Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

পথহারা ভিন্‌দেশি পরিবার, মিলিয়ে দিলেন পুলিশকর্মীরা

৪০-৪৫ মিনিট পরে ফিরে এসে জীবন দেখেন, মা এবং ভাই গাছতলায় নেই। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুঁজি করেও মা-ভাইকে খুঁজে না পেয়ে জীবন ভয় পেয়ে যান। 

পুনর্মিলন: মা ও ভাইয়ের সঙ্গে জীবন (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

পুনর্মিলন: মা ও ভাইয়ের সঙ্গে জীবন (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০১:৪২
Share: Save:

শনিবার, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। ধর্মতলা মোড়ে তখন গাড়ি, বাস আর লোকজনের ভিড়। আর তারই মাঝে বছর কুড়ি-বাইশের এক যুবক ধর্মতলা মোড়ের কাছে কাঁদতে কাঁদতে উদ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। লাল টি-শার্ট আর প্যান্ট পরা এক যুবককে এ ভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদতে দেখে এগিয়ে গিয়েছিলেন ওই মোড়ে কর্তব্যরত দুই সার্জেন্ট। যুবকের কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি সার্জেন্টকে জানান, মা আর ভাইকে তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।

বাংলায় বললেও ওই যুবকের কথায় বাংলাদেশি টান শুনেই দুই সার্জেন্ট তাঁর নাম, ঠিকানা জানতে চান। কলকাতা পুলিশ জানায়, ওই যুবক নিজের নাম জানান জীবন বাসফোরে। বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। জীবন দুই সার্জেন্টকে জানান, তিনি তাঁর মা মালতী বাসফোরে এবং ভাই ভোলাকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে এসে কালীঘাট মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বার হয়ে তাঁরা বাসে চাপেন এবং কন্ডাক্টরকে ধর্মতলায় নামিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। কন্ডাক্টর দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ একটি বড় মাঠের পাশে তাঁদের নামিয়ে দেন।

পুলিশ জানায়, প্রবল গরমে জীবন মা এবং ভাইকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরতে চাননি। ফলে বাস থেকে নামার পরে তাঁদের একটি বড় গাছের নীচে বসিয়ে রেখে জীবন ধর্মতলা চত্বরে হোটেলের খোঁজে চলে যান। ৪০-৪৫ মিনিট পরে ফিরে এসে জীবন দেখেন, মা এবং ভাই গাছতলায় নেই। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুঁজি করেও মা-ভাইকে খুঁজে না পেয়ে জীবন ভয় পেয়ে যান।

পুরো ঘটনা শুনে দুই সার্জেন্ট সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হোসেনকে খবর দেন। ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি ঘটনাটি শুনে সার্জেন্টদের জীবনকে নিয়ে মেয়ো রোড এবং ধর্মতলার সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস সংলগ্ন এলাকা ভাল করে ঘুরে দেখতে বলেন। সেই মতো দুই সার্জেন্ট জীবনকে নিয়ে তাঁর মা আর ভাইকে খোঁজা শুরু করেন। প্রায় ঘণ্টা খানেক জীবনকে নিয়ে দুই সার্জেন্ট সুমন পাল এবং শোভনলাল মুখোপাধ্যায় ধর্মতলা এবং তার আশপাশের এলাকা তন্নতন্ন করে ঘুরে দেখেন।

পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ শহিদ মিনার লাগোয়া একটি জায়গায় জীবন তাঁর মা এবং ভাইকে দেখতে পান। দুই সার্জেন্টের কথায়, ‘‘মা আর ভাইকে খুঁজে পেয়ে জীবন তাঁদের জড়িয়ে ধরেন এবং তিন জনে মিলে কাঁদতে শুরু করেন।’’

ওই সার্জেন্টরা জানান, জীবনের হোটেল খুঁজে ফিরতে দেরি হতে দেখে তাঁর মা এবং ভাই তাঁকে এ দিক-ও দিক খুঁজতে খুঁজতে শহিদ মিনারের কাছে পৌঁছে যান। তিন জনই কলকাতার রাস্তাঘাট চেনেন না। ফলে সকলেই রাস্তা হারিয়ে ভয় পেয়ে যান। পরে ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি বলেন, ‘‘দুপুরে গরমের জন্য রাস্তা ফাঁকা ছিল। সন্ধ্যার দিকে এত গাড়ি আর লোকজনের ভিড়েই রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছিলেন জীবন।’’ শহরে অতিথি হয়ে এসে রাস্তা হারিয়ে ফেলা একটি পরিবারকে একে অন্যের সঙ্গে ফিরিয়ে খুশি পুলিশও।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police Bangladesh Esplanade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy