ্যালককেও নয়ডা থেকে আসতে বলেছিল। সম্ভবত তাঁকেও খুনের পরিকল্পনা ছিল।

কলকাতা পুলিশ বেঙ্গালুরুর হোয়াইটফিল্ড থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানায়। সেখানকার পুলিশকর্তা মহাদেবপুরমে শিল্পীর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেন, সেটি বন্ধ। তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায়, ফ্ল্যাট পুরো লন্ডভন্ড। শোয়ার ঘরে পাওয়া যায় শিল্পীর মৃতদেহ। ফুলবাগানে অমিতের দেহের পাশে যে সুইসাইড নোট মিলেছিল, তার একটি প্রতিলিপি পাওয়া যায় শিল্পীর দেহের পাশেও।

তদন্তে জানা গিয়েছে, অমিত ও শিল্পী বছর ১৪ আগে ভালবেসে বিয়ে করেন। দু’জনেই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। বিয়ের পরে কিছু দিন তাঁরা কলকাতায় ছিলেন। পরে হায়দরাবাদ হয়ে ফের কলকাতায় আসেন। তার পরে বেঙ্গালুরু চলে যান। অমিত বিদেশে গিয়ে থাকতে চেয়েছিল। শিল্পী রাজি হননি। শিল্পীর বাবার বক্তব্য, অমিত একটু প্রাচীনপন্থী ছিল। স্ত্রীর উপরে কর্তৃত্ব করতে চাইত। শিল্পী ছিলেন সম্পূর্ণ উল্টো। বিয়ের পরে শিল্পীর পরিবারের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হয়েছিল অমিতের। মাঝে এক সময়ে তার চাকরি ছিল না। যার জেরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল অমিত। দু’বছর আগে দু’জনের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকলে বিবাহ-বিচ্ছেদের আবেদন করেন তাঁরা। সেই মামলা চলছিল। আদালতের নির্দেশে শিল্পীই সাময়িক ভাবে ছেলের হেফাজত পেয়েছিলেন। প্রতি রবিবার অমিত ছেলের সঙ্গে দেখা করত।

কিন্তু অমিত ছেলেকে কাছে পেতে মরিয়া ছিল। আর তা সম্ভব না-হওয়াতেই সোমবার সে ওই কাণ্ড ঘটায় বলে পুলিশের অনুমান। সুইসাইড নোটেও সেই তথ্য রয়েছে।

বেঙ্গালুরুতে শিল্পীকে খুনের সময়ে ছেলে ওই শহরেই অমিতের ফ্ল্যাটে ছিল। পরে অমিত তাকে বলে, শিল্পীকে হঠাৎ কলকাতায় যেতে হয়েছে। সোমবার সকালে উড়ান ধরে ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় আসে অমিত। বেলঘরিয়ায় দাদার কাছে ছেলেকে রেখে বেরিয়ে যায়। পৌঁছয় শ্বশুরবাড়িতে। পুলিশের অনুমান, কাঁকুড়গাছি মোড়ে কারও কাছ থেকে অমিত পিস্তলটি নিয়েছিল।

যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) মুরলীধর শর্মা জানান, অমিত ও ললিতাদেবীর ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, অমিতের মাথায় গুলি ঢুকে বেরিয়ে যায়। ললিতাদেবীর কপালেও গুলির ক্ষত মিলেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Suicide Chartered Accountant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy