ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগে বুধবার বিজেপি যুব মোর্চার পুরসভা অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার। বিক্ষোভ ঠেকাতে চাঁদনি চকে জলকামান পুলিশের। ছবি: সুমন বল্লভ
ছিল পুরসভা অভিযান। ডেঙ্গির প্রকোপ পুরসভার ব্যর্থতাতেই— এই অভিযোগ তুলে বুধবার পথে নেমেছিল বিজেপির যুব মোর্চা। কিন্তু কলকাতা পুরসভার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারল না গেরুয়া মিছিল। লৌহপ্রাচীর, লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামানে কলকাতা পুলিশ মিছিল ভেঙে দিল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতেই। পুলিশ এবং বিজেপি কর্মীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ চলল চাঁদনি চক এলাকায়। বেশ কিছু গ্রেফতারির পরে রণে ভঙ্গই দিতে হল যুব মোর্চাকে। কিন্তু তৃণমূলের প্রতিপক্ষ হিসেবে যে তাঁরাই রয়েছেন ময়দানে, সেই ছবিটা কলকাতার রাস্তায় আরও এক বার তৈরি করতে পারলেন বিজেপি নেতৃত্ব।
কলকাতা এবং শহরতলিতে তো বটেই, রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও ডেঙ্গির প্রকোপ এ বার উল্লেখযোগ্য। ডেঙ্গি আক্রান্তদের বা ডেঙ্গিতে মৃতদের আসল সংখ্যা চেপে যাওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগও গোটা বিরোধী শিবির বার বার করছে। কলকাতা-সহ বিভিন্ন পুরসভা তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলেও বিরোধীরা অভিযোগ করছে। এই পরিস্থিতিতেই পুরসভা অভিযানের ডাক দিয়েছিল বিজেপির যুব সংগঠন।
রাজ্য বিজেপির সদর দফতর যেখানে, সেই মুরলীধর সেন লেনের মুখে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপরেই এ দিন মিছিলের জন্য জমায়েত শুরু করেছিল যুব মোর্চা। তবে মিছিলের নেতৃত্বে শুধু যুব মোর্চা সভাপতি দেবজিৎ সরকার ছিলেন না, ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বা সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়রাও। শঙ্কুদেব পন্ডা, সৌরভ শিকদারদের মতো যুব সংগঠনের সামনের সারিতে থাকা নেতারাও ছিলেন।
বিজেপি কর্মীদের লক্ষ্য করে জলকামান ছুড়ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র
এ দিন বেলা ২টোর একটু আগে মুরলীধর সেন লেনের মুখ থেকে মিছিল শুরু হয়। শুরুতে কিছু ক্ষণের জন্য মিছিলের নেতৃত্ব দেন দিলীপ ঘোষ। তার পরে তিনি অন্য কর্মসূচির জন্য দলীয় দফতরে ফিরে যান। রাজু, দেবজিৎ, সৌরভ, শঙ্কুদের নেতৃত্বে মিছিল এগোতে থাকে।
আরও পড়ুন: যাদবপুরে পর পর দু’দিন একই ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করল শেখ বিনোদ, পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে স্লোগান দিতে থাকেন যুব মোর্চা এবং বিজেপির কর্মীরা। তবে এই মিছিলকে পুরসভা পর্যন্ত পৌঁছতে না দেওয়ার ছক প্রশাসন আগেই কষে রেখেছিল। চাঁদনি চকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপরে লোহার ব্যারিকেড তৈরি রাখা হয়। চাঁদনি এলাকার অন্যান্য রাস্তা এবং গলির মুখও আটকে দেওয়া হয়েছিল গার্ডরেল বসিয়ে। মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং র্যাফ। রাখা হয়েছিল জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাসও।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ডিভাইডার টপকাতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়লেন এক পুলিশকর্মী। ছবি: এএফপি
দুপুর ২টো ২০ নাগাদ বিজেপির মিছিল ব্যারিকেডের সামনে পৌঁছয়। বাধা পেয়ে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। রাস্তার উপরে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকার-সহ বেশ কয়েক জন ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা করতে থাকেন। মিনিট কুড়ি এই ঠেলাঠেলি এবং ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা চলে। তার মাঝে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিক্ষিপ্ত ভাবে উড়ে আসে জলের বোতল, ঢিল।
পুলিশ সম্ভবত এই প্ররোচনার অপেক্ষাতেই ছিল। ঢিল পড়তেই জলকামান চালু হয়। জলের প্রবল ধাক্কায় ব্যারিকেড থেকে খানিকটা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হন বিক্ষোভকারীরা। তার পরেই লাঠি চালাতে শুরু করে পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেলও। মিনিট পাঁচ-ছয়েই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিল। বিজেপির নেতা ও কর্মীদের গ্রেফতার করা শুরু করে পুলিশ। রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেবজিৎ সরকার অবস্থান শুরু করেন ব্যারিকেডের সামনে। কিন্তু তাঁরা তখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। বিজেপি কর্মীরা তখন প্রায় গণেশ অ্যাভিনিউয়ের মুখ পর্যন্ত পিছু হঠে গিয়েছে এবং পুলিশের নতুন ব্যূহের কারণে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বা যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির কাছে পৌঁছতে পারেননি।
দেখুন ভিডিয়ো:
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে বিজেপি কর্মীদের পুরোপুরি হঠিয়ে দেওয়ার পরে চাঁদনি চক থেকে রাজু এবং দেবজিতকেও গ্রেফতার করে প্রিজন ভ্যানে তোলে পুলিশ। গ্রেফতার হন অভিনেত্রী তথা বিজেপি নেত্রী রিমঝিম মিত্রও। বিজেপির দাবি, মোট ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়ার আগে পুলিশকে তীব্র আক্রমণ করেন রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে কেন বার বার এই ভাবে আটকে দেওয়া হবে? প্রশ্ন তোলেন তিনি। এর আগে বিজেপির লালবাজার অভিযান এবং তার পরে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সিইএসসি অভিযানও পুলিশ রুখে দিয়েছিল এ ভাবেই। প্রতি বারই জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে বিজেপির মিছিল ভেঙে দেওয়া হচ্ছে কেন? কোনও মিছিলকেই কেন গন্তব্যে পৌঁছতে দেওয়া হবে না? প্রশ্ন তোলেন বিজেপির অন্য নেতারাও।
এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও এ দিন দলীয় কার্যালয়ে বসে একই প্রশ্ন তোলেন? আন্দোলন দেখলেই পুলিশকে দিয়ে ‘থার্ড ডিগ্রি’ প্রয়োগ করানো হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
যুব মোর্চার মিছিল এ দিন শেষ পর্যন্ত পুরসভায় পৌঁছতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু মিছিলের আকার চোখে পড়ার মতো ছিল। মিছিল রুখতে পুলিশ যে রকম বলপ্রয়োগ করেছে, তাতে আরও বেশি চর্চায় চলে এসেছে বিজেপির এই কর্মসূচি।
আরও পড়ুন: জেএনইউ: হস্টেল ফি বৃদ্ধি ৩০ থেকে কমে ১০ গুণ, পুরো প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় পড়ুয়ারা
কর্মীরা মার খেয়েছেন, জখম হয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন। অথচ পুরসভায় পৌঁছে বিক্ষোভও দেখানো যায়নি। তা সত্ত্বেও দিনের শেষে বিজেপি নেতৃত্ব কিন্তু আত্মবিশ্বাসী। ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন আতঙ্কের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। তা নিয়ে সব বিরোধী দলই মুখ খুলছে ঠিকই, কিন্তু চোখে পড়ার মতো কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামতে পারেনি বামেরা বা কংগ্রেস। বিজেপি কিন্তু নজর কাড়তে পারল। এ রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রধান শক্তি যে বিজেপি-ই, শাসকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি করে ময়দানে যে বিজেপি-ই রয়েছে— তেমন একটা ধারণা জনমানসে আবার বিজেপি তৈরি করতে পারল। মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy