ব্যবস্থাপনা: একুশে জুলাইয়ের সভায় যোগ দিতে ইতিমধ্যেই শহরে পৌঁছেছেন তৃণমূলের বহু কর্মী-সমর্থক। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
বাড়ল মঞ্চের দৈর্ঘ্য। বিশেষ নিরাপত্তার জন্য সিঁড়ির বদলে তৈরি হল র্যাম্প। তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সভাস্থল ঘিরে যেন নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি। শনিবার দিনভর আনাগোনা লেগে রইল পুলিশের বড় কর্তাদের। তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা তো বটেই, সভার আগে ব্যবস্থাপনা দেখে গেলেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এর মধ্যেই চোখে পড়ল মঞ্চ ঘিরে উৎসাহীদের ঢল। পুলিশের তাড়া খেয়েও মঞ্চের ছবি তুলতে ব্যস্ত তাঁরা। ভিড় ছিল সভা উপলক্ষে আসা কর্মী-সমর্থকদের থাকার জায়গা গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র ও সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে। অনেকেই সেখানে ডিম-ভাত-তরকারি খেয়ে ঘুমিয়ে ভোর হতেই সভাস্থলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়বেন। তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘এ বারের ভিড় পুরনো সব রেকর্ড ভাঙবে।’’
লোকসভা নির্বাচনে তো বটেই, পরের চারটি উপনির্বাচনেও ভাল ফল করেছে তৃণমূল। তাই ২১ জুলাইয়ের সভায় আজ, রবিবার প্রচুর মানুষ আসতে পারেন বলে ধরে নিচ্ছে শাসকদল। শুক্রবার রাত থেকেই শিয়ালদহে আগত উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে রাখা হয়েছে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ থেকে আগতদের। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে উঠেছেন পুরুলিয়া থেকে আগতেরা। হাওড়ার সালকিয়ার স্কুল রোডে শ্রীরাম বাটিকা আর শ্যাম গার্ডেনে থাকছেন উত্তরবঙ্গ থেকে আগত অনেকে। হাওড়া স্টেশনে তৈরি হয়েছে তাঁদের অভ্যর্থনা মঞ্চ।
এ বার ডিম-ভাতের সঙ্গেই জুড়েছে ডাল-তরকারি। আলিপুরদুয়ার থেকে আসা এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘ডিম-ভাত নিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। ডাল, তরকারি থাকায় খাওয়াটা ভাল হয়েছে।’’ সল্টলেক ক্যাম্পে পরিস্থিতি দেখতে আসা সুজিত বসু বলছিলেন, ‘‘১০০টা বাস রেখেছি, দু’দফায় সভাস্থলে লোক নামিয়ে আসবে।’’ রাজ্যের আর এক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘ভোর থেকে সভাস্থলের কাছে লোক পাঠানো শুরু করে দেব।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, সভা চত্বরকে তিনটি জ়োনে ভাগ করা হয়েছে। সভামঞ্চ একটি জ়োন। সামনের এবং পিছনের অংশ দু’টি আলাদা জ়োন। মোট ২৬ জন উপ-নগরপাল এবং ৮০ জন সহকারী নগরপাল পদমর্যাদার আধিকারিকের পাশাপাশি মোতায়েন থাকছেন প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশকর্মী। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীও থাকছেন। শহরে আসা বাস ও গাড়ি পার্কিং করানোর জন্য রাত থেকেই ট্র্যাফিক পুলিশের পাঁচটি দল রাস্তায় নামবে।
সভামঞ্চকে তিনটি জ়োনে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম জ়োনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫২ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট। সেখানে তৃণমূল নেত্রী মমতা, প্রথম সারির নেতা ও সাংসদদের দেখা যেতে পারে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় জ়োনের দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট এবং প্রস্থ ২৪ ফুট। দ্বিতীয় জ়োনে শহিদ পরিবার এবং তৃণমূলের বিধায়কদের এবং তৃতীয় জ়োনে তৃণমূলের অন্য নেতা ও পুরপ্রতিনিধিদের দেখা যেতে পারে। পুরো শহরকে ১৫টি জ়োনে ভাগ করা হয়েছে। যার দায়িত্বে থাকছেন ১৮ জন ডিসি।
জানা গিয়েছে, গোটা চত্বরে থাকছে ৩৮টি সিসি ক্যামেরা। শুক্রবার রাত থেকেই আশপাশের বহুতলের ছাদও নিরাপত্তায় মোড়া। মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে ওঠার আগে গাড়ি থেকে নামা ও গাড়িতে ওঠার সময় পর্যন্ত তাঁর উপরে চারটি ড্রোনের নজর থাকার কথা। মঞ্চের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘গত বছর ২১ জুলাইয়ের সকালে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছে অস্ত্র-সহ গ্রেফতার হয় এক যুবক। এ বছর তাই বাড়তি সতর্কতা থাকছে।’’
এ দিকে, ২১ জুলাই উপলক্ষে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় ভিড়ের আশঙ্কায় চাঁদনি চক, এসপ্লানেড, পার্ক স্ট্রিট ও ময়দান স্টেশনের বাড়তি নিরাপত্তায় আরপিএফের ৫৪ জন আধিকারিককে নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র।
এসপ্লানেড স্টেশনে ছ’টি অতিরিক্ত কাউন্টার খোলা হবে। পার্ক স্ট্রিট, রবীন্দ্র সদন, নেতাজি ভবন, যতীন দাস পার্ক, দমদম, বরাহনগর এবং দক্ষিণেশ্বরে অতিরিক্ত বুকিং কাউন্টার খোলা থাকবে। তবে, ওই শাখার মেট্রোয় ট্রেন চলবে রবিবারের নির্ধারিত ১৩০টিই। শিয়ালদহ ডিভিশনেও রবিবারের নির্ধারিত সংখ্যক ট্রেনই চালু থাকবে বলে রেল সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy