Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
SIM Card

Sim card: জালিয়াতির কারবারে হাজার টাকায় বিকোচ্ছে সিম কার্ড

ভুয়ো নথি দিয়ে যাঁর নামে সিম কার্ডটি চালু করা হয়েছে, তিনি সমাজের কোন স্তরের মানুষ তার উপরে নির্ভর করে সিমের দাম!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ০৫:১৯
Share: Save:

কোনওটির দাম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, কোনওটি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। সাইবার প্রতারণা জগতে এক-একটি প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিম কার্ডের দাম এমনই! সম্প্রতি একটি চক্রের অন্যতম মাথাকে গ্রেফতার করার পরে তদন্তকারীদের হাতে এসেছে এমনই তথ্য। জানা গিয়েছে, ভুয়ো নথি দিয়ে যাঁর নামে সিম কার্ডটি চালু করা হয়েছে, তিনি সমাজের কোন স্তরের মানুষ তার উপরে নির্ভর করে সিমের দাম!

গত কয়েক বছরে সাইবার প্রতারণার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সিম কার্ড জালিয়াতির চক্র। তদন্তকারীদের দাবি, এই মুহূর্তে মূলত তিনটি প্রয়োজনে এমন জালিয়াতি চালানো হচ্ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে কোনও তদন্তে অন্যতম সূত্র মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন বা কল ডিটেলস রেকর্ড। যা সাধারণত সিম কার্ডের মাধ্যমেই বোঝা সম্ভব। সেটাই যাতে বন্ধ করে দেওয়া যায়, তাই অন্যের নামে সিম কার্ড অ্যাক্টিভ করে কাজ সারতে চাইছে প্রতারকেরা। দ্বিতীয়ত, টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলে দেখা হয়, সেটি কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা ই-ওয়ালেটে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকে ফোন নম্বর। ই-ওয়ালেট ফোন নম্বর ছাড়া খোলাই সম্ভব নয়। সেই নম্বরের সূত্র ধরে যাতে পুলিশ প্রতারকের নাগাল না পায়, তাই চালানো হচ্ছে অন্যের নামে সিম তোলার
জালিয়াতি। তৃতীয় প্রয়োজনটি সব চেয়ে ভয়ঙ্কর। কাউকে ঠকানোর সময়ে সেই ব্যক্তিকে বুঝতেই না দিতে এবং তাঁর ফোনের আগাম দখল পেতে, তাঁর অজানতেই বার করে নেওয়া হচ্ছে তাঁরই নামে ডুপ্লিকেট সিম।

কিন্তু এমন কাজ হচ্ছে কী ভাবে? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে সতর্ক নন। কখনও কোনও দোকানে ‘রিমার্কস’-এর খাতায় নাম, ফোন নম্বর এবং ইমেল আইডি লিখে আসছেন তাঁরা। কখনও ফিডব্যাক ফর্মে
জানিয়ে আসছেন বাড়ির ঠিকানা থেকে জন্মের তারিখ। এর সঙ্গে রয়েছে রাস্তার কিয়স্ক বা শপিং মল থেকে ‘অফারে’ সিম কেনার প্রবণতা। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তদন্তকারীরা দেখেছেন, এমন কিয়স্কে বা সিম কার্ড বিক্রির দোকানে কাজ করা অনেকেই সাইবার প্রতারণায় জড়িত।

কেউ সিম কার্ড কেনার জন্য তাঁর আধার কার্ড নিয়ে এলে সেই কার্ডের ছবি তুলে রাখা হচ্ছে। সেই ছবি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে প্রতারকদের কাছে। তা দিয়েই তোলা হচ্ছে প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিম কার্ড। লালবাজারের সাইবার শাখার এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘এমন কিয়স্কে গ্রাহকের ছবিও তুলে রাখা হয়। সম্প্রতি একটি ঘটনার তদন্তে দেখেছি, এমন কয়েক হাজার ছবি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে জামতাড়া গ্যাংয়ের সদস্যদের কাছে। সেই এক-একটি ছবির সঙ্গে ইচ্ছে মতো নাম-ঠিকানা বসিয়ে কয়েক হাজার ভুয়ো আধার কার্ড বানানো হয়েছে। তা দিয়ে তোলা হয়েছে সিম কার্ড।’’ দক্ষিণ কলকাতার একটি থানার আধিকারিক বললেন, ‘‘সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের একটি গ্রামের এক যুবককে গ্রেফতার করে জেনেছি, সে বেশ কয়েক জনকে নিয়ে দল গড়ে এই প্রতারণা-চক্র চালাত। তাদের সঙ্গেই যোগসাজশ রয়েছে টেলিকম সংস্থার বড় আউটলেটের কয়েক জন কর্মীর। সমাজে প্রতিষ্ঠিত কারও নথি ব্যবহার করে যে প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিম কার্ড তোলা হচ্ছে, সেটাই তারা ১০০০-১২০০ টাকায় বিক্রি করছে।’’

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, আরও এক পদ্ধতিতে সিম কার্ড জালিয়াতি করা হচ্ছে। কোনও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তার নাম এবং ইমেল জোগাড় করা হচ্ছে। এর পরে সেই ইমেলে হয় ব্যাঙ্কের নাম করে, অথবা কোনও বিমা সংস্থা বা অন্য কোনও ভাবে লাগাতার মেল পাঠানো হচ্ছে। সেই ভাবেই জেনে নেওয়া হচ্ছে ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর-সহ নানা ব্যক্তিগত তথ্য। এর পরে ওই ব্যক্তির নামে থাকা সিম কার্ড হারিয়ে গিয়েছে বলে থানায় ভুয়ো অভিযোগ করা হচ্ছে। সেই অভিযোগপত্র এবং একটি আবেদন নিয়ে টেলিকম সংস্থার কাছে গিয়ে বলা হচ্ছে, ওই নম্বরেই ডুপ্লিকেট সিম কার্ড বার করে দেওয়া হোক! আসল ব্যক্তি যত ক্ষণে বুঝতে পারছেন, তত ক্ষণে ওই নম্বর দিয়ে কাজ সারা হয়ে গিয়েছে!

অন্য বিষয়গুলি:

SIM Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy