লালবাজার। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্পের সদস্যদের ‘মেডিক্যাল প্রিভিলেজ কার্ড’ দেওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছিল গত বছরের মে মাসে। সেই সময়ে বলা হয়েছিল, আসন্ন স্বাধীনতা দিবসেই বয়স্কেরা হাতে পেয়ে যাবেন এই ‘স্মার্ট কার্ড’। কিন্তু স্বাধীনতা দিবস পেরিয়ে গেলেও সেই ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়নি। চলতি মাসের শুরুতে আরও এক বার ঘোষণা হয়েছে, ওই কার্ড দ্রুত বয়স্কদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু মাস পেরোতে চললেও তা কতটা কার্যকর হয়েছে, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ তথ্য মিলছে না। পুলিশের কেউ কেউ কার্ড দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানালেও কাকে দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট জানাতে পারছেন না। প্রণাম প্রকল্পের সদস্য, বয়স্কদের বড় অংশই যদিও বলছেন, ‘‘কার্ড হাতে পাওয়া তো দূর, কেউ কার্ডের বিষয়ে জানিয়ে খোঁজখবরও নিয়ে যাননি।’’ পুলিশের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, প্রণামের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা বদলি হয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও কার্ড বিলির পদ্ধতিতে বিলম্ব ঘটছে।
গত বছরের মে মাসে প্রণামের সদস্যদের জন্য পুলিশের ‘মেডিক্যাল প্রিভিলেজ কার্ড’-এর ঘোষণা নানা মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কোনও প্রবীণকে যাতে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে অপেক্ষা করতে না হয়, সেই উদ্দেশ্যেই এই কার্ডের ঘোষণা করেছিল লালবাজার। বলা হয়েছিল, এই কার্ডে দেওয়া কিউআর কোড স্ক্যান করলেই পাওয়া যাবে সংশ্লিষ্ট প্রবীণের অসুস্থতা সম্পর্কে সমস্ত ধরনের তথ্য। থানা থেকে পুলিশকর্মীরা গিয়ে প্রণাম সদস্যদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে দেখা করে তাঁদের পুরনো সব প্রেসক্রিপশন জোগাড় করবেন। এর পরে কেন্দ্রীয় ভাবে কার্ডের জন্য সেগুলি আপলোড করা হবে। পুলিশের তরফে একাধিক হাসপাতাল এবং ওষুধ বিপণির সঙ্গেও চুক্তি করা হচ্ছে। যাতে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রবীণ দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন এবং নির্দিষ্ট কিছু ছাড়ে ওষুধ কিনতে পারেন। এই কার্ড সঙ্গে থাকলে প্রবীণেরা রাস্তায় গ্রিন করিডরের সুবিধাও পেতে পারেন বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়। এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে একাকী প্রবীণেরা সব চেয়ে বেশি উপকৃত হবেন বলে মনে করা হয়। কারণ, জরুরি সময়ে ওই প্রবীণদের রোগের ইতিহাস জানতে তাঁদের প্রশ্ন করতে হবে না। প্রেসক্রিপশন খুঁজে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়বে না।
কিন্তু এখনও সেই কার্ডের জন্য অপেক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে বহু বয়স্ক সদস্যের। নারকেলডাঙা থানা এলাকার এক প্রণাম সদস্য বললেন, ‘‘শুনতে তো দারুণ লাগে, কিন্তু কাজের কাজ না হলে লাভ কী? কার্ডের ব্যাপারে কেউ কিছু জানায়নি। থানা থেকে এসেও কেউ কোনও তথ্য নিয়ে যাননি।’’ টালিগঞ্জ থানা এলাকার আর এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘১০ বছর আগে প্রণামের সদস্য হয়েছি। কার্ডের ব্যাপারে আমার থেকে কোনও তথ্য কেউ নিতে আসেননি। থানা থেকে পুলিশ আসতে না পারুক, আমাদের ফোনে জানালেও ছেলেকে সমস্ত প্রেসক্রিপশন দিয়ে পাঠিয়ে দেব।’’
কার্ড সংক্রান্ত অভিযোগ সম্পর্কে জানতেই ফোন করা হয়েছিল লালবাজারের প্রণাম হেল্পলাইন নম্বরে (৯৪৭৭৯৫৫৫৫৫)। সেখানকার কর্মীরা জানান, কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করলে কার্ডের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হবে। বালিগঞ্জ পুলিশের প্রণাম হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলে বলা হয়, ‘‘এখনও কার্ড দেওয়া শুরু হয়নি। আপনাদের মতো অনেকেই ফোন করে খোঁজ করছেন। থানা থেকেই কার্ডের ব্যাপারে জানানো হবে।’’ সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করলে সেখানকার অফিসারেরা বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে বলেন। উত্তর কলকাতার আর একটি থানায় ফোন করলে জানা যায়, এখনও কার্ড সংক্রান্ত চূড়ান্ত নির্দেশ আসেনি। সেখানকার এক অফিসার যদিও বললেন, ‘‘বাড়ি বাড়ি যাবে কে? লোকসভা ভোটের আগে থানায় থানায় অফিসার বদল হয়েছে। প্রণামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার প্রায় সমস্ত জায়গায় বদলি হয়ে গিয়েছে। নতুন থানায় মামলা বুঝে নিতে নিতেই কয়েক মাস সময় পেরিয়ে যাবে। তার পরে তো প্রণামের কাজ!’’
তা হলে কি অপেক্ষাই ভবিতব্য? কোনও মহল থেকেই স্পষ্ট উত্তর মিলছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy