এই বাড়িতেই খুন হন বৃদ্ধ দম্পতি।—নিজস্ব চিত্র।
বেহালার মতো নেতাজিনগরেও দম্পতি খুনের ঘটনায় সেই মিস্ত্রি যোগ! এ ক্ষেত্রেও এক রং মিস্ত্রির হাত থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের। রীতিমতো পরিকল্পনা করে ওই বয়স্ক দম্পতিকে খুন করা হয়েছে।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের ঘরে থাকা একটি স্টিলের আলমারি খোলার চেষ্টা করে আততায়ীরা। দু’টি ঘর মিলিয়ে আরও ১০টি আলমারি ছিল। সেগুলি চাবি দিয়ে খোলা হয়েছে। কিন্তু, ওই স্টিলের আলমারিটি খুলতে ব্যর্থ হয় তারা। পরে পুলিশ ওই আলমারি থেকে নগদ আড়াই লাখ টাকা, সঙ্গে বেশ কিছু সোনার গয়না পেয়েছে। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজপত্রও। তা থেকেই তদন্তকারীদের অনুমান, লুঠের উদ্দেশ্যেই খুন করা হয়েছে দিলীপবাবু এবং স্বপ্নাদেবীকে।
নেতাজিনগরের বৃদ্ধ দম্পতি দিলীপ এবং স্বপ্না মুখোপাধ্যায় খুনের তদন্তে দিনের শেষে তদন্তকারীরা অনেকাংশেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন যে, বেহালার মতোই লুঠের জন্য খুন করা হয়েছে ওই দম্পতিকে। তদন্তকারীদের যুক্তি, ওই বাড়ি থেকে খোয়া গিয়েছে লাখখানেক টাকা। কারণ, কয়েক দিন আগে দিলীপের এক আত্মীয় তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ক’দিন আগে বৃদ্ধ নিজেও ব্যাঙ্ক থেকে তুলেছিলেন ৫০ হাজার টাকা। সেই টাকার হদিশ না পেয়ে গোয়েন্দাদের ধারণা হয়, ওই টাকা লুঠ করতেই হানা দিয়েছিল আততায়ীরা। সেই যুক্তি আরও জোরালো হয়, বৃদ্ধার গলার সোনার হার খোয়া যাওয়ায়।
আরও পড়ুন: একতলায় বৃদ্ধা, দোতলায় বৃদ্ধ, নেতাজিনগরে দম্পতি খুনের পিছনে সম্পত্তি! অনুমান পুলিশের
তদন্তকারীরা পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিশ্চিত হন যে, খুনের ঘটনা ঘটেছে সোমবার রাত ১০টার পরে। কারণ, ওই বাড়ির পরিচারিকাকে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, দম্পতির খাবার হিসাবে ওই রাতে পরোটা করে রাখাছিল। ময়না তদন্তে প্রাথমিক ভাবে পাওয়া গিয়েছে, বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধা দু’জনকেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। বৃদ্ধের পেটে পাওয়া গিয়েছে পরোটা-তরকারির অংশ। বৃদ্ধার পেটে কোনও খাবার পাওয়া যায়নি। সেখান থেকে তদন্তকারীরা নিশ্চিত, বৃদ্ধ খাওয়া সেরে শুতে যাওয়ার পরেই আততায়ীরা আসে। বৃদ্ধা তাদের দরজা খুলে দেয়। তার পর সিঁড়িতেই খুন করা হয় তাঁকে। দিলীপবাবু গত ছ’মাস ধরে শারীরিক ভাবে চলাফেরায় সক্ষম নন। তিনি ঘরেই ছিলেন। তাঁকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে কুন করা হয়। বিছানা থেকে পা দুটো নীচের দিকে ঝুলছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রতিবেশীর নজর সম্পত্তিতে, মানসিক চাপে আত্মহত্যার চেষ্টা বৃদ্ধ দম্পতির!
ঘরের তছনছ অবস্থা দেখে গোয়েন্দাদের প্রথমে ধারণা হয়, পরিচিত কেউ এসেছিল, লুঠের জন্য। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে তারা হাতের কাছে যা পায় তাই নিয়ে চলে যায়। এক তদন্তকারী বলেন, “খুব পেশাদার বলে মনে হচ্ছে না। কারণ আততায়ীরা কোনও আলমারি বা ড্রয়ারের তালা ভাঙার চেষ্টা করেনি। বরং যেগুলোতে চাবি লাগানো ছিল সেগুলোই খুলেছে।”
গোয়েন্দাদের একাংশের সন্দেহ সম্প্রতি ওই বাড়িতে কাজ করে যাওয়া রং মিস্ত্রিদের উপর। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘বৃদ্ধ খুব খোলামেলা ভাবে টাকাপয়সা বার করতেন। ফলে ওই মিস্ত্রিরাও জানত কোথায় টাকা পয়সা থাকে।”
ওই বাড়ির কোথায়, কী ভাবে দম্পতি পড়ে ছিলেন, ঘরের কোথায় কী কী ছিল, তা পুরোটাই অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে থ্রিডি মডেল হিসাবে আদালতে প্রোজেক্ট হিসাবে জমা দেওয়া হবে। কলকাতা পুলিশে এই প্রথম এমন পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে চলেছে বলে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy