ফাইল চিত্র।
করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর সব ধরনের বাজি বিক্রি এবং পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। একই রায় দিয়েছিল পরিবেশ আদালতও। বাজিহীন কালীপুজো পালনের নির্দেশ জারি করেছিল সরকারও। তা সত্ত্বেও এ বারের কালীপুজো সম্পূর্ণ বাজিহীন হল না। দিনভর সে ভাবে আওয়াজ না মিললেও রাত যত গড়াল, বাজির জন্য শহরের কুখ্যাত কিছু এলাকা থেকে ততই আসতে শুরু করল জোরদার বাজি ফাটানোর অভিযোগ। যার জেরে প্রশ্ন উঠে গেল, নজরদারি চালাতে বাড়তি বাহিনী মোতায়েন-সহ বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ করার কথা বললেও শহরকে কেন সম্পূর্ণ বাজির দূষণমুক্ত করতে পারল না পুলিশ? কালীপুজোর রাতের মতো দীপাবলিতেও কি তবে একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে?
লালবাজারের তরফে অবশ্য শুক্রবারই পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করা হয়েছিল, কালীপুজোর রাতের আগে ইতিমধ্যেই শহরের নানা জায়গা থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোগ্রাম বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০ জনকে। ফলে পুজোর রাতে সে ভাবে আর উপদ্রবের ঝুঁকি নেই! বাজি ফাটানোর জন্য কুখ্যাত এলাকাগুলি থেকে গত কয়েক দিনে আসা একাধিক অভিযোগেও সে ভাবে আমল দিতে চায়নি লালবাজার। কিন্তু কালীপুজোর রাত যত গড়াল, দেখা গেল, পুলিশের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই কুখ্যাত এলাকাগুলিই। সেই সঙ্গেই বিধি ভেঙে বাজি ফাটানোর তালিকায় উঠে এল বড়বাজার, হেয়ার স্ট্রিট, যাদবপুর, গরফা, কসবা, ভবানীপুর, উল্টোডাঙা, সিঁথি, জোড়াবাগানের মতো এলাকার নাম। একটা সময়ের পরে ওই সব এলাকায় পরিস্থিতি এমনই হল যে, বড় রাস্তায় নজরদারিতে থাকা পুলিশের চোখ এড়াতে বাজি ফাটানো শুরু হল গলিঘুঁজিতে। সঙ্গে প্রবল বাজনা। শব্দবাজির সঙ্গে দেদার বাতাস দূষিত করল আতশবাজিও! সেগুলিতে আওয়াজ না থাকায় সে ভাবে টের পেল না পুলিশও।
আরও পড়ুন: তিন বছরেও অধরা রসগোল্লার ‘জিআই’ লোগো
রাতে কসবা থানার এক আধিকারিক ওই এলাকার একটি বহুতলে নজরদারি চালাতে গিয়ে বললেন, “অনেক ক্ষণ ধরে এখানকার কোনও একটি বাড়িতে বাজি ফাটানো হচ্ছে। এলাকার লোকজন ফোন করে থানায় জানিয়েছেন। কিন্তু ঠিক কোন বাড়ি, বুঝতেই পারছি না।” এর পরে তাঁর মন্তব্য, “কাল রাত আর আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কিন্তু একেবারে সব নিয়ন্ত্রণে ছিল।” নিয়ন্ত্রণ আলগা হওয়ার কারণ হিসেবে শ্যামপুকুর থানার এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, “যেটা ভয় ছিল, সেটাই হল। আবাসন এবং উঁচু বাড়ির ছাদে গোপনে বাজি ফাটানো হল। সেই আওয়াজই পৌঁছল দূর-দূরান্তে। কিন্তু আমরা নীচে দাঁড়িয়ে ঠিক কোথায় বাজি ফাটানো হচ্ছে, বুঝতে না পেরে তড়িঘড়ি ধরতেও পারলাম না।” পাটুলি থানার এক পুলিশকর্মীর আবার মন্তব্য, “কলকাতার বাজার আমরা বন্ধ করলে কী হবে! জেলা থেকে বহু লোক গোপনে বাজি কিনে এনে রেখে দিয়েছিলেন। রাতে সেগুলিই বেরিয়ে পড়েছে কুখ্যাত এলাকাগুলিতে।”
শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্তও শহরের বিভিন্ন জায়গায় ধরপাকড় চালিয়ে বেশ কিছু বাজি বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। বাজি বিক্রির অভিযোগে বড়তলা, এন্টালি, মানিকতলা, উল্টোডাঙার বাসন্তী কলোনি, বেলেঘাটা ও রিজেন্ট পার্কের মতো বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কালীপুজোর সকালে এসে কেন গ্রেফতার করতে হবে? কোথায় বাজি মজুত রাখা হচ্ছে, সেই খবর কি তবে আগে ছিল না পুলিশের কাছে? কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) সুখেন্দু হীরা বললেন, “গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে আমাদের দল প্রতিবারের মতো এ বারও রাস্তায় ছিল। তারাই বেশ কিছু বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে। আর ফাটানোর সময়ে ধরার কাজ থানার।” তবে কি থানা স্তরের গাফিলতিতেই সার্বিক ভাবে বাজি নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপে ঢিলেমি দেখা গেল? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার যদিও দাবি করলেন, “যেমন যা নির্দেশ ছিল, তা মেনেই বাহিনীর সব স্তর থেকে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ধরপাকড়ও চলছে।”
কিন্তু সেই ধরপাকড়ে দিনের শেষে কাজ হল কই? কালীপুজোর রাতের মতো দীপাবলিতেও অস্বস্তির আশঙ্কা বাড়িয়ে লেক থানার এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, “পুলিশ তো সুপারম্যান নয়! যতটা পারা যায়, করা হয়েছে। ঘরে ঘরে ঢুকে বাজি খোঁজা কোথাওই সম্ভব নয়। জীবনের ঝুঁকি বুঝেও যদি শহরে বাজি ফাটানো হয়, তা হলে কোনও দিনই কিছু হবে না।”
ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনারের দফতরের গাড়ি চালানো এক পুলিশকর্মী বললেন, “আমিও গাড়ি ফেলে চকলেট বোমা বিক্রি করা একটা ছেলের পিছনে ছুটেছি আজ। ধরতে পারিনি। শুধু পুলিশকে দোষ না দিয়ে এটাও বুঝতে হবে যে, এই পরিস্থিতিতে মাস্ক পরার মতো বাজি না ফাটানোর গুরুত্বও অনেকেই বুঝতে পারেননি। বিধি রক্ষায় বিফল হয়ে থাকলে শুধু পুলিশ নয়, সকলেই বিফল হয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy