ফাইল চিত্র।
খাস কলকাতার শর্ট স্ট্রিট। খোদ পুলিশ কমিশনারের বাড়ির পিছনে ১৭ কাঠা জমি সমেত বাড়ি দখল করতে গিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। গুলি চলেছে। মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। আহত একাধিক। ২০১৪ সালের ওই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দিয়ে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছিল, শেক্সপিয়র সরণি থানার এক সাব-ইনস্পেক্টর জেনারেল ডায়েরি (জিডি)-তে কারচুপি করে মিথ্যা তথ্য দাখিল করেছেন।
|নিজের মাথা বাঁচাতে পুরনো তারিখ বসিয়ে তিনি থানায় একটি জিডি করেন। তাতে লেখেন, ৯এ শর্ট স্ট্রিটে ফের গোলমাল হতে পারে, তাই ওই বাড়ির সামনে দু’জন কনস্টেবলকে রাখা হয়েছে। দুই কনস্টেবলের নামও তিনি জিডি-তে উল্লেখ করেছিলেন। উল্লেখিত দুই কনস্টেবলকে এর পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, বাড়িটির সামনে তাঁরা ডিউটি করেননি। ঘটনার দিন ১১ নভেম্বর তো নয়ই, তার আগেও নয়!
ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুর ঘটনাতেও কি এমনই কোনও কারচুপি হয়েছে জেনারেল ডায়েরিতে? প্রথম থেকেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে আনিসের মৃত্যুর সঙ্গে পুলিশের যোগ যত গাঢ় হচ্ছে, ততই জোরালো হচ্ছে এই প্রশ্ন। আইনজীবীদের বড় অংশ যদিও দাবি করছেন, জিডি-তে এমন কারচুপির অভিযোগ নতুন নয়। কখনও কাউকে ইচ্ছে মতো তুলে আনার পরে নিজের মতো জিডি লিখে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, কখনও কাজ সেরে এসে পুরনো সময়-তারিখ বসিয়ে কুকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। একাধিক অনৈতিক কাজে বেরোনোর আগে জিডি-র খাতায় পুলিশ সামান্য ‘মুভমেন্ট রেজিস্টার’ও করে না বলে অভিযোগ। প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের অনেকের আবার দাবি, জেলার বিভিন্ন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকদের
জেনারেল ডায়েরির ব্যবহার নিয়ে স্পষ্ট জ্ঞানই থাকে না! শহুরে পুলিশ আবার জেনারেল ডায়েরিকেই নিজেদের বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে।
কলকাতার এক প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের মন্তব্য, ‘‘কোনও গোপন কর্ম সেরে এসে সহজেই দায় ঝেড়ে ফেলা যায়। আদালতের সামনে যদি বোঝানো যায় যে, এই তো জেনারেল ডায়েরিতে কিছু লেখা নেই, তার মানেই পুলিশ যায়নি! বড় কর্তারা এসে অন্য কিছু বার না করলে বা পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাব থাকলে তখন আদালতেরও তেমন কিছু করার থাকে না।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, থানার যে কর্মকাণ্ড নিয়ে ভবিষ্যতে জবাব দিতে হতে পারে, সেই সব বিষয়ই জিডি করে রাখতে হয়। থানার কোনও গাড়ি খারাপ হওয়া থেকে থানায় কোনও সিসি ক্যামেরা বসানো হলেও জিডি করে রাখাটা নিয়ম। কোনও কোনও থানায় মেরামতির কাজ থেকে শৌচাগারের ফিনাইল কেনাও জিডি করা হয়। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ব্রিটিশ সরকার নিজের পুলিশকেও বিশ্বাস করত না। তারাই পুলিশকে দিয়ে জেনারেল ডায়েরি করানো শুরু করে।
কোনও পুলিশকর্মী কোথাও অভিযানে গেলে কাকে সঙ্গে নিলেন, কোথায় গেলেন থেকে শুরু করে সঙ্গে কী ধরনের অস্ত্র নেওয়া হল, সব লিখে রেখে যেতে হয়। ফিরে এসেও ডায়েরিতে লিখতে হয়, তিনি কী করে ফিরলেন।’’ কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই এই নিয়ম না মেনেই পুলিশ নিজের মতো ‘অভিযানে’ বেরোয় বলে তাঁর অভিযোগ।
আরও একটি অভিযোগ রয়েছে। আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ পাওয়ার পরে ‘রিসিভড বাট কন্টেন্ট নট ভেরিফায়েড’ স্ট্যাম্প মেরে ছেড়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু আইনজীবীদের বক্তব্য, ‘‘কন্টেন্ট নট ভেরিফায়েড বলে কিছু হয় না। বিষয়টি যাচাই করাই যে কোনও তদন্তকারী সংস্থার কাজ। যাচাই হওয়ার পরে কোনও অভিযোগ জিডি হবে, কোনওটা এফআইআর।’’ কলকাতা পুলিশের একটি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘খাতায়-কলমে বহু নিয়ম থাকে। দীর্ঘ দিন পুলিশগিরি করা ব্যক্তিরা জানেন, কী ভাবে ঠিক ফাঁক গলে
কাজ সেরে ফেলতে হয়। যে কোনও জিডি ৩০ মিনিট এগিয়ে করা এক অলিখিত নিয়ম। তাতে পরে সুবিধা বুঝে বক্তব্য জুড়ে দেওয়া যায়। আনিসের ঘটনায় সেটুকুও করা না হয়ে থাকলে কাঁচা কাজ হয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy