প্রতীকী ছবি।
ঘটনার পরে ১৫ দিন অতিক্রান্ত। চলতি মাসও ফুরোতে চলল। কিন্তু এখনও কেউ গ্রেফতার হল না বৌবাজারের বৃদ্ধ আয়ুব ফিদা আলি আগাকে খুনের ঘটনায়। শহরে বয়স্কদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল এই ঘটনা। সেটিরই কিনারা না হওয়ায় এখন থানার পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের প্রশ্নের মুখে লালবাজারের হোমিসাইড শাখাও।
গত ১৫ জানুয়ারি বৌবাজারের ফিয়ার্স লেনে একটি বহুতলের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় আয়ুবের দেহ। তাঁর মাথায় ও গলায় গভীর ক্ষত ছিল। মৃতদেহের পাশে মিলেছিল আনাজ কাটার ছুরি। পুলিশ মনে করেছিল, যতক্ষণ না গলগণ্ড বেরিয়ে আসে, ততক্ষণ ধারালো কিছু দিয়ে বৃদ্ধকে কোপানো হয়েছে।
তদন্তে জানা যায়, স্ট্র্যান্ড রোডে আয়ুবদের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়াও, সুদে টাকা খাটাতেন তিনি। তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন। ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। ব্যবসার টাকাতেই সংসার চলে আয়ুবের। তাঁর বছর পঁয়ত্রিশের অবিবাহিত এক মেয়ে আছেন। বেসরকারি সংস্থার কর্মী ওই তরুণীই থাকতেন বাবার সঙ্গে। প্রতিদিন সকালে তিনি কাজে বেরিয়ে যেতেন, ফিরতেন রাতে। ফলে একা থাকা বৃদ্ধকে এমন নৃশংস ভাবে খুনের ঘটনায় শহরে একা থাকা প্রবীণদের নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে পড়ে।
জিজ্ঞাসাবাদে আয়ুবের আত্মীয়েরা জানান, তাঁর ফ্ল্যাট থেকে নগদ টাকা এবং বৃদ্ধের স্ত্রীর গয়না লুট করা হয়েছে। তবে কত টাকা, জানাতে পারেননি তাঁরা। তল্লাশিতে তদন্তকারীরা দেরাজে পড়ে থাকা কিছু টাকা পান। এতে প্রশ্ন ওঠে, লুটের পরিকল্পনা থাকলে এবং তাতে বাধা পেয়ে বৃদ্ধকে খুন করা হলে আততায়ী টাকা ফেলে পালাবে কেন? তদন্তে আরও জানা যায়, বৃদ্ধের পুত্রবধূই প্রথম দেখেছিলেন শ্বশুরের দেহ। তিনি সে দিন মেয়েকে নিয়ে পড়াতে এসেছিলেন ওই ফ্ল্যাটে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তদন্তকারীদের দাবি, এর বেশি কোনও সূত্র মেলেনি।
লালবাজারের এক আধিকারিক বলেন, “বৃদ্ধের সম্পর্কেও সব তথ্য স্পষ্ট নয়। তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ এবং সময় নিয়ে প্রথমে একাধিক তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। পরিবারের পারস্পরিক সম্পর্কের সমীকরণ নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।’’ ঘটনাস্থল লন্ডভন্ড দেখে পুলিশের এ-ও মনে হয়েছিল, নির্দিষ্ট কিছু খুঁজে পেতে ঘরের ওই অবস্থা করা হয়েছে। টাকা লুট হয়তো আততায়ীর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু ওই নির্দিষ্ট জিনিসটি কী, তার উত্তর মেলেনি।
এর পরে পুলিশ অপেক্ষা করে ময়না-তদন্তের রিপোর্টের জন্য। রিপোর্টে জানা যায়, ১৫ জানুয়ারি বেলা ১২টা থেকে দুপুর তিনটের মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে। ভোঁতা কিছুতে মাথায় আঘাত লাগায় মৃত্যু হয় বৃদ্ধের। এর পরে ধারালো কিছু দিয়ে গলায় কোপানো হয়েছে। যদিও ঘর থেকে আঘাত করার মতো কোনও ভোঁতা জিনিস না পাওয়ায় পুলিশের ধারণা হয়, ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেওয়ার জেরে মাথায় চোট পান আয়ুব। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে আনাজ কাটার ছুরি দিয়ে কোপানো হয়।
কিন্তু খুনি কে? লালবাজারের হোমিসাউড শাখার এক কর্মীর মন্তব্য, “সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। ছুরিতে
পাওয়া হাতের ছাপ যে মেলানো হবে, তেমন সন্দেহভাজন কাউকেও আটক করা যায়নি। কারও বয়ানে অসঙ্গতি নেই। কাউকে আটক করতে না পারার আরও একটি কারণ, কোনও চেহারা না পাওয়া। ঘটনাস্থলের কাছে বা ওই বহুতলে কোনও ক্যামেরা নেই। দূরে কয়েকটি বাড়ির গায়ে লাগানো ক্যামেরার ফুটেজে অস্বাভাবিক কিছু মেলেনি।’’
আর এক তদন্তকারী জানান, বৃদ্ধের ফোন থেকে পাওয়া প্রায় ১০০টি নম্বরের সিডিআর (কল ডিটেলস রেকর্ড) বার করা হয়েছে। কোনওটি থেকেই কোনও সূত্র মেলেনি। ফলে খুনের কিনারা করতে নাজেহাল হোমিসাইড শাখা। এক তদন্তকারীর কথায়, “সারা দিন এই কেসেই কেটে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে বয়স্কদের উপরে যে হারে আক্রমণ বেড়েছে, তাতে হাল্কা ভাবে নেওয়ার প্রশ্নই নেই।’’ পুলিশকর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, দ্রুত কিনারা না হলে নতুন তদন্তকারী দল তৈরি করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy