Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
South Kolkata

কালীঘাটে আরও এক পুজো নিয়ে টানাটানি, তৃণমূল-বিজেপি মারপিট, শ্রীধরকে তুলল পুলিশ

রাসবিহারী এলাকার বাসিন্দাদের ইঙ্গিত, ক’দিন আগেও শ্রীধর শাসক দল এবং দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়ের অনুগত থাকলেও, খুব সম্প্রতি পদ্ম শিবিরের দিকে পা বাড়িয়েছিল।

পুজো নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি দড়ি টানাটানি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পুজো নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি দড়ি টানাটানি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ১৮:০৮
Share: Save:

দক্ষিণ কলকাতার এক সময়ের ত্রাস, টালিগঞ্জ এলাকার ডন শ্রীধর দাসকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে শ্রীধরের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় শুভজিৎ সমাদ্দার নামে এক যুবককে। শুভজিৎ ওই এলাকার একটি নামী পুরনো পুজোর সম্পাদক। ধৃতদের বিরুদ্ধে শ্নীলতাহানি এবং বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। শ্রীধরের সঙ্গীদের অভিযোগ, গোটাটাই রাজনৈতিক চক্রান্ত। তাঁদের দাবি, দুর্গাপুজো নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর এলাকাতেই বিজেপির সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে পুলিশ নিয়ে ময়দানে নেমেছে তৃণমূল।

রাসবিহারী এলাকার বাসিন্দাদের ইঙ্গিত, ক’দিন আগেও শ্রীধর শাসক দল এবং দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়ের অনুগত থাকলেও, খুব সম্প্রতি পদ্ম শিবিরের দিকে পা বাড়িয়েছিল। শুভজিৎ এলাকায় শ্রীধরেরই খাস লোক হিসাবে পরিচিত। তৃণমূলেরই এক যুবনেতা বলেন, ‘‘শ্রীধরকে চাবি হিসাবে ব্যবহার করেই বিজেপি এলাকার একটি পুরনো পুজোর দখল নেওয়ার চেষ্টা করছিল।” তবে কি সে কারণেই গ্রেফতার? এ প্রশ্নের আর জবাব দেননি ওই নেতা।

যুবনেতা যে পুজোর কথা বলছেন, সেটা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরে রাসবিহারীর ‘আদি দক্ষিণ কলকাতা বারোয়ারি সমিতি’র পুজো। ৯১ বছরের পুরনো এই বারোয়ারি। শুভজিৎ ওই পুজো কমিটির এ বারের সম্পাদক। গত বছর খুঁটি পুজো থেকে শুরু করে উদ্ধোধন— মঞ্চ আলো করে থেকেছেন দক্ষিণ কলকাতার তাবড় তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা। সাংসদ মালা রায় এই পুজোর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। এলাকার বাসিন্দারা জানেন, রাস্তা দখল করে হওয়া ওই পুজো নিয়ে এক বার পুলিশ সমস্যা তৈরি করলে, তার সমাধানে উদ্যোগী হয়েছিলেন খোদ দলনেত্রী। কিন্তু এ বার সেখানেই ভিন্ন চিত্র। গত রবিবার ওই বারোয়ারির খুঁটি পুজো হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ওই এলাকার বিজেপি নেতা অজয় অগ্নিহোত্রী। পেশায় আইনজীবী অজয় এ বার পুজো কমিটির সভাপতিও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে খুঁটি পুজোর দু’দিন পর অর্থাৎ মঙ্গলবার পুজো কমিটির অফিসে বৈঠক করতে দেখা যায় রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুকে।

বাঁ দিকে অজয় অগ্নিহোত্রী, ডান দিকে শ্রীধর দাস। নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: স্পা-এর আড়ালে দেহব্যবসা, বালিগঞ্জে তাইল্যান্ডের দুই তরুণী-সহ গ্রেফতার ৮​

স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার সূত্রপাত এর পরই। ওই দিন সন্ধ্যায় সায়ন্তন পুজো কমিটির অফিস থেকে বেরনোর পরেই এলাকায় শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, গভীর রাত পর্যন্ত শ্রীধরের লোকজনের সঙ্গে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলে। বাড়ি ভাঙচুর হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, মালা রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ওই এলাকার কয়েক জন তৃণমূল কর্মী শ’খানেক কর্মী-সমর্থক নিয়ে হামলা চালায় পুজো কমিটির অফিসে। তখনও অফিসে বসেছিলেন অজয়। বুধবার একবালপুর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অজয় অভিযোগ করেন, ‘‘ওরা হামলা চালাতেই আমরা অফিসের মূল দরজা বন্ধ করে দিই। পুলিশকে জানাই। প্রায় দু’ঘণ্টা আটকে থাকার পরে পুলিশ আমাদের উদ্ধার করতে আসে। এর পর পুলিশের সামনেই আমাকে বেধড়ক মারধর করা হয়।” এ ব্যাপারে সায়ন্তন বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমি গিয়েছিলাম ওই পুজো কমিটির অফিসে। আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিল, ওই পুজো কমিটির সঙ্গে থাকতে। কিন্তু ওখান থেকে বেরিয়ে আসার পরেই শুনি অজয় অগ্নিহোত্রীকে মারধর করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে পুজো কমিটির সম্পাদককেও।” কলকাতা পুলিশও জানিয়েছে, পুজো কমিটির সম্পাদক শুভজিতের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে শ্রীধর দাসকেও।

রবিবার খুঁটিপুজোয় মালা রায়ের সঙ্গে অজয় অগ্নিহোত্রী। নিজস্ব চিত্র।

এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, তৃণমূলের হাতে থাকা পুজো বিজেপির হাতে চলে যাচ্ছে এই আশঙ্কায় মরিয়া হয়ে ওঠে শাসকদল। ফোন যায় কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের কাছে। পুজো কমিটির সভাপতিকে হাসপাতালে পাঠিয়ে ‘সবক শিখিয়ে’, মূল মাথা শ্রীধর আর তার ‘চেলা’ শুভকে লকআপে পাঠিয়ে হাতছাড়া পুজো ‘পুনরুদ্ধার’ করা হল বলে মনে করছেন এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের একটা অংশ। তাঁদের ইঙ্গিত, এটা একটা স্পষ্ট বার্তাও, যাতে অন্য ক্লাব এবং পুজো কমিটিগুলো কোনও রকম বাড়াবাড়ি না করে।

আরও পড়ুন: খাবার নিয়ে আসছেন অ-হিন্দু, অর্ডার বাতিলের পর অ্যাপ জানাল...​

ওই রাতেই মালা রায় ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মীরা টালিগঞ্জ থানার বাইরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি ছিল, বিজেপি টাকা দিয়ে জোর করে ‘আদি দক্ষিণ কলকাতা বারোয়ারি সমিতি’র পুজো কমিটি দখলের চেষ্টা করছে। বেআইনি ভাবে সমস্ত সদস্যদের অন্ধকারে রেখে কমিটি তৈরি করেছে। ওই কমিটি বাতিল করতে হবে। বিজেপি নেতৃত্ব পাল্টা জানাচ্ছেন, গায়ের জোরে মানুষকে আটকে রাখা যায়না।

কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘শ্রীধর এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সেই অভিযোগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। অজয় অগ্নিহোত্রীর করা অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে। শ্রীধর এবং তার সঙ্গীকে সোমবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।”

আরও পড়ুন: উন্নাও নির্যাতিতার চিঠি কেন পাননি, জবাব তলব প্রধান বিচারপতির, কাল শুনানি সুপ্রিম কোর্টে​

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy